321029

করোনা সন্দেহে আপন ভাইসহ গ্রামের কেউই আবদুল হাইয়ের লা’শ নামাতে দিল না

জয়নাল আবেদীনের ফেসবুক থেকে : আবদুল হাই (৬৫) অসুস্থ হয়ে মা’রা গেছেন। তার ম’রদে’হ নিয়ে বাড়িতে ঢুকলো অ্যাম্বুলেন্স। তখন রাত ১১টা। অ্যাম্বুলেন্সের আওয়াজ শুনে হাইয়ের আপন ভাই, চাচাতো-জেঠাতো ভাইয়েরা বেরিয়ে আসেন।

প্রতিবেশীরাও হাজির। না, তারা কেউ লাশ নামাতে আসেনি। এসেছে যেন কেউ লা’শটি নামাতে না পারে! সবাই একবাক্যে বলে দিলো, আবদুল হাই করোনায় মা’রা গেছে। তার লা’শ গ্রামে দাফন করা যাবে না।

হাইয়ের স্ত্রী ফিরোজা এবং ছেলে শাহজাহান বারবার চেষ্টা করেও বোঝাতে পারেন না। লা’শ নামাতে উদ্যত হলে উপস্থিত লোকজন তাদের ওপর চড়াও। ফিরোজা কান্নাকাটি শুরু করলেন। আকুতি জানালেন, গ্রামের কবরস্থানে জায়গা না হলে নিজের ভিটেমাটিতে স্বামীকে কবর দেবেন।

ফিরোজার কা’ন্নায় কারও মন গললো না। উল্টো উত্তেজিত লোকজন মা-ছেলেকে এসে মারপিট শুরু করলো। এই ‘বীরপুরুষের’ দল গ্রাম রক্ষা করতে চায়। সাফ জানিয়ে দেয়, ম’রদে’হ এখানে দাফন হবে না!

মা-ছেলে অ্যাম্বুলেন্স ঘুরিয়ে চলে যান আরেক গ্রামে আত্মীয়ের বাড়ি। সেখানেও প্রত্যাখাত তারা। এভাবে রাত ২টা বেজে গেল। একটি ভ্যানগাড়ি জোগাড় করেন শাহজাহান। অ্যাম্বুলেন্স থেকে বাবার লা’শ নামিয়ে ভ্যানে তোলেন। ছেলে ভ্যান টানছেন, বাবার ম’রদেহে’র পাশে মা বসে আছেন।

ঘটনাটি ময়মনসিংহের গৌরীপুরে। আবদুল হাইয়ের বাড়ি পৌরসভার সাতুতি গ্রামে। নানা গ্রাম ঘুরে হাইয়ের ম’রদে’হ নিয়ে ভ্যানটি থামে পৌরসদরের একটি ধান মহালের সামনে।

গভীর রাতে থানায় এ খবর গেলে পু’লি’শ ছুটে আসেন। তারা আবদুল হাইয়ের মরদেহ নিয়ে সাতুতি গ্রামে যান। ওই গ্রামেই ম’রদে’হ দাফনের ব্যবস্থা করেন।

আমি আসলে বুঝতে পারছি না কোন দেশে বসবাস করছি! একবার চিন্তা করুন, যদি সত্যিই আবদুল হাই করোনার রোগী হতেন, সত্যিই করোনায় মা’রা যেতেন, তাহলে কী অবস্থা হতো!

স্বামীর ম’রদে’হ নিয়ে একজন স্ত্রীর কিংবা বাবার ম’রদে’হ নিয়ে সন্তানের রাতভর ছুটোছুটির এই ছবি কল্পনা করলেই শিউরে উঠি। সাতুতি গ্রামের এই কা’পুরু’ষেরা কোনোদিন ম’রবে না? ইতিহাস সাক্ষি থাকবে।

এর আগে গ্রামের খাটিয়া ব্যবহারে বাধা দেওয়ার ঘটনাও আমরা শুনেছিলাম। সামনে আরও কত ভ’য়ংক’র অ’মানবিক’তা অপেক্ষা করছে কে জানে! করোনায় আ’ক্রা’ন্ত ব্যক্তি বা পরিবার কী দেশ ও জাতির এক নম্বর শ’ত্রু’তে পরিণত হলো?

লেখা ও ছবি জাতীয় দৈনিক সমকালের সাংবাদিক জয়নাল আবেদীনের টাইমলাইন থেকে নেওয়া

ad

পাঠকের মতামত