307829

‘ক্ষমতায় ও বিরোধীদলে, দুই অবস্থায় সন্ত্রাস করে বিএনপি’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‍বিএনপি ‍একটি সন্ত্রাস দল। ক্ষমতায় ও বিরোধীদলে, দুই অবস্থায় সন্ত্রাস করে বিএনপি। এই সন্ত্রাসে প্রায় ৫০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন বহু মানুষ।২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি মাত্র ২৯টি সিট পায়। এ কারণেই তারা নির্বাচনে যেতে পারে না।

শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। সম্মেলন মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সব সদস্য।

ভাষণের শুরুতে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠিত সভাপতি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, প্রথম সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক, গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা একদিকে সন্ত্রাস মোকাবিলা করেছি। আমার দেশের মানুষ যাতে নিরাপদে থাকতে পারে সে ব্যবস্থা করেছি। দেশকে উন্নত করতে হলে একটা শান্তিপূর্ণ অবস্থা থাকা দরকার। আমরা পার্বত্য শান্তিচুক্তি করেছি।

শেখ হাসিনা বলেন, পঁচাত্তরে বাবা-মা সবাইকে হারিয়েছি। ছয়টি বছর দেশে আসতে পারিনি। রিফউজি ছিলাম দুই বোন। শেখ হাসিনা বলেন, আমার অবর্তমানে ৮১ সালের একটি কাউন্সিলে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে আমাকে নির্বাচিত করা হয়েছিল। জনগণের সাড়া ছিল, নেতাকর্মীদের আহ্বানে দেশে ফিরে এসেছিলাম।

বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বলে মন্তব্য করে বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বসে গঠন করা দল নয়। আওয়ামী লীগ গ্রাম-গঞ্জের মানুষ নিয়ে গঠন করা দল। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে, মানুষকে কিছু দিয়েছে। অসহায় মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য বঙ্গবন্ধু কাজ করে গেছেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এদেশের মানুষ ছিল দারিদ্র্য সীমার নিচে। তারা এক বেলা খেতে পেতো না। ছিল গৃহহারা। শিক্ষার কোনও ব্যবস্থা ছিল না। ছিল শোষিত-বঞ্চিত। তাদের কীভাবে মুক্তি দেবেন, এটাই ছিল জাতির পিতার একমাত্র লক্ষ্য। এ জন্য তিনি দেশ স্বাধীন করেছিলেন। মানুষ তার ডাকে সাড়া দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তাদের শ্রদ্ধা করি। আওয়ামী লীগ জন্ম লগ্ন থেকে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জন্ম। এই দল ক্ষমতার অলিঙ্গন থেকে প্রতিষ্ঠিত কোনও দল নয়, জনগণের ভেতর থেকে প্রতিষ্ঠিত দল।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের ওপর আঘাত এসেছে বারবার। জাতির পিতাকেও কতবার হয়রানি করা হয়েছে, মিথ্যা মামলা হয়েছে, ফাঁসির আদেশ হয়েছে। তারপরও তিনি সততার সঙ্গে এগিয়ে গিয়েছিলেন বলেই বাঙালি একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, যিনি ত্যাগ স্বীকার করতে পারেন, তিনিই সফল হবেন। আর এই কাজটা আওয়ামী লীগই সবচেয়ে বেশি করেছে। এর জন্যই জনগণ কিছু পেয়েছে।

তিনি বলেন, জাতির পিতা ১৯৭২ সালে ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্টকে ইন্টারভিউয়ে বলেছিলেন জীবনকে সংগ্রামের মাধ্যমে দেশকে স্বাধীন করে যাওয়া, সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ। বঙ্গবন্ধু অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পান। নেতৃত্ব দিতে হলে সবচেয়ে বেশি আত্মত্যাগ প্রয়োজন। আপনারা অসমাপপ্ত আত্মজীবনীতে দেখবেন বঙ্গবন্ধু কষ্ট করেছেন। বাংলার মানুষের জন্য, দুঃখী মানুষের জন্য। সেই লক্ষ নিয়েই তিনি সংগ্রাম করে গেছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ শেষ করার অনেক চেষ্টা হয়েছে। যখনই আঘাত এসেছে, সবার আগে এসেছে আওয়ামী লীগের ওপরই। কিন্তু জাতির পিতার হাতে গড়া এই সংগঠন ধ্বংস করতে পারেনি কেউই। ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে ছোট ছোট ভাগে বিভক্ত করা হয়েছিল।

অনেকবার ভাঙন এসেছে। আমরা আবার নতুনভাবে দলকে গড়ে তুলেছি। আমি সারাদেশ ঘুরেছি। আজ আওয়ামী লীগ এই দেশে সবচেয়ে বড় সংগঠন ও সবচেয়ে শক্তিশালী সংগঠন। আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে জনগণ কিছু পায়, এটি প্রমাণিত সত্য।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজনীতি আমার জন্য নতুন নয়। স্কুল থেকে রাজনীতিতে যুক্ত ছিলাম। দেয়াল টপকে মিছিলে যেতাম, আন্দোলনে যোগ দিতাম। কলেজ জীবনে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছিলেম। কলেজে ছাত্রলীগ গড়ে তোলা, সহ-সভাপতিও নির্বাচিত হয়েছিলাম।

তিনি আরো বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্রিয় আন্দোলন করেছি। কিন্তু কখনও ভাবিনি এত বড় সংগঠনের গুরুদায়িত্ব আমাকেই নিতে হবে।

এর আগে হাজার নেতা-কর্মীর উচ্ছ্বসিত করতালির মধ্যে শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) বিকাল তিনটার পরপরই সম্মেলন উদ্বোধন করেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা।

জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে শেখ হাসিনা জাতীয় পতাকা ও দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এরপর শেখ হাসিনা শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। পরে তিনি মঞ্চের নির্ধারিত আসনে বসেন।

সম্মেলনে অংশ নিতে ভোর থেকে দলে দলে আসেন কাউন্সিলর ও ডেলিগেটরা। কাউন্সিলর ডেলিগেটদের নিরাপত্তা তল্লাশির পর ভেতরে প্রবেশের সুযোগ দেয়া হচ্ছে। পৌষের ১৫ ডিগ্রি শীতের মধ্যেই নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে সম্মেলনের প্রবেশপথ ও আশপাশ এলাকা জমজমাট হয়ে ওঠে।

সম্মেলন উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন দিয়ে সাজানো হয়েছে। মূল মঞ্চ সাজানো হয়েছে নৌকার আদলে । তার সামনে রয়েছে পদ্মা সেতুর অবয়ব। উদ্যানে বঙ্গবন্ধু পরিবারের শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের ছবি রয়েছে।

সরকারের উন্নয়নের বিভিন্ন কথাও ব্যানার, পোস্টারে উঠে এসেছে। উদ্যানের ভেতরে মাইকে আগত নেতা কর্মীদের উদ্দেশ্যে নির্দেশনা দেওয়া হয়।

২০ ডিসেম্বর সম্মেলন উদ্বোধনের পর ২১ ডিসেম্বর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনিস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত হবে নেতৃত্ব নির্বাচনের কাউন্সিল অধিবেশন।

সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন শনিবার (২১ ডিসেম্বর) সকালে সাড়ে ১০টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে কাউন্সিল অধিবেশনের উদ্বোধন করবেন শেখ হাসিনা। এরপর শুরু হবে রুদ্ধদার কাউন্সিল। এই কাউন্সিল অধিবেশনে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে।

বরাবরের মতো এবারও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার কাঁধেই অর্পণ করা হবে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব। জাতীয় নির্বাচনের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে দলকে আরও সুসংহত করার লক্ষ্যে এই সম্মেলনে তিন বছরের জন্য নতুন নেতৃত্ব উপহার পাবে আওয়ামী লীগ।

ad

পাঠকের মতামত