327310

ববি হাজ্জাজের বাবা মুসা বিন শমসেরের সম্পদের গো’পন তথ্য ফাঁ’স

নিউজ ডেস্ক।। সরকার এবং সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বি’রুদ্ধে কুৎসা রটানো বন্ধ করেনি বিতর্কিত ববি হাজ্জাজ। গতকাল বুধবার পর্যন্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার এই অপচেষ্টা অব্যাহত ছিল।

বিতর্কিত ববি হাজ্জাজের মতো তার পরিবারও বিতর্কিত। তার বাবা ধনকুবের মুসা বিন শমসেরের দেওয়া সম্পদের বিবরণী তদন্তে নেমে পাওয়া গেছে খালি কলসির তথ্য। স্বঘোষিত হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক, সুইস ব্যাংকে টাকা গচ্ছিত রাখা, সাভার গাজীপুরে এক হাজার ২০০ বিঘা জমির মালিক—সবই তাঁর মিথ্যা প্র’তারণা।

শুল্ক ফাঁ’কি, জালিয়াতি করে কোটি টাকার গাড়ির রেজিস্ট্রেশন এমন অনেক ধরনের প্র’তারণা রয়েছে মুসা বিন শমসেরের।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে দেশের মানুষ যখন মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, ওই সময় পাকিস্তানিদের দোসর হয়ে মুক্তিযুদ্ধের বি’রুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন বর্তমানের বি’তর্কিত মুসা বিন শমসের। সে সময় মুক্তিকামী মানুষের বাড়িঘর লুটপাটসহ ভয়ংকর কর্মকাণ্ডে মেতে উঠেছিলেন মুসা। এমন অ’ভিযোগ, মুসার নিজ জেলা ফরিদপুরের মুক্তিযো’দ্ধাদের। দেশ স্বাধীনের ৪৯ বছর পরও থেমে নেই সেই মুসার বি’তর্কিত কর্মকাণ্ড। শুধু যু’দ্ধাপরাধের অ’ভিযোগই নয়, স্বঘোষিত হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক, সুইস ব্যাংকে টাকা গচ্ছিত রাখা, সাভার গাজীপুরে এক হাজার ২০০ বিঘা জমির মালিক দাবি করলেও এ ধরনের কোনো তথ্য-প্রমাণ খুঁজে পায়নি দু’র্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান টিম। জা’লিয়াতিসহ ভু’য়া তথ্য-উপাত্ত দেওয়ার অ’ভিযোগে দুদক দুটি মা’মলা করেছে, রাজস্ব ফাঁকি ও প্র’তারণার অ’ভিযোগে শুল্ক বিভাগও পৃথক আরেকটি মা’মলা করে। অনুসন্ধানে মুসা বিন শমসেরের নানা অনিয়ম আর চা’ঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

দুদকের একজন সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন,‘ মুসা একজন প্রতারক। বিদেশের ব্যাংক বলেন, বাংলাদেশে শত শত বিঘা জমি বলেন—কোনোটাই সত্য নয়। দুদকের একাধিক কর্মকর্তা মুসার দাবি করা সম্পদের তথ্য পেতে তন্নতন্ন করে খুঁজেও কিছু পাননি। নিজেকে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক দাবি করে প্র’চারণা চালিয়ে আনন্দ পায় সে।’

দুদকের আরেকজন কর্মকর্তা, যিনি মুসার মাম’লার অনুসন্ধান করছিলেন, তিনি বলেন, ‘এ লোকের সবই মি’থ্যাচার। মিথ্যা সম্পদ বিবরণী দেওয়ার পর অনুসন্ধানে গুলশানের বাড়ি এবং ফরিদপুরের কিছু সম্পদ ছাড়া আর কিছু পাওয়া যায়নি। মিথ্যা তথ্য দিয়ে মিডিয়ায় প্র’চারণা চালায় সে।’

জা’লিয়াতি করে গাড়ি রেজিস্ট্রেশন এবং শুল্ক ফাঁকির অ’ভিযোগে মামলা : ২০১৭ সালের ২১ মার্চ শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার অ’ভিযোগে ববি হাজ্জাজের বাবা মুসা বিন শমসেরের কোটি টাকা মূল্যের রেঞ্জ রোভার ব্র্যান্ডের দামি গাড়ি ধানমণ্ডির একটি বাড়ি থেকে আটক করেন শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। দুদক সূত্রে জানা গেছে, ওই গাড়িটি ভুয়া আমদানি দলিল দিয়ে এবং অন্য একটি নম্বর দিয়ে ভোলা থেকে রেজিস্ট্রেশন করা হয় আরেক ব্যক্তির নামে। রেজিস্ট্রেশনের সময় গাড়িটির রং সাদা থাকলেও উদ্ধার করা গাড়িটি ছিল কালো রঙের। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে এই গাড়ির শুল্ক পরিশোধের প্রমাণ হিসেবে যে বিল অব এন্ট্রি দেখানো হয়েছিল, সেটি ছিল ভু’য়া। এই জালিয়াতি নিয়ে অনুসন্ধান করে দু’র্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে মুসা বিন শমসেরের ভ’য়ংকর জা’লিয়াতির তথ্য। জাল রেকর্ডপত্রের মাধ্যমে বিক্রি নি’ষিদ্ধ গাড়ি রেজিস্ট্রেশন এবং শুল্ক ও অর্থপাচারের অ’ভিযোগে ২০১৯ সালের ১৭ অক্টোবর ডেটকো গ্রুপের চেয়ারম্যান মুসা বিন শমসের, তাঁর শ্যালক ফারুক-উজ-জামানসহ পাঁচজনের বি’রুদ্ধে মা’মলা করে দুদক। দুদকের পরিচালক মীর জয়নুল আবেদীন শিবলী বাদী হয়ে মামলাটি করেছিলেন। মা’মলার অ’ভিযোগে বলা হয়, কারনেট ডি পেসেজ সুবিধায় বিনা শুল্কে রেঞ্জ রোভার জিপ ব্রিটিশ পাসপোর্টধারী ফরিদ নাবির এনে বিক্রি নি’ষিদ্ধ হওয়ার পরও অটো ডিফাইন ও ফিয়াজ এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. ওয়াহিদুর রহমানের কাছে বিক্রি করেন। এরপর তা মুসা বিন শমসেরের কাছে বিক্রি করা হয়। মুসা বিন শমসের তাঁর শ্যালক মো. ফারুক-উজ-জামানের মাধ্যমে জাল ও ভু’য়া নথিপত্র তৈরি করে ভোলা বিআরটিএ অফিস থেকে দাখিল রেজিস্ট্রেশন নম্বর বের করে নিয়েছিলেন।’

সুইস ব্যাংকে কোনো টাকা কিংবা সম্পদ নেই। মি’থ্যা তথ্য দেওয়ায় দুদকের মা’মলা : দুদক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের জুন মাসে ‘বিজনেস এশিয়া’ নামের একটি সাময়িকীতে ববি হাজ্জাজের বাবা মুসাকে নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে ওই বছরের ৩ নভেম্বর তাঁর সম্পদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। দুদকের পরিচালক মীর জয়নুল আবেদীন শিবলীর নেতৃত্বে দুদকের একটি দল মুসার বি’রুদ্ধে অনুসন্ধান করে। অনুসন্ধানের শুরুতে সম্পদের বিবরণী দাখিল করতে দুদক থেকে নোটিশ পাঠানো হয়। ওই নোটিশের পর ২০১৫ সালের ৭ জুন মুসা একটি সম্পদের হিসাব পেশ করেন দুদক কার্যালয়ে। মুসার পাঠানো সম্পদের বিবরণীতে তিনি সুইস ব্যাংকে ১২ বিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৯৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা) ‘ফ্রিজ’ অবস্থায় রয়েছে বলে উল্লেখ করেন এবং সুইস ব্যাংকের ভল্টে ৯০ মিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৭০০ কোটি টাকা) দামের অলংকার জমা রয়েছে বলে উল্লেখ করেন। কিন্তু দুদকের অনুসন্ধানী দল বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে সুইস ব্যাংকে যোগাযোগ করে এ ধরনের সম্পদ রাখার তথ্য-প্রমাণ পায়নি। মুসাকে দুইবার দুদক কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও সুইস ব্যাংকের টাকা ও সম্পদ গুচ্ছিত রাখার পক্ষে কোনো দালিলিক প্রমাণ সরবরাহ করতে পারেনি। দুদকে জমা দেওয়া সম্পদ বিবরণীতে গাজীপুর ও সাভারে তাঁর নামে প্রায় এক হাজার ২০০ বিঘা সম্পত্তি থাকার কথা উল্লেখ করেন মুসা। কিন্তু দুদকের অনুসন্ধানে সাভার ও গাজীপুরে ভূমি রেজিস্ট্রি অফিসসহ বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করে মুসার কোনো জমির নথিপত্র পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় সম্পদের তথ্য গো’পন ও ভুয়া তথ্য দেওয়ার অ’ভিযোগে বিতর্কিত মুসার বি’রুদ্ধে রাজধানীর রমনা মডেল থানায় মা’মলা করেন দুদকের পরিচালক মীর জয়নুল আবেদীন শিবলী। ওই মামলায় ২০১৬ সালের মার্চে দুদকের তদ’ন্ত কর্মকর্তা মা’মলার চার্জশিটও আ’দালতে পাঠান।

মুসার বি’রুদ্ধে অনুসন্ধান করছিলেন দুদকের এমন একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘সুইস ব্যাংকে মুসার বিলিয়ন বিলিয়ন টাকার দাবি, সাভার-গাজীপুরে এক হাজার ২০০ বিঘা জমির মালিকানা দাবির সবই মিথ্যা। তিনি সম্পদ বিবরণীতে এসব সম্পদ থাকার কথা দাবি করলেও স্বপক্ষে কোনো তথ্য-প্রমাণ দেখাতে পারেননি। মি’থ্যা তথ্য দেওয়ায় প্র’তারণার অ’ভিযোগে তাঁর বি’রুদ্ধে মা’মলা হয়েছিল।

যু’দ্ধাপরাধে জড়িত মুসা বিন শমসের : একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদারদের ‘ঘনিষ্ঠ’ ছিলেন ববি হাজ্জাজের বাবা মুসা বিন শমসের। ফরিদপুর জেলায় পাকিস্তানি হানাদারদের হয়ে মুক্তিযু’দ্ধের বি’রুদ্ধে কাজ করেন তিনি। নিজেকে প্রিন্স মুসা হিসেবে ধনকুবের দাবি করলেও ফরিদপুরের মানুষ তাঁকে চেনে নুলা মুসা ওরফে রাজাকার মুসা হিসেবে। ২০১০ সালে যু’দ্ধা’পরাধের বিচার শুরুর পর বিভিন্ন পর্যায় থেকে মুসা বিন শমসেরের বি’চারের দাবি ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ত’দন্তের কথা বলা হলেও অজ্ঞাত কারণে এর অগ্রগতি নেই। ফরিদপুর জেলার মুক্তিযো’দ্ধারা বলছেন, মুসা একজন চিহ্নিত রাজাকার। তিনি মুক্তিযু’দ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদারদের হয়ে কাজ করেছেন। ফরিদপুরের রথখোলার বাসিন্দা মুক্তিযো’দ্ধা বাবুনাথ বলেন, ‘মুসারে আমি লাত্থি দিয়া গর্তের মধ্যে ফেলায় দিছিলাম স্বাধীনতার পরের দিন। ফরিদপুরে মুসার বাড়ির লগে সেই গর্তটা এখনো আছে। কাছের বেশ কয়েকজন আমাকে নি’ষেধ করত যেন মুসার বি’রুদ্ধে কথা না বলি। তবে আমি জীবনের ভ’য় করি না। যারা জানতে চায় তাদের আমি সব সময় বলি, বলব।’ উৎস : কালের কন্ঠ

ad

পাঠকের মতামত