কুয়েত থেকে দেশে ফিরতে পারে আড়াই লাখ বাংলাদেশি
প্রবাস ডেস্ক।। কুয়েত সরকার তার দেশ থেকে অভিবাসীদের সংখ্যা কমিয়ে আনতে একটি প্রবাসী কোটা বিল প্রণয়ন করেছে বলে খবর প্রকাশ হয়েছে।
জানা গেছে, ঐ খসড়া আইনে বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য মাত্র ৩ ভাগ কোটা প্রস্তাব করা হয়েছে। এই আ’ইন পাশ হলে দেশটিতে অবস্থানরত আড়াই লাখের বেশি অভিবাসীকে ফেরত আসতে হতে পারে বলে আ’শঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, কুয়েতে মোট জনসংখ্যার ৪৩ লাখের মধ্যে ৩০ লাখই অভিবাসী; যা প্রায় ৭০ শতাংশ।
এর ফলে জনতাত্ত্বিক ভারসাম্য রক্ষা করতে অভিবাসীর সংখ্যা পর্যায়ক্রমে ৩০ শতাংশে নামিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে কুয়েতের সরকার।
এ লক্ষ্যে কুয়েতের পার্লামেন্টের একটি কমিটি সম্প্রতি এ সং’ক্রান্ত খসড়া কোটা বিল অনুমোদন করে। সেখানে বিভিন্ন দেশের অভিবাসীদের বিভিন্ন কোটায় ভাগ করে ফেরত পাঠানোর প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
কোটা অনুযায়ী কুয়েত সরকার যদি মাত্র ৩ শতাংশ বাংলাদেশি অভিবাসীকে জায়গা দেয় তাহলে আড়াই লাখেরও বেশি মানুষকে ফিরে আসতে হবে।
কুয়েতি গণমাধ্যমে এমন খবর প্রচার হতে দেখেছেন কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এস এম আবুল কালাম। তাই প্রস্তাবিত এই বিলটির আইনে পরিণত হওয়া নিয়ে বেশ আ’তঙ্কে আছে সেখানে অবস্থানরত প্রবাসীরা।
কুয়েত প্রবাসী শাহ করিম বলেন, কুয়েতে চাকরির বেতন, কাজের পরিবেশ খুব ভালো। আমার টাকার ওপর পুরো পরিবার চলে। এখন যদি চলে আসতে হয়। আমার পরিবার কিভাবে চলবে?
আমরা তো এমন পরিবেশ পাবো না। বাংলাদেশের লাখ লাখ অভিবাসীর কী হবে? এক হিসাব অনুযায়ী, কুয়েতে বর্তমানে প্রায় তিন লাখ বাংলাদেশি প্রবাসী রয়েছে।
হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া তাদের সবাই বিভিন্ন অদক্ষ বা স্বল্প-দক্ষ পেশায় নিয়োজিত। বিশেষ করে- পরিচ্ছন্নতা কর্মী, নির্মাণ শ্রমিক, গাড়ি চালনা, হোটেল বয় ইত্যাদি পেশায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের বেশি দেখা যায়।
এসব অভিবাসী ছাড়া কুয়েত সরকার চলতে পারবে না বলে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কালাম। তিনি বলেছেন, কুয়েত সরকারের এই খসড়া আ’ইন অবাস্তব।
কুয়েত চাইছে, সরকারি চাকরি, ডাক্তার, নার্স, প্রকৌশলী, ইত্যাদি দক্ষ কর্মসংস্থানের জায়গাগুলোয় তাদের দেশের নাগরিকদের বসাতে।
কিন্তু পরিচ্ছন্নতার কাজ, নির্মাণের কাজ, গাড়ি চালানোর কাজ, দোকানের কর্মচারীর কাজ তো কুয়েতিরা করবে না। এসব অভিবাসী পাঠিয়ে দিলে তাদের চলবে কিভাবে?
বলেন তিনি। তার মতে, দেশটিতে নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসায় কট্টোরবাদী বি’রোধীরা অভিবাসীর সংখ্যা কমিয়ে আনার ব্যাপারে সরকারকে চাপে দিচ্ছে।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত বলেন, কুয়েতের সরকার নীতিগতভাবে অভিবাসী কমানোর বিষয়ে সম্মত হলেও দেশটিতে কী পরিমাণ অভিবাসী দরকার সেই সং’ক্রান্ত চূড়ান্ত প্রতিবেদন পার্লামেন্টের কমিটি এখনও প্রস্তুত করতে পারেনি।
ওই প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করবে আদৌ কতো সংখ্যক অভিবাসী থাকবেন। সব মিলিয়ে পুরো বিষয়টি আরও সংশোধনের সুযোগ রয়েছে বলে তিনি আশা করছেন।
এদিকে কুয়েত সরকার বাংলাদেশের অদক্ষ বা স্বল্প-দক্ষ শ্রমিকদের এতো বিপুল হারে ফেরত পাঠাতে পারবে কিনা, সেটা নিয়ে কিছুটা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন রামরু চেয়ারম্যান তাসনিম সিদ্দিকী।
যদি বিপুলসংখ্যক অভিবাসীকে তারা আসলেও ফেরত পাঠায় তাহলে সরকারকে তাদের পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের জন্য এখন থেকেই কর্মসূচি হাতে নিতে হবে বলে তিনি জানান।