330124

জুলাই মাস বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে

নিউজ ডেস্ক : এখন বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে তিন হাজারের বেশি রোগী শনা’ক্ত হচ্ছে। বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের সং’ক্র’মণ যেভাবে হচ্ছে, তাতে জুলাই মাসটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। কারণ এই জুলাই মাসের শেষেই বাংলাদেশে মুসলমানদের অন্যতম বড় ধর্মীয় উত্‍সব ঈদুল আযহা উদযাপিত হতে যাচ্ছে।

একদিকে মানুষজনের বাড়ি যাওয়া, অন্যদিকে কোরবানি দিতে পশু কেনা থেকে ব্যবস্থাপনার কারণে তারা সং’ক্র’মণ বেড়ে যাওয়ার আশ’ঙ্কা করছেন। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত মোট শনা’ক্ত হওয়া কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা ১ লাখ ৬২ হাজার ৪১৭ জন। মোট মৃত্যু হয়েছে ২,০৫২ জনের মৃত্যু হলো। রবিবারও ৫৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এখন বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে তিন হাজারের বেশি রোগী শনা’ক্ত হচ্ছে। কেমন হতে পারে বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস পরি’স্থিতি? বাংলাদেশের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়’ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এএসএম আলমগীর বলছেন, গত কয়েক সপ্তাহ ধ’রে দেখা গেছে, সং’ক্র’মণের হার অনেকটা স্থিতিশীল পর্যায়ে রয়েছে।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেছেন অফিস আদালত, দোকানপাট ও গার্মেন্টস খোলার পর সং’ক্র’মণের গতি প্রকৃতির তারা গভীরভাবে ন’জর রেখেছেন এবং ঝুঁ’কির চূড়ান্ত পর্যায়ের মধ্যে সংগৃ’হীত ত’থ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে তারা দেখেছেন গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সং’ক্র’মণ একটা স্থি’তিশীল অবস্থায় রয়েছে।

এএসএম আলমগীর বলেন, “ভাইরাসের রিপ্রো’ডাকশান রেট যাকে আর-নট বলা হয়, বাংলাদেশে গত দু সপ্তাহে এই হার ১-এর নিচে নেমে এসেছে, যেটা একটা পজি’টিভ সাইন।” আর নট দিয়ে বিজ্ঞানীরা বোঝার চেষ্টা করেন একজন মানুষ কতজনকে সং’ক্র’মিত করার ক্ষমতা রাখে।

আলমগীর বলছেন বাংলাদেশে আর নট-এর হিসাব থেকে তারা মনে করছেন একজন আ’ক্রা’ন্ত ব্যক্তির যেহেতু এখন একজনের কম লোককে সং’ক্র’মিত করার আ’শং’কা, সেটা আ’শাব্য’ঞ্জক। ”তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে আমরা যেটা দেখছি, সবগুলো নিয়’ন্ত্রণ ব্যবস্থা একসাথে কার্যকর রাখলে জুলাইয়ের শেষ নাগাদ সং’ক্র’মণ কমতে শুরু করবে।”

তবে তিনি এটাও আ’শ’ঙ্কা করছেন, ঈদুল আযহার সময় গরুর হাট এবং ঈদে বাড়ি যাওয়া-আসার প্র’ব’ণতা আবার বাড়লে সং’ক্র’মণের এই স্থি’তাব’স্থা আবার ঊর্ধ্বগতিতে রূপ নিতে পারে। তিনি বলছেন, ”আমরা একটা বি’পজ্জ’নক পরি’স্থিতিতে পড়ে যেতে পারি। ঝুঁ’কিপূর্ণ পরি’স্থিতিতে যদি কোরবানি ঈদে গরুর বাজার এবং মানুষের দল বেঁধে বাড়ি যাওয়া চলে- সেটা যদি নিয়’ন্ত্রণ করা না যায়, তখন আমরা আরেকটা ঝুঁ’কির মধ্যে পড়ে যেতে পারি। আবারো রোগীর সংখ্যা বেড়ে যেতে পারে।”

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত মোট শনা’ক্ত হওয়া কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা ১ লাখ ৬২ হাজার ৪১৭ জন। পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশের চেয়ারপার্সন শারমিন ইয়াসমিনের মত কিন্তু ভিন্ন। তিনি বলছেন, ”রোগের বিস্তৃতিটা একটু কমে গেলেও এখনো কিন্তু সেটা স্থিতিশীল না। একদিকে যেমন কোরবানির ঈদ আছে, সেই সঙ্গে অনেক স্থানে বন্যা হচ্ছে। সেটা কিন্তু আরেকটা ঝুঁ’কি। এক্ষেত্রে লোকজনের পক্ষে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলাটা খুবই ক’ঠিন ব্যাপার।”

তিনি পরামর্শ দিচ্ছেন, কোরবানির হাটগুলোয় যারা গরু কিনতে যাবেন বা যারা গরু বিক্রি করবেন, তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যাপারে একটা সমন্বয় করতে হবে। এজন্য অনলাইনে গরু কেনা বা হাটে না গিয়ে সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে যারা কোরবানির মাংস পৌঁছে দিতে পারেন, তাদের সাহায্য নেয়ার জন্য তিনি পরামর্শ দিচ্ছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঈদুল আযহার সময় যদি মানুষ সামাজিক দূরত্বের মতো বিষয়গুলো ঠিকভাবে মেনে না চলেন, স্বাস্থ্য সত’র্কতা না মানেন, তাহলে তা করোনাভাইরাস সং’ক্র’মণ পরি’স্থিতির ওপর নে’তিবাচক প্রভা’ব ফেলতে পারে। বাংলাদেশ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক বে-নজীর আহমেদ বলছেন, এখানে দুইটি বিষয় মিলিয়ে প্রভা’ব পড়বে, যার ওপর করোনা ভাইরাসের সং’ক্র’মণ বাড়া বা কমার বিষয়গুলো অনেকাংশে নির্ভর করবে।”

তিনি বলছেন, ”রাজাবাজারের মতো যেসব এলাকায় স্থানীয়ভাবে লকডাউন করা হচ্ছে, সেটা যদি একসাথে অনেকগুলো জায়গায় কার্যকর করা যায়, রোগীদের আইসোলেশনে রাখা যায়, তাহলে হয়তো সং’ক্র’মণ রো’ধে সেটা সহায়তা করবে। কিন্তু কোরবানির হাটের কারণে সং’ক্র’মণ বেড়ে যাওয়ার আবার একটা ঝুঁ’কি তৈরি হবে। যারা গরু নিয়ে এসব হাটে আসবেন, তাদের মাধ্যমে যেমন রোগ আসতে পারে, তাদের মাধ্যমে সেটা সারা দেশে ছড়িয়েও পড়তে পারে।

বে-নজীর আহমেদ বলছেন, ”তেমনি যারা গরু কিনতে যাবেন, তাদের মাধ্যমেও সং’ক্র’মণ অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে। সেই সঙ্গে মাংস কাটাকাটি, মাংস সংগ্রহ যারা করবেন, তাদের মাধ্যমেও এটার বিস্তার ঘটতে পারে।” ফলে সং’ক্র’মণের পরি’স্থিতি কি দাঁড়াবে, সেটা বোঝার জন্য ঈদুল আযহা পার হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে তিনি মনে করেন।

সংক্রমণের পরি’স্থিতি কি দাঁড়াবে, সেটা বোঝার জন্য ঈদুল আযহা পার হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন। বাংলাদেশে প্রথম করোনা ভাইরাস রোগী শনা’ক্ত হয় মার্চ মাসের আট তারিখে। এরপর প্রায় চার মাস অতিবাহিত হতে চললো। সেই সময় বলা হয়েছিল, এপ্রিল মাসটা বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে ক্রি’টিক্যা’ল হয়ে উঠবে। তারপরে বলা হয়েছিল, করোনা ভাইরাস সং’ক্র’মণের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখবে মে মাস।

এখন জুলাই মাসের কথা বলা হচ্ছে। এই দীর্ঘ চার মাস ধ’রে ক্র’মব’র্ধমান সং’ক্র’মণ চলার কারণ কি? আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এএসএম আলমগীর বলছেন, ”সং’ক্র’মণ শুরু হওয়ার পর সঠিক সময়েই সাধারণ ছুটি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এরপরে ছোট ছোট অনেকগুলো অনি’চ্ছাকৃত ভু’ল আমাদের হয়েছে।”

তিনি উদাহরণ দিয়ে বলছেন, ”যেমন এপ্রিলের পাঁচ তারিখে গার্মেন্টস কারখানাগুলো শ্রমিকদের একদল মানুষকে ঢাকায় নিয়ে আসলেন। আবার ফেরত গেলেন। সেটা একটা ঝুঁ’কি তৈরি হলো। আবার ২৬শে এপ্রিল থেকে ঘোষণা দেয়া হলো, গার্মেন্টস কারখানাগুলো স্বাস্থ্য বিধি মেনে মে মাসের দুই তারিখ থেকে খোলা যাবে। কিন্তু যারা স্বাস্থ্যবিধি মানতে পারবেন না, সেসব গার্মেন্টও ২৬ তারিখ থেকে খুলে গেল। হাজার হাজার শ্রমিক আসলেন। তারপরে ঈদে শপিং মার্কেট খুলে দেয়া হলো। সেখানেও সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন নি। এই ভু’লগুলো আমরা করেছি।”

বিশেষজ্ঞদের অনেকে বলছেন, সাধারণ ছুটি থাকলেও সেটি ক’ড়াক’ড়িভাবে বাস্তবায়ন না করার কারণে করোনা ভাইরাসের পরি’স্থিতি পুরোপুরি নিয়’ন্ত্রণে আসেনি। এএসএম আলমগীর বলছেন, ”ঈদের আগে বা পরে সীমিত আকারে অফিস বা ব্যবসা খুলে দেয়া হয়েছে। কিন্তু এই সীমিত আকারে শব্দটা আমরা বুঝতে পারছি না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্বাস্থ্য বিধি মানে না। সারা শহরে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা নেই, আবার হ্যান্ড স্যানিটাইজারের খরচ সবাই বহন করতে পারবেন না। সামাজিক দূরত্বের কথা বলি, কিন্তু বাংলাদেশে যখন শহরের পুরো ক’র্মকা’ণ্ড শুরু হয়, তখন তিন ফিট দূরত্ব বজায় রেখে চলাফেরা একটা ক’ঠিন কাজ।”

করোনা ভাইরাস নিয়ে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ বাড়ছেই। এলাকাভিত্তিক লকডাউন কতটা সফল? পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের চেয়ারপার্সন শারমিন ইয়াসমিন বলছেন, ”আসলে লকডাউন একটা বৈজ্ঞানিক মেথড, কিন্তু পূর্ব রাজাবাজারের ক্ষেত্রে সমন্বয়ের একটা অভা’ব ছিল, তাই সেটা সফল হয়নি। বাড়িতে বাড়িতে স্ক্রিনিং করা যেতো, কমিউনিটিকে পুরোপুরি সম্পৃক্ত করা যায়নি। প্রস্তুতির একটা ঘাটতি ছিল বলে আমার মনে হয়।”

পরবর্তী স্থানীয় লকডাউনের ক্ষেত্রে এসব অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ভুল সংশো’ধনের জন্য তিনি পরামর্শ দেন। তবে এএসএম আলমগীর বলেন, ”রাজাবাজারের রোগী বেড়ে গেছে, এটা সত্য নয়। রাজাবাজারে রোগী অলমোস্ট জিরোতে নেমে এসেছে। আপনি যদি সাকসেসফুল লকডাউনের কথা বলেন, তাহলে রাজাবাজার একটা উদাহরণ। টোলারবাগের মতো সফলতা আমরা রাজাবাজারেও পেয়েছি।” কিছুদিনের ভেতর এ সং’ক্রা’ন্ত বিস্তারিত জানানো হবে বলে তিনি বলছেন। সূত্র : বিবিসি বাংলা

ad

পাঠকের মতামত