
প্রথম মুসলিম নারী গুপ্তচর নুর খান! জানুন তার বীরত্ব ও সাহসিকতার কাহিনী
এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : লন্ডনের ব্লুমসবারি এলাকায় যে বাড়িটিতে থাকতেন দ্বিতীয় বিশ্বযু’দ্ধে মুসলিম নারী গু’প্তচর নুর ইনায়েত খান, সেটিতে তার স্ম’রণে স্থাপন করা হয়েছে একটি নীল ফলক। ব্রিটেনে বিখ্যাত লোকজন যেসব বাড়িতে থেকেছেন, সেগুলোতে সাধারণত এরকম নীল ফলক লাগানো হয় সেই স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়ার জন্য।
তবে এই প্রথম ব্রিটেনে ভারতীয় কোনো নারীর জন্য কোনো বাড়িতে এরকম নীল ফলক লাগানো হলো। নুর ইনায়েত খান ছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযু’দ্ধে ব্রিটিশ গু’প্তচ’র। তিনি কাজ করতেন ব্রিটিশ সরকারের ”স্পেশাল অ’পারে’শন্স এক্সি’কিউ’টিভ (এসওই) নামের একটি সংস্থায়। জার্মানি যেসব দেশ দ’খ’ল করে নিয়েছিল, সেসব দেশে এই সংস্থাটি গু’প্তচ’র পাঠাতো। উদ্দেশ্য ছিল সেসব দেশে যারা নাৎ’সি দ’খ’লদারি’ত্বের বি’রু’দ্ধে ল’ড়া’ই করছে, তাদের সাহায্য করা।
নুর ইনায়েত খানকে পাঠানো হয়েছিল প্যারিসে। ধা’রণা করা হয়, তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযু’দ্ধে জার্মানির বি’রু’দ্ধে কাজ করা প্রথম মুসলিম নারী গু’প্তচ’র। নুর ইনায়েত খান জার্মান গুপ্ত পুলিশ সংস্থা ”গে’স্টাপো”র হাতে ধ’রা পড়েন। এরপর ১৯৪৪ সালের সেপ্টেম্বরে এক কনসেনন্ট্রেশন ক্যাম্পে তার মৃ’ত্যু হয়।
যেভাবে নুর ইনায়েত খান গু’প্তচ’র হয়েছিলেন : নুর ইনায়েত খানের জন্ম মস্কোতে। তার বাবা ছিলেন ভারতীয়, মা মার্কিন নাগরিক। তার বাবা এসেছিলেন এক ভারতীয় রাজ পরিবার থেকে। তারা থাকতেন লন্ডন এবং প্যারিসে। নুর ইনায়েত খানের বয়স যখন মাত্র ১৩, তখন তার বাবা মা’রা যান। এরপর নিজের মা এবং অন্য ভাইবোনদের সাহায্য করতে তাকে দায়িত্ব নিতে হয়।
সঙ্গীতে তার ভী’ষ’ণ আগ্রহ ছিল। সেই সঙ্গে শিশুদের জন্য লেখালেখিতে। এসব লেখা প্রকা’শিত হয়েছিল ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেনে। জার্মানি যখন ফ্রান্স দ’খ’ল করে নিল, নুর এবং তার পরিবার ইংল্যান্ডে পালিয়ে আসেন। ১৯৪০ সালের নভেম্বরে তিনি যোগ দেন উইমেন্স অক্সিলারি এয়া’রফো’র্সে (ডাব্লিউএএএফ)।
১৯৪২ সালের শেষের দিকে তাকে ”স্পেশাল অ’পরেশ’ন্স এক্সি’কিউ’টিভের (এসওই) একজন রেডিও অ’পরে’টর হিসেবে রি’ক্রু’ট করা হয়। এসওই এজে’ন্টদের যু’দ্ধ করার প্রশিক্ষণ দেয়া হতো। সেই সঙ্গে রেডিও এবং টেলিগ্রাফ পরিচালনার। যাতে করে শ’ত্রুপ’ক্ষের পরিক’ল্পনা ভ’ন্ডু’ল করে দেয়া যায়। এদের প্রায়শই নানা রকম গো’প’ন য’ন্ত্রপা’তি এবং অ’স্ত্রশ’স্ত্র বহন করতে হতো। যেমন ছাতা বা পাইপের মধ্যে লু’কিয়ে রাখা যায় এমন বি’স্ফো’রক ভর্তি কলম।
জেমস বন্ড ছবিতে পরবর্তীকালে যে ধ’রনের গো’পন অ’স্ত্র দেখানো হতো, অনেকটা সেরকম। তাদের মি’শনগু’লো ছিল বেশ বি’পজ্জ’নক। অনেকেই জানতো, অ’ভিযা’নে গিয়ে হয়তো তারা আর ফিরে আসবে না। তবে এই ঝুঁ’কি তারা মেনে নিয়েছিল। নুর ইনায়েত খানের কাজ ছিল লন্ডনে গো’পন বার্তা পাঠানো। এটি ছিল বেশ বি’পজ্জ’নক কাজ। তবে তিনি গো’পন তথ্য সং’গ্র’হের জন্য জীবনের ঝুঁ’কি নিয়ে চলে গিয়েছিলেন শ’ত্রুপ’ক্ষের পেছনে।
তাকে প্যা’রাশ্যু’টে ড্র’প করা হয়েছিল জার্মান অ’ধিকৃ’ত ফ্রান্সে। নুর ইনায়েত খানের সাং’কে’তিক নাম ছিল ”ম্যাডে’লিন” এবং ফ্রান্সে তখন আরো যে শত শত গু’প্তচ’র কাজ করছিল তিনি গিয়ে তাদের সঙ্গে যোগ দেন। নুর ফ্রান্সে যাওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই তাদের এসইও নেটওয়ার্কের অনেক গু’প্তচ’র ধ’রা পড়েন। তবে তারপরও নুর ফ্রান্সে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ঘুরে বেড়াতেন গ্রে’প্তার এড়ানোর জন্য। তার প্রথম মিশনে কাজ করার সময়েই তিনি ধ’রা পড়েন।
তবে তিনি কা’রাগা’র থেকে পা’লিয়ে যান। এর কয়েক মাস পর তাকে আবার আ’টক করা হয়। আরো তিনজন গু’প্তচ’রের সঙ্গে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় এক ক’নসে’নট্রেশ’ন্স ক্যাম্পে। জার্মান কা’রার’ক্ষীরা তাকে এক বছর ধ’রে প্রায় অ’না’হা’রে-অ’র্ধা’হা’রে রেখেছিল। এরপরও নুর ইনায়েত খান কোনো ধ’রনের গো’পন ত’থ্য ফাঁ’স করতে অ’স্বী’কৃ’তি জানান। নুরকে তার সাহ’সিকতার জন্য জর্জ ক্র’স দেয়া হয়। এটি ব্রিটেনে বীরত্বের জন্য সর্বোচ্চ সামরিক খেতাবগুলোর একটি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মাত্র যে তিনজন নারী এই খেতাব পান, তিনি ছিলেন তার একজন। সূত্র: বিবিসি বাংলা।