308434

‘সব পুড়ে ছাই, শীত-বৃষ্টিতে কোথায় থাকব আল্লাহই জানে’

শীতের রাতে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে রাজধানীর কালশীর বাউনিয়া বাঁধ এলাকার বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতের পর লাগা এই আগুনে পুড়ে গেছে বস্তির দুই শতাধিক ঘর।সব হারিয়ে বস্তির ছয় শতাধিক বাসিন্দার আশ্রয় এখন খোলা আকাশের নিচে।

যখন আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে, ততক্ষণে বস্তির সবগুলো ঘর পুড়ে ছাই। আগুনের তাণ্ডবে কেবল ঘর নয়, সব সহায়-সম্বলই হারিয়েছেন বস্তির বেশিরভাগ মানুষ। মাঝরাতে তাদের ঠাঁই হয়েছে খোলা আকাশের নিচে। চোখের সামনে আগুনের শিখায় পুড়ছে আশ্রয়— দূর থেকে দাঁড়িয়ে এ দৃশ্য দেখতে দেখতে শীতের অনুভূতি হারিয়েছেন বস্তিবাসী। তবে এই রাতই তো শেষ রাত নয়, কনকনে ঠান্ডার এই পৌষ মাসে পরের রাতগুলো কোথায় কাটাবেন সন্তান-সন্ততি নিয়ে, সেই আশঙ্কাই কেবল তাদের চোখেমুখে।

বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) দিবাগত মধ্যরাতে মিরপুর কালশী এলাকার বাউনিয়াবাদ বস্তিতে লাগে ভয়াবহ আগুন। নিয়ন্ত্রণে আসার আগে পুরো বস্তিই পুড়ে ছাই হয়েছে। আর তাতেই এখন সেখানকার বাসিন্দানের মুখে কেবলই দুশ্চিন্তার ভাঁজ।

মায়া নামে এক নারী খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে নিজের পুড়ে যাওয়া ঘর দেখছিলেন। তিনি বলেন, এক কাপড়ে বের হয়েছি। এখন কোথায় কিভাবে থাকব, তা আল্লাহই জানে। একদিকে শীতের কনকনে ঠান্ডা, আরেক দিকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। ঘরের মাল-ছামানা বা টাকা-পয়সা কিছুই নিতে পারিনি বের হওয়ার সময়। গ্যাসের চুলায় রান্না করে এনে সবাই নিয়ে খেতে বসেছিলাম। ভাত মুখে দেওয়ার আগেই পাশের ঘর থেকে আগুন লাগার চিৎকার শুনতে পাই। সব ফেলে দুই বাচ্চা আর বৃদ্ধ শ্বশুড়-শাশুড়িকে নিয়ে এক কাপড়ে বের হই। এখন কোথায় থাকব, জানি নাই।

একটু আগে যেখানে ছিল সাজানো সংসার, ছিল সেই জায়গাটিই আগুনের লেলিহান শিখায় পুড়ে ছাইয়ে পরিণত হচ্ছে, তাকিয়ে তাকিয়ে সেটিই দেখছিলেন মায়া। কেবল ঘর তো নয়, সাজানো সংসারটিই যেন পুড়ছে আগুনে।

নার্গিস বানু নামে এক বৃদ্ধা জানালেন, ছেলে আর ছেলের বউ বরিশালে গ্রামের বাড়িতে গেছে। দুই নাতিকে নিয়ে ঘুমিয়েছিলেন। আগুন লাগার খবর পেয়ে নাতিদের নিয়ে কোনোরকমে বের হয়েছেন। খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন নার্গিস। আহাজারি করতে করতে বলছিলেন, আল্লাহই একমাত্র জানে কোথায় থাকব। শীতে রাত কেমনে কাটবে, সেই চিন্তাই বাঁচি না। কয়েকদিন টাকা জমিয়ে আজ দিনে একটা কম্বল কিনেছিলাম, সেই কম্বলটাও নিতে পারিনি।

আগুনে সহায় সম্বল হারানো আবদাল মিয়া বলেন, ‘ঘুমায়ে ছিলাম। আগুন লাগার চিৎকার শুনেই দৌড় দিছি। সবাই দৌড় দিয়ে বের হইছে। কিছুই নিতে পারি নাই।’ বস্তিটিতে তিন শতাধিক ঘর ছিল, যার কোনোটিই অবশিষ্ট নেই বলে জানালেন তিনি।

এদিকে, স্থানীয় সংসদ সদস্য ইলিয়াস মোল্লা বলেছেন, মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে পাশের আনন্দ নিকেতন স্কুলে বস্তিবাসীকে যেতে বলা হয়েছে। সেখানে তারা আপাতত আশ্রয় নেবেন। সেখানে সকালসহ সব বেলার খাবারের ব্যবস্থা করা হবে। পাশাপাশি শীতে যেন বস্তিবাসীকে কষ্ট না করতে হয়, সেজন্য পোশাক দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন স্থানীয় এই এমপি।

ইলিয়াস মোল্লা বলেন, বাউনিয়াবাদের এই জায়গাটিতে প্লাস্টিকের বিভিন্ন ভাঙারির দোকান ছিল। কিছুদিন আগে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ ভেঙে দিয়েছিল দোকান-ঘরগুলো। ধীরে ধীরে আবার টং ঘর তৈরি হয়েছে। সেখানে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংযোগ ছিল কি না, তা জানা ছিল না। তবে কর্তৃপক্ষের তদারকি করা উচিত ছিল। করলে হয়তো আজকের এই আগুনের ঘটনা নাও ঘটতে পারত।

অন্যদিকে, স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বস্তিবাসীদের কম্বল দেওয়া হয়েছে রাতেই। কম্বল গায়ে জড়িয়ে বস্তিবাসী আনন্দ নিকেতন স্কুলে রাত পার করার চেষ্টা করছেন। সেই কম্বলে হয়তো শীতের তীব্রতাটা সামাল দিচ্ছেন, কিন্তু আগুনের শিখায় নিঃস্ব হওয়ার বেদনাটি কী করে সামাল দেবেন প্রান্তিক এই মানুষগুলো!

ad

পাঠকের মতামত