319852

প্রণোদনা চাই না, রাষ্ট্র যেন আমার সন্তানের দায়িত্ব নেয়

‘আমি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জরুরী বিভাগে কর্মরত একজন মেডিকেল অফিসার। আমার কোভিড টেস্টের রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে।

আমার পূর্বে জরুরি বিভাগের আরও ২ জন মেডিকেল অফিসার, ১ জন আনসার সদস্য পজিটিভ হয়েছে। বাকি ৭ জন মেডিকেল অফিসারের রিপোর্ট আসবে হয়তো রাতে। এখন পর্যন্ত কোন লক্ষণ নেই।

আমি একজন হাঁপানি ও উচ্চ রক্তচাপের রোগী। আমার ২ বছরের সন্তান রয়েছে। রাষ্ট্রের নিকট প্রণোদনা চাই না। বেঁচে থাকলে আবার চিকিৎসা সেবা দিতে যাব কিন্ত খারাপ কিছু হয়ে গেলে রাষ্ট্র যেন আমার সন্তানের দায়িত্ব নেয় আমার সকল সহকর্মীদের নিকট এই আবেদন। কারণ আমি সন্তানের জন্য কিছু করে রাখতে পারিনি। চিকিৎসা সেবা দিতে যেয়ে আজ আমি আক্রান্ত। আমার পরিবার, শিশু সন্তান হয়তো আক্রান্ত হতে পারে। সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন।’

নিজের করোনা পরীক্ষায় পজেটিভ জানতে পেরে ফেসবুকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. বিলাস কুমার সাহা এই আবেগঘন স্ট্যাটাস দেন। স্ট্যাটাসটি তার সহকর্মীরা শেয়ার করছেন।

আক্রান্ত চিকিৎসকের সহকর্মী ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডাক্তার সৈয়দ হাসানুল ইসলাম বলেন, বিপদ জেনেও আমরা সেবা দিয়ে যাচ্ছি। দিয়ে যাবো। রোগীদের প্রতি আমাদে অনুরোধ তারা যেনো চিকিৎসা সেবা নিতে এসে কোন তথ্য গোপন না করে।’

জানা যায়, ময়য়মনসিংহ বিভাগের চার জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে ২৩৪ জন। আক্রান্তদের মধ্যে ৪৭ জন চিকিৎসকসহ ৫৮ শতাংশই স্বাস্থ্যকর্মী। শুধু ময়মনসিংহ জেলায় ৯০ জন স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালের ৩৩ জন চিকিৎসক, ১৬ জন নার্স ও ২৩ জন স্টাফ নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। একের পর চিকিৎসক আক্রান্ত হওয়া এবং অন্য চিকিৎসকরা কোয়ারেন্টিনে চলে যাওয়ায় এ হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট দেখা দিয়েছে। এতে চিকিৎসক স্বল্পতায় এক হাজার শয্যার বেডের এ হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৬ এপ্রিল শেরপুর থেকে আসা এক অন্তঃসত্ত্বা ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডে ভর্তি হন। ১৭ এপ্রিল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ওই নারীর ছেলেসন্তানের জন্ম হয়। তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ১৮ এপ্রিল ভোরে তাকে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) স্থানান্তর করা হয়। ১৯ এপ্রিল তার নমুনা হাসপাতালের পিসিআর ল্যাবে পাঠানো হয় এবং পরদিন তার নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ে। এর আগে মেডিসিন বিভাগে এক রোগী ও কিডনি ডায়ালাইসিস ইউনিটে দুজন রোগীর নমুনা পরীক্ষায় নভেল করোনাভাইরাস পাওয়া যায়। এসব রোগী তথ্য গোপন করে হাসপাতালে ভর্তি হন। এরপর নমুনা পরীক্ষায় এসব রোগীর সেবাদানকারী বেশ কয়েকজন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী নভেল করোনাভাইরাস আক্রান্ত বলে শনাক্ত হন। এর পর থেকে হাসপাতালজুড়ে কর্মরত চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সেবা নিতে আসা রোগীরা তথ্য গোপন করছেন, বা তারা অনেকেই নিজেরাও জানছেন না যে তারা করোনা আক্রান্ত। তারা হাসপাতালে সেবা নিতে আসছেন আর এর সঙ্গে ছড়াচ্ছেন করোনা। আর এতে বিপদের মুখে পড়ছেন চিকিৎসকরা।

এদিকে, করোনা রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন জেলার দুটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৬ চিকিৎসকসহ ১৫জন।গফরগাও উপজেলা স্বাস্থকমপ্লেক্স হয়েছে লকডাউন।

ময়মনসিংহ স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক ডা. মো. আবুল কাশেম বলেন, ‘কোন একজনের যদি করোনা পজেটিভ আসে, তাহলে কিন্তু তার আসেপাশের সবাইকেই টেস্ট করাতে হয়। এতে আতঙ্ক এবং বিপদের শঙ্কা বেড়ে যায়। সকল শঙ্কাকে মোকাবেলা করেই আমাদের কাজ করতে হবে।’

ময়মনসিংহ শাখার বিএমএ সভাপতি ডা. মতিউর রহমান ভূঁইয়া বলেন, চিকিৎসকদের পিপিই এবং মাস্ক সরবরাহ বাড়াতে হবে। এছাড়া জনগণকেও সচেতন করতে হবে তারা যেন তাদের কোন ধরণের তথ্য গোপন না করে।

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) ময়মনসিংহ বিভাগীয় করোনা মনিটরিং সেলের সমন্বয়ক ডা. এইচএ গোলন্দাজ বলেন, মানহীন সুরক্ষাসামগ্রী ব্যবহার করে স্বাস্থ্যকর্মীরা আক্রান্ত হচ্ছেন। অবিলম্বে সংশ্লিষ্টদের তা বন্ধ করতে হবে। মানসম্পন্ন পিপিইসহ অন্যান্য সুরক্ষাসামগ্রী চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সরবরাহ করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

ad

পাঠকের মতামত