306591

৩০ হাজার কিডনি অকেজো রোগীর সামর্থ্য নেই চিকিৎসার

কিডনি রোগ, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের যোগসূত্র অত্যন্ত নিবিড়। বাংলাদেশে প্রায় দুই কোটি মানুষ কোনো না কোনোভাবে কিডনি রোগে আক্রান্ত। প্রতি বছর ৪০ হাজার রোগীর কিডনি বিকল হয় এবং তাদের ৮০ ভাগই মৃত্যুবরণ করে চিকিৎসার অভাবে। কিডনি বিকলের চিকিৎসা ডায়ালাইসিস অথবা কিডনি সংযোজন অত্যন্ত ব্যয়বহুল। ১৬ই নভেম্বর কিডনি ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। ২০১৮ সালের সমীক্ষা বলছে, ৪০ হাজার কিডনি অকেজো রোগীর মধ্যে কেবল মাত্র ১০ হাজার নতুন কিডনি অকেজো রোগী ডায়ালাইসিস অথবা কিডনি সংযোজন করার সুযোগ পায়। বাকি ৩০ হাজার রোগী চিকিৎসার সুযোগের অভাবে মৃত্যুবরণ করে। এই রোগীগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ডায়ালাইসিস করার ব্যবস্থা রাখা প্রয়োজন এবং প্রতিটি মেডিকেল কলেজে কিডনি সংযোজনের ব্যবস্থা চালু হওয়া দরকার।
পাশাপাশি বিশেষভাবে প্রয়োজন কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ, ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জন ও নার্সদের উচ্চতর প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা করা।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) আব্দুল মালেক বলেন, বাংলাদেশের অসংক্রামক রোগের ভয়াবহতা ব্যাপক। বিশেষ করে কিডনি, ডায়াবেটিস, হার্টের মতো অসংক্রামক রোগসমূহ থেকে মানুষকে রক্ষা করা দরকার। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়া, পুষ্টিকর ও সুষম খাবার পরিমিত গ্রহণ, নিয়মিত কায়িক পরিশ্রম করলে সুস্থ থাকা যায়। বাংলাদেশ ডায়াবেটিস এসোসিয়েশনের (বাডাস) সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান বলেন, বহুমূত্র বা ডায়াবেটিসের সঙ্গে কিডনি রোগের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। ডায়াবেটিস রোগের বিস্তার রোধে তিনি সবাইকে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট হাঁটা ও ব্যায়াম করার পরামর্শ ছাড়াও খাদ্য নিয়ন্ত্রণ, ফাস্টফুড পরিহার করার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেবার কথা বলেন। সাবেক স্বাস্থ্য উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) অধ্যাপক ডা. এ এস এম মতিউর রহমান বলেন, কিডনি রোগের ভয়াবহতা অনেক। তবে ডায়ালাইসিস ও কিডনি সংযোজনের চিকিৎসাকে সীমিত পর্যায়ে না রেখে আরো সমপ্রসারিত করা দরকার। অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে কিডনি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আর রশিদ বলেন, নীরব ঘাতক কিডনি রোগ কিডনির ক্ষতি করছে কোনো উপসর্গ ছাড়াই। অনেকের কিডনি পরিপূর্ণ বিকল হয়ে যাচ্ছে, ব্যাপক হাড়ে বাড়ছে কিডনি রোগী। তিনি বলেন, কিডনি রোগ প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করলে ৬০ ভাগ ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নিরাময় করা সম্ভব। এজন্য কিডনি রোগ হবার আগে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। এই রোগ প্রতিরোধে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও কায়িক শ্রম, অতিরিক্ত লবণ পরিত্যাগ, ফাস্টফুড, চর্বি জাতীয় ও ভেজাল খাবারসহ ধূমপান বর্জন করার পরামর্শ দেন তিনি। সেমিনার পর্বে দেশি-বিদেশি চিকিৎসকরা কিডনি রোগের বিভিন্ন দিক, ডায়াবেটিস রোগীর চিকিৎসা, মৃত ব্যক্তির কিডনি দিয়ে কিডনি অকেজো রোগীর দেহে কিডনি সংযোজনসহ উন্নত বিশ্বের উন্নত চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে বিশেষ প্রবন্ধ উত্থাপন করেন।

ad

পাঠকের মতামত