337670

পাবনায় ‘তালের পিঠা’ খেয়ে দুই ভাই’র রহস্যজনক মৃত্যু

পাবনার সাঁথিয়ায় দুই ভাইয়ের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। বুকে ও পেট ব্য’থার উপসর্গ দেখা দেয়ায় তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তারা হাসপাতালে মা’রা যান। গতকাল শুক্রবার (২৮ আগস্ট) ভোররাতের দিকে এ ঘটনা ঘটে। নি’হতরা হলেন- সাঁথিয়া উপজেলার আতাইকুলা থানার বনগ্রামের সাহাপাড়ার সুভাষ সাহার ছেলে আকাশ সাহা (১৯) এবং একই মহল্লার নন্দ লাল সাহার ছেলে শুভ কুমার সাহা (১৯)।

আকাশ পাবনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ২য় বর্ষের ছাত্র ও শুভ ঢাকার একটি ল’কলেজের এলএলবি’র ছাত্র ছিলেন। তারা সম্পর্কে মামাত-ফুফাত ভাই। পরিবার বলছেন, তালের পিঠা ও জন্মদিনের কেকসহ ভাজাপোড়া খেয়ে বুকে প্রচণ্ড ব্য’থা ও শ্বাসক’ষ্ট মা’রা গেছেন আকাশ ও শুভ। এলাকায় গুঞ্জন ওঠে তারা মা’দক সে’বন করেছিলেন। তবে পুলিশ জানিয়েছে, তারা এ ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না। মৃ’ত আকাশ সাহার ফুফা দীপক সরকার বলেন, আকাশের বাবা সুভাষ একজন মুদি দোকনদার। তার দুই ছেলে এক মেয়ে। শুভ’র বাবা নন্দ লাল সাহা একজন স্থানীয় পাট ব্যবসায়ী। তার দুই ছেলে।

দীপক সরকার বলেন, তাদের ধারণা আকাশ ও শুভ গ্যাসজনিত সৃষ্ট শা’রীরিক সমস্যার কারণে মা’রা গেছেন। তারা মঙ্গলবার বাড়িতে বানানো তাল পিঠা খেয়েছিলেন। এছাড়া একইদিন আকাশের বোন টিকলি রানীর জন্মদিনের কেকসহ আরো কিছু ভাজা পোড়া খাবার খেয়েছিলেন তারা। বুধবার বেলা ১০টার দিকে তাদের পেট ব্য’থা ও বমি ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়। তখন পরিবারের লোকজন স্থানীয় একজন চিকিৎসককে নিয়ে আসেন। দীপক সরকার আরও বলেন, গ্রাম্য চিকিৎসক দেখে শুনে জানান গ্যাসজনিত সমস্যার কারণে এমনটি হতে পারে। তিনি কিছু ওষুধপত্র দেন। বুধবার রাতে তারা কিছুটা সুস্থতা অনুভব করেন। পরদিন বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তাদের অবস্থা স্থিতিশীল ছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে আবার তাদের পেট ব্য’থা ও বমি দেখা দেয়। স্থানীয় চিকিৎসকরা গ্যাসজনিত রোগের চিকিৎসা করেন।

তিনি জানান, বৃহস্পতিবার রাতে আকাশ ও শুভর অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। আকাশের স্বজনরা তাকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। কিন্তু সেখানে তার অবস্থা ক্রমেই অবনতির দিকে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানান, রোগীর অবস্থা গুরুতর। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফার্ড করেন। স্বজনরা বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে তাকে নিয়ে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর হাসপাতালে রওয়ানা দেন। পথিমধ্যে রাত ৩টার দিকে আকাশের অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যায়। তখন তাকে বেড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে ভর্তি করার পর কর্তব্যরত চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে শুক্রবার ভোররাত ৪টার দিকে আকাশকে মৃ’ত ঘোষণা করেন। শুভ সাহার ফুফু নমিতা রানী বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে শুভ’র অবস্থাও খুব খারাপ হয়ে যায়। তাকে দ্রুত নিয়ে যাওয়া হয় সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর হাসপাতালে। সেখানে কিকিৎসাধীন অবস্থায় শুভও শুক্রবার ভোররাত ৪টার দিকে মা’রা যান।

আকাশের বাবা সুভাষ সাহা জানান, তার ছেলে কোন মাদক গ্রহণ করতো না। তার জানামতে বাজে কোন আড্ডাতেও যেত না। তারা বাড়ির খাবারের বাইরে কিছু খেয়েছিল কিনা সেটাও তিনি জানেন না। সুভাসের স্বজনদের মাধ্যমে জানা গেছে, মঙ্গলবার (২৫ আগষ্ট) সুভাসের ছোট মেয়ে ও আকাশের বোন টিকলী রাণীর জন্মদিন ছিল। জন্মদিন উপলক্ষে আকাশের বাড়িতে ঘরোয়া পরিবেশে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। রাতে সবাই ঘুমাতে গেলে আকাশ ও শুভ সাহা একটি রুমে একসাথে ঘুমায়। পরদিন বুধবার সকাল থেকে তাদের পেট ও বুকে ব্য’থা শুরু হয়। স্থানীয়রা জানান, শুধু ফুড পয়জনিং এর জন্য হলে বাড়ির আরো কারো আক্রান্ত হওয়ার কথা থেকে যায়। এজন্য ওই দুজন মঙ্গলবার রাতে হয়ত এমন কিছু খেয়েছিল বা পান করেছিল যা তাদের বাড়ির লোকজন জানেন না। এদিকে এই দুই তরুণের অকালমৃত্যুতে পুরো এলাকার মানুষের মধ্যে শোকাবহ অবস্থা বিরাজ করছে। আকাশ ও শুভ’র পরিবারের লাকজনের আহাজারিতে পরিবেশ ভারী ওয়ে ওঠে।

ad

পাঠকের মতামত