323169

আইভারমেকটিন ঔষধটির একটা ট্রায়াল দেওয়া জরুরি’ বাংলাদেশেই সেটা হতে পারে

আবদুন নূর তুষার : আইভারমেকটিন নিয়ে বিভিন্ন দেশে গবেষণা হয়েছে। হচ্ছে। এই ঔষধটির ভাইরাস বিরোধী ক্ষমতার বিষয়ে আগে থেকেই গবেষকরা জানতেন।

এখন সারা দুনিয়াতেই যতো ঔষধের ভাইরাসবিরোধী ক্ষমতা আছে, সবগুলোকেই নানাভাবে পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ ভার্সিটির একটি গবেষণায় শরীরের বাইরে ল্যাবের পরিবেশে এটা কোভিড ভাইরাসের বংশবিস্তার রোধ করে বলে দেখা গেলেও এটা মানবশরীরে ব্যবহারের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে আসা যায়নি।

কারণ যে পরিমাণ আইভারমেকটিন দিয়ে এটা করা হয়েছে, সেটা মানব শরীরে বায়োঅ্যাভেইলেবিলিটি বা কোষপর্যায়ে প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে অনেকগুন বেশি পরিমাণে খেতে হবে।

সহজ করে বললে.. ল্যাবে সরাসরি ঔষধটা ভাইরাস আ’ক্রান্ত কোষের বা সেললাইনের উপরে পরীক্ষা করা যায়। মানুষের শরীরে ফার্মাকোকাইনেটিক্স , ফার্মাকোডাইনামিক্স অনুযায়ী ঔষধ কাজ করে। লিভার, কিডনি, থেকে শুরু করে পেটের পি এইচ বহু কিছুর উপরে ঔষধের বায়োঅ্যাভেইলেবিলিটি নির্ভর করে। তাই যে পরিমাণে আমরা ঔষধ খাই তার সবটুকু আমরা কোষের ভেতর পাই না। গবেষণা অনুযায়ী আইভারমেকটিনের কোষপর্যায়ে যে পরিমাণ প্রয়োজন সেটা পেতে হলে বহুগুন বেশি আইভারমেকটিন দিতে হবে। যেটা মানবশরীরের জন্য নির্ধারিত নিরাপদ মাত্রার অনেক বেশি।

ফাইলেরিয়া ও স্ট্রংগিলয়ডিয়াসিস, স্ক্যাবিস প্রতিরোধে এটা এমনিতেই ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ পরজীবির বিরুদ্ধে এটার এমনিতেই ব্যবহার আছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এই ঔষধটি নিয়ে আরো গবেষণার প্রয়োজন আছে বলে সম্মত হয়েছে। অনেকে বলছেন, এই ঔষধটি ইম্যুনোমডুলেটর হতে পারে। অর্থাৎ কম ডোজেও , অন্য ঔষধের সাথে যৌথভাবে কাজ করে শরীরের রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতায় প্রভাব রেখে ভাইরাস রোধে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। এটা নিয়ে গবেষণা হতে পারে। ইম্যুনোমডুলেশন করে কিনা সেটা নিশ্চিতভাবে জানার জন্য। এবার বাংলাদেশের প্রসঙ্গে আসি। বাংলাদেশের রিসার্চটি ক্রিটিক্যাল রোগীদের উপরে হয়নি। ফলে আশঙ্কাজনক রোগীদের ওপরে এর কোনো কার্যকারিতা প্রমাণিত না। এটা জীবন বাঁচাচ্ছে বা রোগ সারাচ্ছে কিনা এটা নিশ্চিতভাবে বলার মতো কোনো গবেষণা এটি নয়। এটার বিষয়ে আমি সম্মান ফাউন্ডেশনের ডা. রুবাইয়ুল মোর্শেদ ভাইকে ফেসবুকে মেসেজ দিয়ে জানতে চাইলে, তিনি আমাকে কোনো রিসার্চ পেপার বা তথ্য দেননি। সংবাদমাধ্যমে জেনেছি যে, এই পরীক্ষায় কোনো কন্ট্রোল গ্রুপ ছিলো না। সিলেকশন র‌্যান্ডম ছিলো না। স্টাডিটা সিঙ্গেল বা ডাবল ব্লাইন্ড ছিলো না। এক্সক্লুশন ও ইনক্লুশন ক্রাইটেরিয়াও স্বচ্ছ না। প্লাসেবো বিষয়ে কোন তথ্য নাই।

মূলত টেস্ট পজিটিভ হলেই তাদের ওখানে কর্মরত চিকিৎসকদের তারা এটা দিয়েছেন। সেখানে অধিকাংশের বয়স ৫০ এর নীচে। তাই এটা যে সত্যিই কাজ করেছে সেটা বলার মতো কোনো গবেষণা এটা নয়। এই গবেষণা থেকে নিশ্চিত করে এই আইভারমেকটিন ও ডক্সিসাইক্লিন নিয়ে কোনো মন্তব্য করা সম্ভব না। কারণ গবেষণার বেসিক কিছু বিষয় মেনে এই গবেষণাটি হয়েছে কিনা সেটাই এখন প্রশ্নের বিষয়। একটা গবেষণার মান সম্পর্কে না জেনে, নিশ্চিত না হয়ে, গবেষণাপত্রটি সকলের হাতে না দিয়ে গণমাধ্যমে সেটা দিয়ে দেয়া কতোটুকু পেশাদারী সেটা নিয়ে প্রশ্ন করা যেতে পারে। যে যা দাবি করে সেটাই যদি গণমাধ্যমে চলে আসে আর বলা হয় বাংলাদেশের চিকিৎসক/গবেষক যুগান্তকারী গবেষণা করেছেন সেটা বুদ্ধিমানের কাজ না।

মানুষকে আশা দেয়া ভালো। সেটা অবশ্যই সলিড/সঠিক আশা হতে হবে। আজ আশা দিয়ে কাল কথা ফিরিয়ে নিলে, বারবার এরকম আশা নিরাশার নাগরদোলায় দর্শক শ্রোতা-পাঠককে ওঠানামা করালে, মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তারা সঠিক তথ্য পেলে প্রস্তুতি নিতে পারে। সিদ্ধান্ত নিতে পারে। যার যার সাধ্য অনুযায়ী প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা নিতে পারে। আর এরকম আজ এককাল আরেক বললে, মানুষ হতাশ হয়ে যায়। এর মানসিক অভিঘাত ভালো না। এটা তো লাভস মি লাভস মি নট খেলা না যে ইয়েস নো ইয়েস নো বলে আংগুল ধরলাম।

দুদিন পরপর ঔষধ এসে গেছে , ঔষধ এসে গেছে না বলে পত্রিকাগুলো ২৯ দিন পত্রিকা প্রকাশ করেন আর ৩০ তম দিনে পাঠককে একটা সাবান পাঠান। তাতে অনেক উপকার হবে। দয়া করে কোনো কিছুকে যুগান্তকারী বলার আগে একটু জেনে নেন। আইভারমেকটিন – উচ্চারণ হবে আইভাহমেকটিন… এটা হয়তো কাজ করবে কিন্তু সেটা এখনো প্রমাণিত নয়। তবে কুইনিন এর চেয়ে এটার পক্ষে যুক্তি অনেক বেশি। রেমডেসিভির কমপ্যাশনেট ব্যবহার করে ৫৫০০০ টাকা খরচ করা গেলে, আইভারমেকটিনের কমপ্যাশনেট ব্যবহার করা যেতেই পারে। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি এই ঔষধটি নিয়ে দ্রুত একটা ট্রায়াল দেয়া জরুরি। বাংলাদেশেই সেটা হতে পারে। তবে এটা দিয়ে কোভিড-১৯ রোগ সারার বিষয়ে এখনো কোনো প্রমাণ নেই। ফেসবুক থেকে

ad

পাঠকের মতামত