327262

কালেমা পড়ে ছেলে শিপলুর বুকে ঢলে পড়েন কামরান

কামরানবুকে অ’সহ্য ব্য’থা। মৃত্যু য’ন্ত্রণায় ছ’টফ’ট করছিলেন কামরান। এরপরও ছিলেন ধীর, স্থির। পাশে থাকা বড় ছেলে ডা. শিপলুকে বললেন- ‘বাবা তুমি আমাকে ধরো। আমার ব্য’থা বাড়ছে।’ এ কথা শুনেই শিপলু ডাক্তার কল করলেন। পিতা কামরানের মাথা বুকে টেনে নিলেন। এরই মধ্যে ডাক্তাররা এসে গেছেন। তারা আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন। কামরানের অবস্থা ভালো না। হাল ছাড়ছিলেন না ডাক্তাররা। এভাবে কিছু সময় অতিবাহিত হলো। ছেলের বুকে মাথা রেখে ছ’টফ’ট করছিলেন তিনি। এক পর্যায়ে ছেলেকে বললেন- ‘বাবা কালেমাটা পড়।’ এমন সময় শিপলু কালেমা পড়া শুরু করলেন। ছেলের সঙ্গে সঙ্গে কামরানও স্পষ্ট করে কালেমা পড়লেন। পড়া শেষ হতেই মাথা হেলিয়ে দিলেন ছেলের বুকে। কোনো সাড়া-শব্দ নেই। শিপলু ডাকছেন- ‘আব্বা, আব্বা।’ সাড়া নেই। নিজে ডাক্তার শিপলু। বুঝতে বাকি রইলো না পিতা কামরান আর নেই। দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছেন। হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন। নিজেকে সংবরণ করতে পারছিলেন না। ডাক্তাররা তাকে ধরাধরি করে সরিয়ে দেন। একটু দূর থেকে এসব দৃশ্য দেখছিলেন সিলেটবাসীর প্রিয় নেতা বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের ছোট ভাই এনাম আহমদ। তিনি বিশ্বাস করতে পারছিলেন না- কামরান ভাই নেই, মা’রা গেছেন। নিথর দাঁড়িয়ে রইলেন বেডের এক পাশে।

কামরানের মৃত্যু মুহূর্তের কথাগুলো গতকাল বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন এনাম। জানালেন- মধ্যরাতে হার্ট অ্যাটাক হলো কামরানের। বুকে প্রচণ্ড ব্য’থা শুরু হলো। কামরান নিজেও শিপলুকে জানালেন বুকে ব্য’থার কথা। শিপলু কল করলেন ডাক্তার। উপস্থিত ডাক্তাররাও কার্ডিওলজির বড় ডাক্তার কল করলেন। অন্য ডাক্তাররা এসে কাজ শুরু করে দিলেন। তারা চিকিৎসাসেবা দিচ্ছিলেন। রাত ১২টার দিকে কার্ডিওলজির বড় ডাক্তার এলেন। এরই মধ্যে কামরানের ইসিজি করানো হলো। পরীক্ষার জন্য র’ক্ত নেয়া হলো। ইজিসি দেখে ডাক্তার বললেন- ‘পরিস্থিতি ভালো না। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’ এই বলে তারা চিকিৎসা দেয়া শুরু করেন। ই’নজেকশন পুশ করেন। প্রায় আধা ঘণ্টা কামরান কিছুটা শান্তি অনুভব করেন। শিপলু জানতে চাইলো- ‘আব্বা বুকে ব্য’থা আছে কিনা?’ কামরান উত্তরে বললেন- ‘না এখন একটু ভালো লাগছে। আমি একটু ঘুমাবো।’ এ কথা বলেই ঘুমিয়ে গেলেন কামরান। এনাম জানান- ‘এরপর আমি ও শিপলু সিদ্ধান্ত নিলাম, আজ রাতে হাসপাতাল থেকে সরবো না। শিপলুও বললো সে যাবে না। হাসপাতালেই থাকবে। আমরা দু’জন হাসপাতালে থেকে গেলাম। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কামরানের বেডের পাশে একটি চেয়ার দিলো। আমরা সেখানেই বসতাম। কিছু সময় শিপলু আর কিছু সময় আমি। এভাবে আমরা বসে রাত কাটাতে লাগলাম।’ এনাম বলেন- ‘রাত ১টার দিকে শিপলু এসে বললো- চাচা আপনি একটু রেস্ট নিন। আমি পাশে বসে থাকবো।’ শিপলুকে পাশে রেখে হাসপাতালের দরোজার বাইরে বসে থাকেন এনাম। ওখান থেকে তিনি দেখছিলেন বড় ভাই কামরানকে। ঘুমাচ্ছেন। কোনো সমস্যা হচ্ছে না। রাত দুইটার পর হঠাৎ দেখেন শিপলু তাড়াহুড়ো করছে। কয়েকজন ডাক্তার এসেছেন। তারা কামরানকে পরীক্ষা করছেন। আর ছ’টফ’ট করছেন কামরান। বুকে অসহ্য ব্যথায় ছ’টফ’ট করছেন কামরান। এনাম জানান- ‘কামরান ভাইয়ের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর শিপলু বাইরে গিয়ে অঝোরে কাঁদছিলো। এমন সময় আমি কামরান ভাইয়ের পাশে ছিলাম। ডাক্তাররা সব পরীক্ষার পর বুকে চাপ দেয়ার মেশিন নিয়ে আসলেন। দুই হাতে মেশিন নিয়ে বুকে চাপ দিলেন। এ সময় কিছুটা কেঁপে উঠলো কামরান ভাইয়ের শ’রীর। আমি একটু চমকে উঠলাম। হয়তো বেঁ’চে গেছেন কামরান ভাই। কিন্তু না, আগের মতই নীরব, নিস্তব্ধ দে’হ। সব পরীক্ষা শেষ করার পর ডাক্তাররা বললেন- কামরান ভাই আর নেই। আর ঠিক থাকতে পারলাম না। নিজেও কেঁদে ফেললাম।’

এনাম বললেন- আমরা বাবার আদর পাইনি। কিন্তু বড় ভাই কামরানের কাছে সব সময় সেই আদর পেয়েছি। কখনো বাবার শূন্যতা অনুভব করেনি। যখন যে আবদার করেছি, সব পেয়েছি। একটু কাজ হলেই ফোন করতেন। বলতেন- ‘এনাম, ভাই একটু আয় তো। আমিও ছুটে আসতাম।’ এনাম জানান- সিএমএইচে যে ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলেন কামরান সেই ওয়ার্ডে প্রতিদিনই রোগী মা’রা যেতো। কামরান ভাই নিজের চোখে দেখছেন মানুষ মা’রা যাচ্ছে। এতে তিনি বিচলিত হয়ে উঠেছিলেন। রোববার মা’রা যান তার বেডের পাশের এক রোগী। এতে অনেকটা ভয় পেয়ে যান কামরান ভাই। শিপলুকে বলেছিলেন- ‘আমাকে অন্য কোথাও নেয়ার ব্যবস্থা করো। এখানে মৃত্যু দেখতে ভালো লাগছে না।’ শিপলু বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথাও বলছিলেন। কিন্তু সরানো যাচ্ছিলো না। কারণ সিএমএইচের আইসিইউতে যে সাপোর্ট ছিল সেটি কেবিন কিংবা অন্য কোনো ওয়ার্ডে ছিল না। ফলে তাকে সরানো সম্ভব হয়নি। তবে ডাক্তাররা বলেছিলেন- একটু সুস্থ হলেই তারা কেবিনে দিয়ে দেবেন। কিন্তু সুস্থ হওয়ার আগেই মৃত্যুকে আলিঙ্গন করলেন কামরান। এনাম জানান, সিএমএইচে ভর্তির পর এক মুহূর্তের জন্য কামরান ভাইয়ের অক্সিজেন সাপোর্ট সরানো সম্ভব হয়নি। খাওয়ার সময়ও তার অক্সিজেন লাগানো থাকতো। অক্সিজেন মাস্ক লাগানোর কারণে ৯৬ ভাগ অক্সিজেন সাপোর্ট পেতেন তিনি। কিন্তু মাস্ক সরিয়ে নিলেই কমে যেতো। এ কারণে তাকে অক্সিজেন সাপোর্টেই রেখেছিলেন ডাক্তাররা। সূত্র: মানবজমিন।

ad

পাঠকের মতামত