314929

আপনার শিশুকে করোনা থেকে নিরাপদ রাখতে করণীয়?

ডেস্ক রিপোর্ট:  বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারি ছড়িয়ে পড়েছে। আক্রান্তের হার বাড়ছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর হারও। আর এই উদ্বেগ আতঙ্কে বয়সিরা যেমন আছেন তেমনি শিশুরাও। বিশেষ করে পাঁচ বছর পর্যন্ত শিশুরা একরকমের বন্দিদশায় কাল কাটাচ্ছেন। বড়রা লকডাউন আর ফিজিক্যাল ডিসটেন্স বুঝলেও ছোটদের ক্ষেত্রে হচ্ছে উল্টো। অনেক বাসায় দেখা যায় কাজের বুয়ারাই বাসার বাচ্চাকে লালন-পালন করে থাকেন। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের শিশুরা কতটা নিরাপদ? প্রাপ্ত তথ্যে জনা যায়, বাংলাদেশের গড় শিশুর পুষ্টিহীনতা উন্নত দেশের তুলনায় অনেক বেশি।

চলমান এই সঙ্কটে শিশুর সুরক্ষায় কি করা যাবে? কি করা যাবে না? এ বিষয় নিয়ে মানবজমিনের সঙ্গে কথা বলেছেন, ঢাকা শিশু হসপাতালের হাই ডিপেনডেন্সি এন্ড আইসোলেসন ইউনিটের বিভাগীয় প্রধান শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. রিয়াজ মোবারক। তার সাক্ষাৎকারের বিস্তারিত তুলে ধরা হলো পাঠকদের জন্য।

যেসব বিষয় লক্ষ্য রাখা জরুরি: ১. যারা কোলে করে শিশুটিকে বড় করছেন তাদের কেউ যদি ভাইরাসবাহী হন তাহলে তা শিশুর মধ্যে খুব সহজেই ছড়াতে পারে। ২. বড়দের হাঁচি-কাশি থেকেও শিশুর মধ্যে ভাইরাসটি প্রবেশ করতে পারে। ৩. শিশুরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নানারকম ময়লা বা নোংরা জিনিসপত্র হাতে নেয়, এসব থেকে দূরে না রাখতে পারলে শিশুটি করোনা ঝুঁকিতে পড়তে পারে। ৪. অনেকে শিশুদের হাতে ময়লা বা পুরোনো নোট দিয়ে থাকেন। যা নিয়ে শিশুরা খেলাধুলা করে। এটাও মারাত্মক ঝুঁকির কারণ হতে পারে। কারণ, টাকা অনেকের হাতে যায়। ফলে এর মাধ্যমে ভাইরাসটি ছড়ানো স্বাভাবিক। ৫. আমাদের দেশে একান্নবর্তী পরিবার বা যৌথ পরিবারের সংখ্যা অনেক বেশি। সুতরাং, যদি পরিবারের বড় কেউ এই ভাইরাস বহনকারী হন তাহলে তাকে কোয়ারেন্টিন বা আইসোলেসনে রাখা পুরোপুরি সম্ভব না হলে শিশুটি আক্রান্ত হতে পারে।

৬. ঢাকায় ঘনবসতি বা অ্যাপার্টমেন্টে পাশাপাশি অনেক মানুষের বাস। কাজেই পর্যাপ্ত সাবধানতা অবলম্বন না করলে আপনার শিশুটি যে কোনভাবে অন্যকোন অপরিচিত দ্বারা আক্রান্ত হতে পারেন। ৭. যদি এমন হয় মায়ের মধ্যে উপসর্গ বা লক্ষণ দেখা যাচ্ছে তাহলে সন্তানের কাছ থেকে মাকে আলাদা থাকতে হবে। সন্তানের নিরাপত্তার স্বার্থেই এটি করতে হবে। ৮. আর যদি সন্তানের হয় সেক্ষেত্রে মাকে সুরক্ষা পোষাক বা পিপিই ব্যবহার করে শিশুর যতœ নিতে হবে। কোনভাবেই আবেগপ্রবণ হওয়া যাবে না। এতে বাবা-মা দুজনেই আক্রান্ত হতে পারেন।

৯. আমাদের শিশুদের অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় হিমোগ্লোবিন কম, ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি। এ ধরণের ঘাটতি থাকলে দ্রুত ভাইরাস শিশুটিকে কাবু করতে পারে। ১০. দরিদ্র পরিবারের শিশুদের অনেক ক্ষেত্রেই প্রোটিন ঘাটতি থাকে যা এই ভাইরাস আক্রান্ত হলে দ্রুত কাবু করতে পারে।

যে সকল বিষয়ে সাবধানতা জরুরি: ১. এ সময় যে কারও কোলে আপনার শিশুকে দেয়া যাবে না। খোলাশা করে বললে দাঁড়ায়, যার তার কোলে নয়। ২. কাজের বুয়া বা বাইরের কারও সামনে শিশুকে দাঁড়াতে দিবেন না বা বাইরের কেউ শিশুর সামনে দাঁড়াবে না। ৩. যারা বাসার বাইরে কাজে যাচ্ছেন, তাদের ঘরে ফিরে শিশুর সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখা জরুরি। বিশেষত পর্যাপ্ত পরিচ্ছন্নতা বা সুরক্ষা নেয়া ছাড়া তো নয়ই। ৪. শিশুকে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন ও ভিটামিন সি জাতীয় ফল, সবজি, পানি খাওয়াতে হবে। তাতে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।

৫. শিশুকে বাসায় এমন একটি পরিবেশে রাখার চেষ্টা করতে যেন তার স্বভাবিক বৃদ্ধি আটকে না যায়। অর্থাৎ, খেলাধুলার ব্যবস্থা করা। বিভিন্ন ধরণের ইনডোর গেমের মাধ্যমে তাকে উৎফুল্ল রাখা। ৬. লকডাউন বা ফিজিক্যাল ডিসটেন্স এ সময়টাই শিশু বাসার ভেতরে খেলাধুলা সেদিকে খেয়াল রাখা দরকার। ৭. খেয়াল রাখতে হবে টেলিভিশনে রোগিরা ভেন্টিলেশনে আছে এমন ফুটেজ যেন না দেখে। এতে শিশুটি মানসিকভাবে দুর্বল হলে তার ক্ষতি হতে পারে। ৮. শিশুটিকেও বারবার পরিচ্ছন্নতার চর্চা শিক্ষা দিতে হবে। কিভাবে হাত পরিষ্কার রাখতে হবে তা বুঝাতে হবে।

৯. বাইরের শিশুদের সঙ্গে এ সময়টায় মিশতে দেয়া যাবে না। আর প্রতিবেশির ফ্ল্যাটের শিশুর সঙ্গে মিশতে দেয়ার ক্ষেত্রেও ব্যাপক সাবধানতা দরকার। ১০. শিশুকে নিয়মিত গোসল করাতে হবে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পোষাক পরিধান করাতে হবে। সকালে বাসার জানালার পর্দা খুলে রোদ লাগাতে হবে শিশুকে। রোদের ছোঁয়া শিশুর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

ad

পাঠকের মতামত