318827

সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রবাসীদের ভিন্নরকম সঙ্কট

প্রবাস ডেস্ক।। করোনার কারণে সংযুক্ত আরব আমিরাতে থাকা অনেক বৈধ বাংলাদেশি কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। প্রায় এক মাস ধরে তারা বেকার। কাজ নেই তো আয় রোজগারও নেই। আগের আয় থেকে যাদের বাড়ি পাঠিয়ে অল্প-বিস্তর সঞ্চয় ছিল সেটাও ফুরিয়ে আসছে। আর অবৈধদের তো আগাগোড়াই সমান। তারা বরাবরই অর্থকষ্টে! করোনায় আর বাড়তি কি? তবে দেশটিতে বৈধ কিংবা অবৈধ বাংলাদেশিরা করোনা বা অর্থ কিংবা খাদ্যের সংস্থান নিয়ে যতটা না সঙ্কটে তার চেয়ে বেশি বিব্রত এবং বিরক্ত মানবপাচারকারী চক্রের মাধ্যমে ওমান থেকে প্রতিনিয়ত আমিরাতে অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশিদের আচরণে। এরা আমিরাতে থাকা বাংলাদেশীদের জন্য মানসিক যন্ত্রণার কারণ হওয়া ছাড়াও দেশের ভাবমূর্তিতে আঘাত হানছে। করোনার এই কঠিন সময়েও এদের অনুপ্রবেশ থেমে নেই। যদিও অল্প ক’টি গন্তব্য ছাড়া আমিরাত ভিত্তিক সব কমার্শিয়াল ফ্লাইট বন্ধ।

বাংলাদেশ কমিউনিটি সূত্রের খবর, ওমান থেকে পাচারকারী চক্রের সহায়তায় বাংলাদেশিরা আমিরাতে ঢুকে ফ্রি বা বিনা খরচে সহজে দেশে ফিরতে। কারণ ওমানে অবৈধরা ধরা পড়লে জেল জরিমানার মুখোমুখি হওয়া ছাড়াও তাদের নিজ খরচে দেশে ফিরতে হয়। যেটা আমিরাতে প্রয়োজন হয় না। আমিরাত সরকার প্রতি মাসে শ দেড়শ বাংলাদেশিকে জেল থেকে মুক্তি দেয় এবং রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় ঢাকায় ফেরত পাঠায়। এটা তাদের রুটিন বিষয়। ওমানের অবৈধ বাংলাদেশিরা সেই সূযোগটি নিতে আমিরাত বর্ডারে ধরা দেয়। আমিরাতের বাংলাদেশ মিশন জানিয়েছে, করোনার কারণে ঢাকার সঙ্গে দেশটির কমার্শিয়াল ফ্লাইট বন্ধ থাকায় জেলে থাকা বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানো আপাতত বন্ধ রয়েছে। তবে স্পেশাল ফ্লাইটে হলেও আমিরাত সরকার তাদের ঢাকায় পাঠাতে পারে যে কোনো সময়। যদিও বাংলাদেশ তাদের গ্রহণে এখনও প্রস্তুত নয়। উল্লেখ্য,

সম্পদে সমৃদ্ধ আমিরাত একটি আধুনিক তেল রপ্তানীকারক রাষ্ট্র, যার অর্থনীতি খুবই বৈচিত্র্যপূর্ণ; বিশেষত দুবাই হল পর্যটন, খুচরা বিক্রয় এবং আর্থিক যোগানের একটি বিশ্বকেন্দ্র। এখানে পৃথিবীর সর্বোচ্চ ইমারত এবং সর্ববৃহৎ মনুষ্য-নির্মিত সমুদ্রবন্দর রয়েছে। দুনিয়ার সঙ্গে যোগাযোগে দূবাই তথা আমিরাত অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট পয়েন্ট। দেশটিতে করোনার কারণে হাজার হাজার বিদেশী আটকা পড়ে আছেন। ফ্লাইট বন্ধ থাকায় তারা ফিরতে পারছেন না। সেই তালিকায় বাংলাদেশিও রয়েছেন তবে সংখ্যায় খুব বেশি নয়।

করোনা, ৫ বাংলাদেশির মৃ’ত্যু, আ’ক্রা’ন্ত অর্ধশতাধিক:  আমিরাতে করোনায় মোট আক্রান্ত ৮ হাজারের অধিক। মারা গেছেন ৫২ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন দেশি বিদেশি এমন সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়, দেড় হাজারের ওপরে। দেশটিতে এ পর্যন্ত ৫ জন বাংলাদশি মারা যাওয়ার খবর মিলেছে, আক্রান্ত অর্ধ শতাধিক। কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে, চিকিতসায় এখন পুরোপুরি সুস্থ এমন কাউকে পাওয়া যায়নি।

খাদ্য সংকট আছে তবে…: বাংলাদেশ মিশন এবং কমিউনিটি মিলে খাদ্য সংকটে থাকা বাংলাদেশিদের খাবার দিচ্ছেন। প্রায় ১৫ দিন ধরে এ কার্যক্রম চলছে। আমিরাতের রাজধানী আবুধাবিতে বাংলাদেশ দূতাবাস ছাড়াও দূবাইতে একটি কনস্যুলেট রয়েছে। দুটি মিশন মিলে প্রায় ৫ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশিকে খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে। সমান সংখ্যক বাংলাদেশি সহায়তা পেয়েছে কমিউনিটির তরফে। কিন্তু এখনও চাহিদা আছে। ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত মিজানুর রহমানের মতে, যত সামান্য ত্রাণ একেক জন যার পেয়েছে তাতে হয়ত ১২-১৫ দিন যাবে বা গেছে। যারা ১৫ দিন আগে পেয়েছে এখন আবার চাইবে। তবে রাষ্ট্রদূত একটা বিষয় স্বীকার করেন- আমিরাতে থাকা লোকজন বাধ্য না হলে খাবার চায় না। ফলে যারা একান্ত বিপদে তারা চাইবে, এদের কিছু একটা দিতে হবে।

অবৈধদের প্রতি সদয় হয়েছে আমিরাত, কিন্তু তাতেও সংকট কাটছে না : আমিরাতে পুরোপুরিভাবে লকডাউন নয়। ২৫ শে মার্চ থেকে দুবাই লকডাউনে। আবুধাবিসহ অন্য শহরে বিধিনিষেধ, রাতে কারফিউ, ঘরের বাইরে বের হওয়া নিষিদ্ধ। তবে দিনে সীমিত আকারে কিছু প্রতিষ্ঠান খোলা থাকে, তবে স্টাফ উপস্থিতি এক তৃতীয়াংশে নিয়ে আসার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে আমিরাত সরকার অভিবাসী শ্রমিকদের প্রতি সদয় হয়েছে। ফ্রি ভিসায় থাকা লোকজনের এতদিন এক কোম্পানী থেকে অন্যত্র কাজে বাধা ছিল, কিন্তু করোনার কারণে সেই বাধা আর নেই। এছাড়া অবৈধদের কাজ করতে কোনো বাধা নেই। কিন্তু এখন বৈধদেরই কাজ নেই, অবৈধ কোথায় কাজ পাবে? কে কাজে নেবে? সবই তো বন্ধ, খোলা যে সব প্রতিষ্ঠান সেখানে নিয়মিত শ্রমিকেরই কাজ নেই! অনিয়মিতদের সূযোগ কই?

রাষ্ট্রদূত যা বললেন : আবুধাবিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স মিজানুর রহমান জানান, করোনার কারণে দূতাবাস এবং দুবাইর বাংলাদেশ কনস্যুলেটে কনস্যুলার সেবা সাময়িক বন্ধ থাকলেও ইমার্জেন্সি সেবাগুলো দেওয়া হচ্ছে। তার মতে আমিরাতে পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বাংলাদেশ কমিউনিটির অবস্থাও ভাল। এখন প্রয়োজন সব বাংলাদেশির আমিরাতের আইন-কানুন মেনে চলা। নিজে সচেতন এবং নিরাপদ অবস্থানে থাকা। উৎস: মানবজমিন।

ad

পাঠকের মতামত