330256

চট্টগ্রাম ছিল এন্ড্রু কিশোরের ‘আনন্দ ভুবন’

চট্টগ্রামে অনেকবারই এসেছেন প্লেব্যাক সম্রাট কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী এন্ড্রু কিশোর। এ শহরে ছিল তার অনেক বন্ধু-স্বজন। সময়-সুযোগ হলে চুপি চুপি চলে আসতেন, হারিয়ে যেতেন নাগরিক কোলাহল ছাড়িয়ে দূর সমুদ্রে, কখনো গহীন অরণ্যে। বান্দরবান, রাঙামাটি কিংবা খাগড়াছড়ির দুর্গম পাহাড়ে ‘ভয়ংকর সুন্দর’ প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যাওয়ায় ছিল তার অপার আনন্দ। আর কক্সবাজারের ফেনিল ঢেউ তাকে ডেকেছে বারে বারে।

প্লেব্যাক সম্রাট মনে করতেন চট্টগ্রামেই সংগীতের জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি। এর কারণ হিসাবে তিনি বলতেন, চট্টগ্রামের নানা উৎসব-পার্বণের কথা। বিশেষ করে বিয়ে উপলক্ষে চট্টগ্রামের মেহেদী অনুষ্ঠান সংগীতের সমৃদ্ধিতে দারুণ ভূমিকা রাখছে বলে মনে করতেন তিনি।

চট্টগ্রামের সিনিয়র সাংবাদিক নাসির উদ্দিন হায়দার তার লেখনীতে উল্লেখ করেন, ‘এন্ড্রু কিশোর বলেন, বাংলাদেশের সংগীতের সমৃদ্ধিতে চট্টগ্রামের অবদান অসীম। এই চট্টগ্রাম থেকেই তপন চৌধুরী, নকিব খান, কুমার বিশ্বজিৎ, আইয়ুব বাচ্চু, পার্থ বড়ুয়া ও সন্দীপনের মতো শিল্পীর উত্থান হয়েছে। যারা জাতীয় পর্যায়ে সংগীতে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে এত উঁচু মানের শিল্পী তৈরি হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হলো মেহেদী অনুষ্ঠান। শুধু মেহেদী অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার মাধ্যমে চট্টগ্রাম থেকে অনেক নামি শিল্পী তৈরি হয়েছে। এই ধরনের সংগীতানুষ্ঠান দেশের আর কোথাও দেখা যায় না। চট্টগ্রামের মেহেদী অনুষ্ঠান সংগীতের সমৃদ্ধি আর শিল্পী তৈরিতে অনন্য ভূমিকা রেখেছে।’

কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যুর পর স্মৃতিচারণ করে বহু জনপ্রিয় গানের এ গায়ক বলেছিলেন, ‘আমরা যখন কেউ এখনকার অবস্থানে ছিলাম না। তখন আমি, আইয়ুব বাচ্চু, হানিফ, তপন চৌধুরী, কুমার বিশ্বজিৎ একসঙ্গে আড্ডা দিতাম। বাচ্চু চট্টগ্রাম থেকে আসতো। আমরা দেখতাম সে শয়নে-স্বপনে গিটার ছাড়া কিছুই ভাবতো না।’

২০১৫ সালের ডিসেম্বরে এক শীতের রাতে চট্টগ্রাম থিয়েটার ইনস্টিটিউটে এক সংগীতানুষ্ঠানে সুর নয় কথার ডালিতে সুরের জাদুকর দর্শকদের মাতিয়ে রেখেছিলেন। হিম হিম শীতের গীতিময় সেই সন্ধ্যায় এক ফালি হাসি ছড়িয়ে মঞ্চে এসেছিলেন তিনি। সুরের জাদুকর দর্শকদের মাতিয়ে রেখেছিলেন কথার জাদুতে। আলো ঝলমলে সেই আয়োজনে চট্টগ্রাম নিয়ে মুগ্ধতার কথা বলছিলেন তিনি, বলেছিলেন মধুর কিছু স্মৃতির কথা।

২০০৫ সালের একটা মধুর স্মৃতির কথা বলেতে গিয়ে তিনি জানিয়েছিলেন একদিন সন্ধ্যায় স্ত্রী-সন্তান-বন্ধুদের নিয়ে পতেঙ্গা সৈকতে বেড়াতে গেলেন। সাগরের সুরে তারা এমনই মত্ত ছিলেন যে কখন রাত ১২টা পার হয়েছে তা খেয়াল করেননি কেউ। সেবার এন্ড্রু কিশোর সপরিবারে এসেছিলেন তার বন্ধু সাংবাদিক মনজুর কাদের মনজুর বিয়েতে। সপ্তাহ খানেক ছিলেন চট্টগ্রামে। পতেঙ্গা সৈকত থেকে বান্দরবানের রেমাক্রি, কাপ্তাই থেকে কক্সবাজার ঘুরে বেড়িয়েছেন, চট্টগ্রামের রূপ-রঙে রাঙিয়েছেন নিজেকে।

পরে একবার গিয়েছিলেন বান্দরবানের লেক্রিতে। তিনি জানিয়েছিলেন, সেবারের অ্যাডভেঞ্চার ছিল সবচেয়ে রোমাঞ্চকর। প্রথমে বান্দরবানের থানছি, সেখান থেকে ইঞ্জিন বোটে আরও পাঁচ ঘণ্টা। এরপর হাঁটা পথ-কম করে হলেও চার-পাঁচ ঘণ্টা। শেষে দেখা মেলে সেই লেক্রির।

এন্ড্রু কিশোরের ভাষায়, ‘বাংলাদেশের সবটুকু রূপ যেন লুকিয়ে আছে সেখানে। অতিথিবান্ধব আদিবাসী জনগোষ্ঠী, গভীর অরণ্যে ঘেরা নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মন কেড়ে নেয়।’

ad

পাঠকের মতামত