331455

কোভিড আ’ক্রান্তের আগেও ৭ বার মৃ’ত্যুর মুখোমুখি হয়েছিলেন অমিতাভ বচ্চন

বিনোদন ডেস্ক।। আসছে ১১ অক্টোবর ৭৮-এ পা দেবেন অমিতাভ বচ্চন। তার ঠিক তিন মাস আগে গত ১১ জুলাই করোনা আ’ক্রান্ত হলেন। জ্বর আর শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হয়েছেন মুম্বইয়ের নানাবতী হাসপাতালে। দুশ্চিন্তায় গোটা দেশের অনুরাগীরা।

যদিও চিকিৎসকরা চিন্তার কোনও কারণ দেখছেন না। তাছাড়া ইতিহাস সাক্ষী, এমন অনেক অসুখের মোকাবিলা করেছেন শাহেনশা। অনেকবার গু’রুতর অসুখকে হারিয়ে ফিরে এসেছেন শ্যুটিং ফ্লোরে। এমনকী মৃ’ত্যুর মুখ থেকেও ফিরেছেন তিনি।

১৯৮২ সালে ‘কুলি’ ছবির শ্যুটিংয়ের সময়ে মা’রাত্মক চোট পান অমিতাভ। তারপর থেকেই দীর্ঘদিন ধরে লিভারের সমস্যায় ভুগছেন। কিছুদিন আগে বিগ বি নিজেই জানিয়েছিলেন তাঁর লিভারের মাত্র ২৫ শতাংশ ঠিকঠাক কাজ করে। বছর ২০ আগে ‘ব্লাড ট্রান্সফিউশন’ করা হয়েছিল তাঁর। তারপর থেকেই ক্রমাগত বেড়েছে লিভারের সমস্যা। কয়েকদিন আগে অমিতাভ জানিয়েছিলেন, ২০০০ সালে টিউবারকিউলোসিসের চিকিৎসা হয়েছিল তাঁর।

তিনি জানতেও পারেননি যে তারও ৮ বছর আগে থেকে এই রোগ বাসা বেঁধেছিল তাঁর শরীরে। এরপর হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসেও আ’ক্রান্ত হয়েছিলেন অমিতাভ। এসব নিয়ে নিয়মিত চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণের মধ্যেই থাকতে হয় তাঁকে। হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। অসুস্থতার জন্য ২৫তম কলকাতা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে উপস্থিত থাকতে পারেননি। তবে এগুলো সবই ছিল সামান্য সমস্যা। জীবনের সবচেয়ে মা’রাত্মক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল ১৯৮২-র ২৬ জুলাই। প্রয়াগ রাজ ও মনমোহন দেশাইয়ের ‘কুলি’ ছবির শ্যুটিংয়ের সময়ে মা’রাত্মক চোট পান অমিতাভ। বাঙ্গালুরু বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শ্যুটিং চলছিল।

অভিনেতা পুনীত ইশারের সঙ্গে মা’রামারির দৃশ্য। সেই সময়ে একটি দৃশ্যে লাফাতে ভু’ল করায় অমিতাভ আছড়ে পড়েন একটি টেবিলের উপরে। তখনই টেবিলের কোণের ইস্পাতের একটি ধার তাঁর পেটে ঢুকে যায়। গুরুতর জখম নিয়ে মুম্বইয়ের হাসপাতালে ভর্তি হন অমিতাভ। বেশ কয়েকটি অ’স্ত্রোপচার হয় তাঁর। অমিতাভ পরে নিজেই তাঁর ব্লগে লেখেন, ভেন্টিলেটরে দেওয়ার আগে কয়েক মিনিটের জন্য চিকিৎসকরা তাঁকে মৃ’ত বলে ধরে নিয়েছিলেন। গোটা দেশের মনে আছে কী ভিষণ যু’দ্ধের শেষে নায়কের মত জিতে ফিরেছিলেন অমিতাভ বচ্চন।

ওই একবারই নয়, স্টান্ট দৃশ্য করতে গিয়ে অনেকবারই অনেক চোট পেয়েছেন তিনি। নিজেই তাঁর ব্লগে জানিয়েছেন, ১৯৭০ থেকে ৮০ সালের মধ্যে স্টান্ট দৃশ্যের শ্যুটিং করতে করতে তাঁর ঘাড় শক্ত হয়ে যায়। দীর্ঘদিন কাঁধে যন্ত্রণায় কষ্ট পেতে হয়। আর ‘কুলি’ ছবির সময়ে চোটের জন্য সারা জীবনই নানা ধরনের সমস্যা ভোগ করতে হয়েছে।।

কুলি-কাণ্ডের পরে পরেই ১৯৮৪ সালে মায়াস্থেনিয়া গ্রাভিস নামে একটি স্নায়ুজনিত রোগ ধরা পড়ে অমিতাভের। শারীরিক দুর্বলতা এবং পেশীতে সমস্যা তৈরি হয়।অস্বাভাবিক ক্লান্ত হয়ে পড়তেন সেই সময়ে। চিকিৎসরকার জানান এই অসুখ পুরোপুরি সারে না, তবে নিয়মিত চিকিৎসায় নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। সে চিকিৎসাও চলছে।

এর পরে বড় সমস্যা ২০০০ সালে। তখন বিখ্যাত টিভি শো ‘কওন বনেগা ক্রোড়পতি’-র শ্যুটিং চলছে। সেই সময়ে অমিতাভের মেরুদণ্ডে টিবি ধরা পড়ে। প্রায় ১ বছর ধরে টানা চিকিৎসা চলে। অমিতাভ পরে জানান, যেদিন ওই টিভি শো শুরু করেন, সেদিনই ওই রোগ ধরা পড়ে। আর তার জেরে তিনি বসে বা শুয়ে থাকতে পারতেন না। দিনে ৮-১০টা পেইন কিলার খেয়ে শ্যুটিং করতেন। অসহ্য যন্ত্রণা হতে থাকত সব সময়ে। সেই অসুখকেও হার মানান বিগ বি।

২০০৫ সালে ফের হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদন্ত্রে যন্ত্রণা নিয়ে মুম্বইয়ের লীলাবতী হাসপাতালে ভার্তি হন। বৃহদন্ত্রে ফুটো ধরা পড়ে। অস্ত্রোপচারের পরে এক মাসেরও বেশি সম্পূর্ণ সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হয়।

২০১৫ সালে অমিতাভ নিজেই জানান, তাঁর শরীরে মাত্র ২৫ শতাংশ যকৃৎ রয়েছে, বাকি ৭৫ শতাংশ বাদ পড়েছে ভ’য়াবহ হেপাটাইটিস বি-তে। অমিতাভ জানান ‘কুলি’-র দুর্ঘটনার পরে তাঁর শরীরে প্রায় ২০০ জনের রক্ত দেওয়া হয়েছিল। মোট ৬০ বোতল রক্ত লেগেছিল। কোনও এক রক্তদাতার শরীরে হেপাটাইটিস বি জীবাণু ছিল। আর সেটাই তাঁর শরীরে ঢুকে যায়। তবে ১৯৮২ থেকে ২০০০ সাল ১৮ বছর ঠিকঠাকই কাজ করেছেন। কিন্তু আচমকাই এক রেগুলার মেডিক্যাল চেকআপের সময়ে জানা যায়, তাঁর লিভারে মা’রাত্মক সং’ক্রমণ হয়েছে। ফের অ’স্ত্রোপচার। বাদ দিতে হয় লিভারের ৭৫ শতাংশ।

তবে এত কিছুর মধ্যেও কাজ বন্ধ হয়নি। অনেক অসুখকে হার মানিয়েছেন, অনেক অসুখকে সঙ্গী মেনে নিয়েছেন কিন্তু অভিনয় থামাননি। বারবার ফিরে এসেছেন নিজের চেনা জগতে। এবার মহামারী করোনার সময়ে শ্যুটিং বন্ধ ছিল। লকডাউনের সময়ে সাধারণের পাশে দাঁড়িয়েছেন। স’তর্কও থেকেছেন। তবু করোনার থাবা থেকে ছাড় পেলেন না। কিন্তু তাঁর পুরনো রেকর্ডই তাঁর সম্বল। সেই রেকর্ড বলছে করোনাকে হারিয়ে ফের নায়কের মতো নিজের বাড়ি জলসায় এন্ট্রি নেবেন বলিউডের শাহেনশা। উৎস: দ্য ওয়াল

ad

পাঠকের মতামত