
সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের মরভূমির ফল ‘সাম্মাম’ এখন ছাতকে!
নিউজে ডেস্ক।। মরুপ্রধান দেশে বেশ জনপ্রিয় ফল সাম্মাম। সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যে প্রবাসীদের মাধ্যমে পরিচিত এ ফলটির চাষাবাদ এখন হচ্ছে সুনামগঞ্জের ছাতকে। দেশীয় বাঙ্গির মতো দেখতে সাম্মাম সাধারণত দুই ধরনের হয়।
একটির আছে হলুদ মসৃণ খোসা আর অন্যটির খোসার অংশ খসখসে। হলুদ রঙের এ ফলটি দেশে নতুন, খেতে খুবই মিষ্টি এবং রসালো হওয়ায় অনেকেই কিনছেন শখের বশে। শুধু তাই নয়, নতুন ফল সম্পর্কে জানতে অনেকেই ভিড় করছেন ক্ষেতে।
চার বিঘা জমিতে গত ২০ ফেব্রুয়ারি চাষ শুরু করেন উপজেলার কালারুকা ইউনিয়নের কালারুকা গ্রামের সৌখিন চাষি রিয়াজ উদ্দিন, চানপুর গ্রামের বুরহান উদ্দিন ও রাজাপুর গ্রামের এনাম। চাষী রিয়াজ আহমদ জানান, সাম্মাম ফলের রোগবালাই তেমন নেই, গাছে খুব সামান্য সার ও কীটনাশক দিতে হয়। আর এ ফল গাছের সঠিক চাষাবাদ এবং নিয়মিত ফুলের পরাগায়ন হলে একেকটি গাছ থেকে বেশ কয়েকটি ফল উৎপাদন করা সম্ভব। তবে ফলের ওজনে লতা ছিঁড়ে পড়ার ভয়ে একটু বড় হওয়ার পরপরই ফলগুলো ব্যাগিং করতে হয়।
বুরহান উদ্দিন জানান, উপজেলা কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়ে ছোট পরিসরে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ শুরু করেছেন। তবে আগামীতে বড় পরিসরে চাষ করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। তিনি আরও জানান, সাম্মাম চাষাবাদে বিঘা প্রতি তাদের খরচ হয়েছে প্রায় ৭০ হাজার টাকা। এ ফলের বর্তমান পাইকারি বাজার ধর কেজি প্রতি ৬০ টাকা। একেকটি ফল এক কেজি থেকে তিন কেজি পর্যন্ত হয়েছে। এই চার প্রজাতির মধ্যে একটির রং পুরো হলুদ, দুটির রং সবুজ, ত্বক জালিকার মতো। অপরটি ডোরাকাটা। এর মধ্যে ডোরাকাটার মতো ফলটির স্বাদ পাকা পেঁপের মতো। অন্যগুলো সাদা ও সবুজের মিশেল। সব কটিই সুস্বাদু ও সুগন্ধযুক্ত।
ছাতক উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তৌফিক হোসেন খানা জানান, সাম্মাম ফলটি মূলত মরুর দেশগুলোতে বেশি চাষ হয়। বাংলাদেশে সৌদি আরবসহ অন্য মরভূমির দেশ থেকেই এ ফলের বীজ আনা হয়েছে। সুনামগঞ্জের মধ্যে ছাতকে শুধু এই তিন যুবকই সাম্মাম ফলের চাষ করেছেন। ফলন ভালো হওয়ায় বেশ লাভবান হবেন তারা। কারণ দেশি ফলের চেয়ে সাম্মামের দাম একটু বেশি, উৎপাদন খরচ কম। মাচায় চাষ করতে হয় সাম্মাম। পোকামাকড় ও রোগবালাইয়ের আক্রমণও কম।
তিনি জানান, এ ফলে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিটা ক্যারোটিন রয়েছে, যা কমলার চেয়ে ২০ ভাগ বেশি। এ ছাড়া প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সিও আছে এই ফলে। আরও আছে পটাশিয়াম, ফলিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, জিঙ্ক, কপার, ম্যাঙ্গানিজ, ম্যালেনিয়াম প্রভৃতি। এ ফল অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। ছাতকের আবহাওয়া সাম্মাম চাষের জন্য যথেষ্ট অনুকূল।