315775

চিকিৎসকদের অভিজ্ঞতায় ইরানে ক’রোনাভা’ইরাস

নিউজ ডেস্ক।। ইরানে যখন প্রথম করোন ‘ভাইরাস শনাক্ত করা হলো ১৯ ফেব্রুয়ারী তখন আমাদের ইস্পাহান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের দ্রুততার সঙ্গে সময় সময়ে নেয়া সিদ্ধান্তগুলো দেখে মনে হলো অবস্থা ভালোর দিকে না। কিছু সময় পরপর আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধানের সঙ্গে ইস্পাহান প্রদেশের হাসপাতালের প্রধানদের বৈঠকের খবরগুলো আমাদের ব্যাচের গ্রুপগুলোতে দেখছিলাম।

কিভাবে কোন রোগীদের কোন হাসপাতালে রেফার্ড করা হবে, রোগী আসলে চিকিৎসকরা কিভাবে তাদের ম্যানেজ করবেন, কোন রোগীদের নিয়ে আতঙ্কিত হবার আছে, হাসপাতালের কোন জায়গাগুলোতে পিপিই নেয়া জরুরি ইত্যাদি দিক-নির্দেশনাগুলো করোনাভাইরাস আসার দুইদিনের মাঝেই সবার কাছে পৌঁছে গেছিলো। সবকিছু যেন সবার মাঝে পরিষ্কার ছিল।

ইস্পাহান প্রদেশে একটি একটি করে বর্তমানে চারটি হাসপাতাল এখন করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে অনেক সিটি সেন্টারগুলো আক্রান্তদের কোয়ারেন্টাইনের জন্য পার্কি সহ বিভিন্ন স্থান খালি করে সাহায্যে এগিয়ে এসেছে। অনেকটা বুকে সাহস নিয়ে বলাই যায় একজন ইরানি বলতে পারবেন না যে তিনি বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন বা হাসপাতালে তাকে গ্রহণ করা হয়নি এমন কিছু।

আমি সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে বাংলাদেশের চিকিৎসকদের গ্রুপগুলোতে এখনও অনেক চিকিৎসকই পিপিই অর্থাৎ পারসোনাল প্রটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট নিয়ে দেশের অনেক চিকিৎসক এসবের ঘাটতি অথবা না পাওয়ার কথা বলছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশে প্রথম ৮ মার্চ করোনাভাইরাসের প্রথম রোগী শনাক্ত হয়। আজ প্রায় ১ মাস হতে চলেছে. এখনো যদি আমরা পিপিই নিয়েই ব্যস্ত সময় পার করি তবে চিকিৎসকরা নিজেদের সর্বোচ্চ সুরক্ষা নিয়ে কবে চিকিৎসা দিতে পারবেন?

ইরানে করোনাভাইরাস শনাক্তের প্রথম ২-৩ দিন পিপিই নিয়ে কিছুটা সমস্যা ছিল এর ফলে চিকিৎসকরা চিকিৎসাসেবা দিতে কিছুটা পিছু হটে কিন্তু পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংগঠনগুলো কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে সেটির দ্রুত সমাধান করে ফেলেন।
এখন পর্যন্ত ইরানে চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে ৪৩জন চিকিৎসক এবং নার্সের মৃত্যু হয়েছে। এটা স্বাভাবিক এবং জানা ছিল এই যুদ্ধ থেকে হয়তো অনেকেই আর ফিরে আসবেন না। তাই শুরুর দিনই বাসা থেকে শেষ বিদায় নিয়ে হাসপাতালে আসেন অনেকেই। তবে এজন্য কিঞ্চিৎ তারা মনোবল হারাননি। সর্বোচ্চ সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে প্রতিনিয়ত রোগীদের সেবা দিয়ে গেছেন।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং চিকিৎসকদের প্রতি পরামর্শ নিজেরা সিদ্ধান্ত নিন কিভাবে হাসপাতালের কোন জায়গায় রোগীদের ম্যানেজ করবেন। আমাদের সবকিছুতেই স্বল্পতা আছে আর থাকবে এটা এই মুহূর্তে পূরণ করা সম্ভব হবে না কিন্তু যা আছে তা নিয়ে এগিয়ে যাবার মাঝেই কল্যাণ।

এ সমস্যাটা আমাদের, এর সমাধান আমাদের সবাই মিলে করতে হবে। অন্যকেউ এসে করে দেবে না। আশা করি সঠিক সিদ্ধান্তে অতীতের মত আমরা সফল হবো। লেখক: কামরুজ্জামান নাবিল। শিক্ষার্থী, ডক্টর অব মেডিসিন, ইস্পাহান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ইরান। উৎস: যুগান্তর।

ad

পাঠকের মতামত