
বাংলাদেশের নড়াইলের জামাই ছিলেন প্রণব মুখার্জি
ভারতের প্রথম বাঙালি রাষ্ট্রপতি হলেও প্রণব মুখার্জির আরো একটা পরিচয় আছে। বাংলাদেশের নড়াইল জেলার সদর উপজেলার ভদ্রবিলা গ্রামের জামাই তিনি। ভদ্রবিলা গ্রামের মেয়ে শুভ্রা মুখার্জি। ছোটবেলায় যাকে আদর করে ডাকা হতো ‘গীতা’ বলে। নড়াইলের সেই ‘গীতা’ নামের মেয়েটিই ভারতবাসীর কাছে ‘শুভ্রা মুখার্জি’ নামে পরিচিত। যিনি ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির স্ত্রী। গ্রামের সাধারণ মেয়ে থেকে তিনি হয়ে যান ভারতের রাষ্ট্রপতির স্ত্রী।
শুভ্রা মুখার্জির জীবনী থেকে জানা যায়, ১৯৪৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর নড়াইলের ভদ্রবিলা গ্রামে বাবা অমরেন্দ্র ঘোষ ও মা মীরা রানী ঘোষের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। শুভ্রার শৈশবের প্রথম দিকটা নড়াইলের ভদ্রবিলা গ্রামে নিজবাড়িতে (পিত্রালয়) কাটলেও পরবর্তীতে মামাবাড়ি তুলারামপুরে চলে যান। মামাবাড়ি থেকে স্থানীয় চাঁচড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। পরে ১৯৫৫ সালের দিকে মায়ের সঙ্গে ভারতের কলকাতায় চলে যান শুভ্রা।
৯ ভাই-বোনের মধ্যে শুভ্রা ছিলেন দ্বিতীয়। পরবর্তীতে তার অন্য ভাই-বোনেরা ভারতে চলে গেলেও নড়াইলের ভদ্রবিলা গ্রামে বসবাস করছেন শুভ্রার ভাই কানাই লাল ঘোষ। ভদ্রবিলার পৈতৃক ভিটা ও জমিজমা দেখাশোনা করেন তিনি (কানাই লাল)। শুভ্রার মামাতো ভাইয়েরা বসবাস করছেন তুলারামপুর গ্রামে। প্রণব মুখার্জির সঙ্গে বিয়ের পর নড়াইলের মেয়ে ‘গীতা ঘোষ’ পরিচিতি পান ‘শুভ্রা মুখার্জি’ হিসেবে।
কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রিধারী শুভ্রা পেশায় ছিলেন শিক্ষক। গাইতে পারতেন রবীন্দ্রসংগীতও। লিখেছেন ‘চোখের আলোয়’, ‘চেনা অচেনায় চীন’, ‘INDIRA GANDHI IN MY EYES’ (আমার চোখে ইন্দিরা গান্ধী) প্রবন্ধ গ্রন্থসহ গল্প ও ফিচার।
শুভ্রা মুখার্জি ‘চোখের আলোয়’ গ্রন্থে নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি লিখেছেন, তার (শুভ্রা) বয়স তখন ১৪, প্রণব মুখার্জির বয়স ২২ বছর। সেই বয়সে তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। শুভ্রা ও প্রণব মুখার্জির দুই ছেলে অভিজিৎ মুখার্জি ও সুরজিৎ মুখার্জি এবং মেয়ে শর্মিষ্ঠা মুখার্জি মুন্নি। ভারতে নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত তারা।
শুভ্রা মুখার্জির মামাতো ভাই নড়াইলের তুলারামপুর গ্রামের কার্তিক ঘোষ জানান, ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির মামা শ্বশুরবাড়ি আমাদের তুলারামপুর গ্রাম। বিশেষ করে গীতা দিদির শৈশব কেটেছে আমাদের বাড়িতেই। দিদি তুলারামপুরে থেকে চাঁচড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়েছেন দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত। তারপর চলে যান ভারতে।
কার্তিক বলেন, ১৯৯৫ সালে মেয়ে শর্মিষ্ঠা মুখার্জি মুন্নিকে নিয়ে দিদি আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন। তবে, সে সময় সঙ্গে ছিলেন না আমাদের জামাইবাবু প্রণব মুখার্জি। পরে ২০১৩ সালের ৫ মার্চ জামাইবাবুকে (প্রণব মুখার্জি) সঙ্গে করে নড়াইলের ভদ্রবিলার বাড়িতে আসেন গীতা দিদি।
তুলারামপুর এলাকার ৯৬ বছরের বায়োবৃদ্ধ এক নারী বলেন, ছোটবেলায় গীতা আমাদের ঘাটেই (পুকুর) গোসল করতো। সমবয়সীদের সঙ্গে খেলায় মেতে উঠত। বাগানে আম কুড়াতো। নড়াইলের বিভিন্ন পেশার মানুষ বলেন, গীতা (শুভ্রা) নিজের মেধা, মনন, দক্ষতা ও প্রজ্ঞা দিয়ে গ্রামের সাধারণ মেয়ে থেকে হলেন ভারতের রাষ্ট্রপতির স্ত্রী। ভারতের রাইসিনা হিলের (ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবন) ফাস্টলেডি, অনন্য সাধারণ নারী।
উল্লেখ্য, মস্তিষ্কে রক্ত’ক্ষরণ ও অ’স্ত্রোপ’চার, এরমধ্যেই প্রা’ণঘা’তী করোনার সংক্র’মণ। জোড়া ধা’ক্কা সামলাতে পারলেন না ভারতের সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জি। সোমবার দিল্লির আর্মি হসপিটাল রিসার্চ অ্যান্ড রেফারালে শে’ষ নিশ্বাস ত্যা’গ করেছেন স্বাধীনতা উত্তর সর্বভারতীয় রাজনীতির সফলতম বাঙালি প্রণব মুখার্জি। মৃ’ত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো প্রায় ৮৪ বছর। এর আগে, ২০১৫ সালের ১৮ আগস্ট নয়াদিল্লির একটি সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃ’ত্যুবরণ করেন তার স্ত্রী শুভ্রা মুখার্জি।