318086

শিবচরে যে কারণে মা’রাত্বক’ভাবে করোনার বিস্তার ঘটেনি

নিউজ ডেস্ক।। দেশের প্রথম কোনো এলাকা হিসেবে লকডাউনের একমাস অতিক্রম করল মাদারীপুরের শিবচর। গত ১৯ মার্চ শিবচরকে প্রথম লকডাউন করা হয়। শুরুতে প্রবাসী অধ্যুষিত শিবচর উপজেলাটি অধিক ঝূকিপূর্ণ ঘোষণা হলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা ও আইইডিসিআরে দেওয়া স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলেছেন শিবচরবাসী, ফলে এখন পর্যন্ত মারাত্বকভাবে এ অঞ্চলে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারেনি।

লকডাউনের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী (লিটন) সার্বক্ষণিক নজরদারি ও নির্দেশনা দিয়েছেন। একইসঙ্গে এ পর্যন্ত ৩০ হাজারের বেশি দরিদ্র পরিবারে খাবার সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার তদারকিও করে যাচ্ছেন তিনি।

গতকাল রোববার সুস্থ হয়ে আইসোলেশন থেকে বাড়ি ফিরেছেন শিবচরের ৮ জন। বর্তমানে মাত্র পাঁচজন রোগী আইসোলেশনে রয়েছেন যারা সবাই নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা। এর ফলে উপজেলার ১৭ জন আক্রান্তের মাত্র পাঁচজন এখনও চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

সম্প্রতি ইতালিসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ৬৮৪ জন প্রবাসী শিবচরে আসেন। এদের মধ্যে ৪০০ জন হোম কোয়ারেন্টিন পালন করেন। বর্তমানে ৮৯ জন হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন।

বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ৮মার্চ। তার এক দিন আগে ইতালি থেকে বাংলাদেশে আসেন শিবচর পৌরসভার গুয়াতলার এক ব্যক্তি। তিনি ১৩ মার্চ কোভিড-১৯ পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হন। পরদিন শনাক্ত হন তার স্ত্রী ও দুই সন্তান। ১৭ মার্চ শনাক্ত হয় তার শাশুড়ি ও এক বন্ধু। ১৮ মার্চ ওই প্রবাসীর বাবাকে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং পরে তিনি পজিটিভ শনাক্ত হন। উল্লেখিত ৭ জন ওই প্রবাসীর মাধ্যমেই সংক্রমিত হন।

এর বাইরে উপজেলার পাঁচ্চর ইউনিয়নের হোগলার মাঠ গ্রামের একজন আক্রান্ত ছিলেন। ১৯ মার্চ উপজেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ দেশের প্রথম কোনো এলাকা হিসেবে শিবচরকে লকডাউন ঘোষণা করে। ওই সময় স্বাস্থ্য বিভাগের আইইডিসিআরের টিম শিবচরে অবস্থান নিয়ে আক্রান্ত রোগীদের সংস্পর্শে আসা মানুষের তালিকা তৈরি করে তাদের নমুনা সংগ্রহ করে এবং হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার ব্যবস্থা করে। এর ফলে ওই পরিবারের আরও দুই জনের সংক্রমণ চিহ্নিত হয়।

গত ২৪ মার্চ ওই প্রবাসীর বাবা করোনা আক্রান্ত হয়ে ঢাকার বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ১১এপ্রিল পর্যন্ত শিবচরের করোনা রোগীর সংখ্যা স্থিতিশীল ছিল । ১২ এপ্রিল ওই প্রবাসীর এক প্রতিবেশী নারীর মধ্যে করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব মেলে। এর বাইরে আরও তিন জন আক্রান্ত হন তবে তারা নারায়ণনগঞ্জ ফেরত। এর মধ্যে একজন চিকিৎসক রয়েছেন, যিনি নারায়নগঞ্জে থেকে রোগী দেখতেন। তিনি শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক নারী চিকিৎসকের স্বামী। শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক স্ত্রীর কাছে বেড়াতে আসেন তিনি এবং তার মাধ্যমে তার চিকিৎসক স্ত্রী ও ৭ বছরের শিশুকন্যা আক্রান্ত হন। ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত শিবচরের মোট রোগীর সংখ্যা ১৭। এদের মধ্যে আগেই সুস্থ হন ৩ জন। ১৯ এপ্রিল সদর হাসপাতালের আইসোলেশন থেকে ৮জন মুক্ত হয়ে বাড়িতে ফিরে বর্তমানে ৫ জন আইসোলেশনে রয়েছেন।

শিবচরে করোনার বিস্তার রোধে শুরু থেকেই প্রধানমন্ত্রী ও আইইডিসিআরের নির্দেশনা মেনে চলতে চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী কঠোর অবস্থান নেন। তার নির্দেশে প্রথমদিনেই আড়াই শতাধিক পুলিশ সদস্য মোতায়েন হয় উপজেলাজুড়ে। মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট, সেনাবাহিনী, র‌্যাব। বন্ধ করে দেওয়া হয় দোকান পাট, গণপরিবহন। মাত্র ৪ ঘণ্টা খোলা থাকে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর দোকান। বন্ধ হয়ে যায় সকল সাপ্তাহিক হাট।

তিনি ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত কমিটি গঠন করে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা প্রবাসী ও দরিদ্রদের খাবার সহায়তা ঘরে ঘরে পৌঁছে দেন। আক্রান্ত পরিবারগুলোর খাবার সহায়তায় নজর দেন বিশেষভাবে। মাঠ পর্যায়ের স্বাস্থ্য কর্মীদের জন্য নিজ হাতে দেন পিপিইসহ সুরক্ষা সরঞ্জাম।

২০ শয্যার পৃথক আইসোলেশন কেন্দ্র ঘোষণা করা হয় বহেরাতলা হাজী কাশেম উকিল মা শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্রকে। কঠোরভাবে লকডাউন পালন করার কারণে শিবচরে করোনার বিস্তার সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব হচ্ছে। অন্যথায় ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের মত সংক্রমিত এলাকায় পরিণত হতো। কারণ শুরুতে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের পরই শিবচরের করোনা আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মেলে।

উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. সেলিম বলেন, ‘চিফ হুইপ লিটন চৌধুরীর উদ্যোগে ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত কমিটি খাবার সহায়তা ৩০ হাজার পরিবারের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। দলীয় নেতারাও ব্যক্তিগত উদ্যোগে আরও ১০ হাজার প্যাকেট খাবার দিয়েছে।’

শিবচর পৌরসভার মেয়র আওলাদ হোসেন খান বলেন, ‘চিফ হুইপের নির্দেশনায় রোজার শুরুতেই আরেকদফা খাবার সহায়তার জন্য তালিকাকরণের কাজ চলছে।’

শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘শিবচরে চিফ হুইপ স্যারের নির্দেশনা ও খাবার সহায়তা কার্যক্রম মানুষকে ঘরে রাখতে সহায়তা করেছে।’

চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী মুঠোফোনে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনে সবাইকে ঘরে থাকতে হবে। যতদিন অচলাবস্থা থাকবে ঘরে ঘরে খাবার সহায়তা চলতে থাকবে।’ লকডাউন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করায় তিনি সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি ধন্যবাদ জানান। উৎস: দৈনিক আমাদের সময়।

ad

পাঠকের মতামত