305179

পাশের বাড়ির তিনটি গাছ কবিরের বিয়ের স্বপ্ন ভেঙে দিলো!

ঘূর্ণিঝড় ‘ফনী’র পরপরই গাছের মালিককে গাছগুলো কে’টে নিতে বললেও তার গাফিলতির কারণে আজ আমি সর্বশান্ত। এভাবেই বলছিলেন গত রোববার (১০ নভেম্বর) ঘটে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের তাণ্ডবে বিধ্বস্ত ঘরের মালিক হতদরিদ্র ভ্যানচালক কবির মোহন। ভ্যানচালক কবির পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার কলারদোয়ানিয়া ইউনিয়নের মুনিরাবাদ গ্রামের শাহজাহান মোহনের ছেলে।

গত মঙ্গলবার (১৩ নভেম্বর) সকালে সরেজমিনে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার পাশের বড় আকারের তিনটি গাছ ভ্যানচালক কবিরের নবনির্মিত ঘরের উপর পড়ে ঘরটি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে। স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় তিনি বিধ্বস্ত ঘরের উপর থেকে গাছগুলো সরানোর চেষ্টা করছেন।

এসময় কবিরের মা কুলসুম বেগম বলেন, পনের বছর আগে ছোট ছোট দুই ছেলে ও দুই মেয়ে রেখে তার স্বামী শাহজাহান অন্য একটি বিয়ে করে গোপালগঞ্জে বসবাস করছে। স্বামীর রেখে যাওয়া কুড়েঘরে থেকে তিনি মানুষের বাড়িতে বাড়িতে ও ক্ষেতখামারে দিনমজুরের কাজ করে ছেলে মেয়েদের বড় করেছেন। পরবর্তীতে বড় ছেলে রাজ্জাক মোহন (২৫) কয়েক বছর আগে বিয়ে করে স্ত্রীকে নিয়ে আলাদা সংসার শুরু করে। তখন ছোট ছেলে কবিরই ভ্যান চালিয়ে সংসারের হাল ধরে এবং দুই মেয়েকে বিয়ে দেয়। এর মধ্যে ছোট মেয়ে নাজমুন্নাহারের স্বামী ভ্যানচালক আনোয়ার দীর্ঘদিন কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন থেকে মারা যায়। তখনও কবির ধারদেনা করে আনোয়ারের চিকিৎসা ব্যয় বহন করেছে। বর্তমানে বিধবা হয়ে নাজমুন্নাহার তার এক শিশু নিয়ে তাদের সংসারে আছে।

এ সময় কবিরের মা আরও জানান, কবির বিবাহযোগ্য হওয়ায় তাকে বিয়ে বিয়ে দেয়ার জন্য এনজিও থেকে টাকা তুলে গত এক বছর আগে বাড়িতে নতুন একটি ঘর তুলতে শুরু করে। তাতেও কাজ শেষ করা সম্ভব না হওয়ায় স্থানীয়ভাবে সুদে টাকা এনে ঘরের কাজ করে। সেই স্বপ্ন ভেঙে দিলো ঘূর্ণিঝড় বুলবুল।

ভ্যান চালক কবির বলেন, বাবার রেখে যাওয়া কুড়ে ঘরে মা ও সন্তানসহ বিধবা বোনকে নিয়ে বসবাস করা সম্ভব না হওয়ায় দুটি এনজিও থেকে দেড় লাখ ও স্থানীয় মহাজনদের কাছ থেকে এক লাখ টাকা সুদে এনে বাড়িতে একটি নতুন ঘর তৈরি প্রায় শেষের দিকে ছিল। আশা ছিলো আর কিছুদিন পরেই নতুন ঘরে মা-বোনকে নিয়ে উঠবো এবং মায়ের স্বপ্ন পুরোনের জন্য বিয়ে করবো। কিন্তু আমার ঘরের পাশেই থাকা প্রতিবেশী সাবেক ইউপি সদস্য আইয়ুব আলীর অবহেলার কারণে তার তিনটি বড় গাছ ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের তাণ্ডবে আমার নির্মাণাধীন ঘরের উপর পড়ে আমার সকল স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে। এখন আমি কীভাবে এনজিও’র কিস্তি ও সুদের টাকা পরিশোধ করে আবার ঘর নির্মাণ করবো।

স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য আইয়ুব আলী জানান, ঘূর্ণিঝড়ের কারণেই গাছগুলো ভেঙে পড়েছে। এখানে আমার কোনো হাত ছিল না। তারপরেও প্রতিবেশী হওয়ায় সাধ্যমতো তিনি তাদের সাহায্য করবেন বলে জানান।

সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাসনাত ডালিম বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে অনেকেরই ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তবে ভ্যানচালক করিবের বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। সে যাতে পুনরায় ঘুরে দাঁড়াতে পারে সেই চেষ্টা করবো।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার রোজী আকতার জানান, স্থানীয় চেয়ারম্যানের মাধ্যমে বিষয়টি আমি অবগত হয়েছি। তাছাড়া ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় তার নামও রয়েছে। সরকারিভাবে কোনো বরাদ্দ এলে তার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।

ad

পাঠকের মতামত