303618

ম্যাচ ড্র হলেও অনেক কিছুই জিতল বাংলাদেশ!

ম্যাচের শুরু থেকেই বাংলাদেশ এগিয়ে। শেষ সময়ে এসে ভারতের গোল শোধ। আর ম্যাচ ড্র। সর্বশেষ দুই মোকাবেলার মতো সল্টলেকে মঙ্গলবার রাতের বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের ম্যাচেও সেই একই দৃশ্য। ম্যাচ ড্র ১-১ গোলে।

ম্যাচের ৪২ মিনিটের সময় সাদউদ্দিনের গোলে বাংলাদেশ এগিয়ে যায়। ম্যাচ জয়ের উৎসবে মেতে উঠার অপেক্ষায় তখন বাংলাদেশ, ঠিক তখনই বদলে যায় ম্যাচের মোড়। ৮৯ মিনিটে কর্নার থেকে উড়ে আসা বলে ডিফেন্ডার আদিল খানের হেডে ম্যাচে সমতা আনে ভারত।

গোল শোধের পর ম্যাচ জয়ের জন্য শেষের কয়েক মিনিটে ভারত তেঁড়েফুড়ে চেষ্টা চালায়। সুনিল ছেত্রী, সামাদ ও ব্রেন্ডনের একের পর এক হামলা বেশ দক্ষতার সঙ্গেই সামাল দেয় বাংলাদেশ।

এই ড্র’র সুবাদে চলতি বিশ্বকাপ বাছাই পর্ব থেকে বাংলাদেশ প্রথম কোন পয়েন্ট পেল। ম্যাচ শেষে বাংলাদেশ কোচ জেমি ডে জানান-‘ পুরো ম্যাচে তার দল ফ্যান্টাসটিক ফুটবল খেলেছে। শেষের দিকে এসে গোলটা হয়েই গেল। তবে প্রতিপক্ষের মাঠে আমার ছেলেরা যে দাপুটে ফুটবল খেলেছে তাতে আমি সন্তুষ্ঠ।’

পরীক্ষায় প্রশ্ন কমন পড়লো ভাল ছাত্র যেমন ভাল পরীক্ষা দেয়। এই ম্যাচের প্রথমার্ধে বাংলাদেশ দল ঠিক তেমন ভাল ছাত্রই যেন! ভারত আক্রমণে আসবে সেটা জানা ছিল। কিভাবে সেই আক্রমণ প্রতিহত করতে হবে কোচ জেমি ডে’র সাজানো সেই ছকের পথেই হাঁটলো বাংলাদেশ।

ফল, ভারতের আক্রমণগুলোর কোনটাই গোলের মুখ দেখল না। সুনীল ছেত্রী বারদুয়েক বল পায়ে বিপদজনক মুভ করলেন। কিন্তু ডিফেন্সে বাংলাদেশের পাহারা ছিল কড়া। উদান্তা সিং, আশিক করুনিয়ান ও সাহাল আব্দুল সামাদের কেউ প্রথমার্ধে বাংলাদেশের রক্ষণভাগের কাছে ‘পাসমার্ক’ও পেলেন না!

ডিফেন্স লাইনে দুর্দান্ত খেলেন ইয়েসিন খান। পরিশ্রমী এই ডিফেন্ডার রক্ষণভাগে কোন ঝুঁকিই নিলেন না শুরুর অর্ধে। মাঝমাঠ ও স্ট্রাইকিং পজিশনে ভারতের খেলোয়াড়রা যাতে বাড়তি জায়গা না পায়-ম্যাচ শুরুর বাঁশির সঙ্গে সঙ্গে সেই প্রচেষ্টায় সচেষ্ট ছিল বাংলাদেশের রক্ষণভাগ।

তবে শুধু রক্ষণ সামালেও ব্যস্ত থাকল না বাংলাদেশ। হঠাৎ হঠাৎ ভারতের রক্ষণভাগ নড়িয়ে দেয়ার কাজও দক্ষতার সঙ্গে সারল। গোলের চেষ্টায় মরিয়া ভারত রক্ষণ সামাল দেয়ার চেয়ে আক্রমণে গতি বাড়ায় একটু বেশি। রক্ষণের দেয়াল সেই ফাঁকে খানিকটা নড়বড়ে।

পরিসংখ্যান জানাচ্ছে শুরুর অর্ধে ভারতের তুলনায় বাংলাদেশই বেশি গোলের সুযোগ তৈরি করে। কিন্তু সেই সুযোগের মাত্র একটিই কাজে লাগাতে পারে বাংলাদেশ। ম্যাচের ৪২ মিনিটের সময় ফ্রিকিক থেকে ভারতের পোস্টে শট নেন জামাল ভূ্ইঁয়া। উড়ে আসা সেই বল ধরার জন্য সামনে বেড়ে ফ্লাইট মিস করেন ভারতীয় গোলরক্ষক গুরপ্রীত সিং সান্ধু। তার ওপর দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া বলে ফাঁকায় দাড়ানো সাদউদ্দিন হেড করে বল জালে জড়িয়ে দেন, গো..ও…ল!

এই গোলে পুরোদুস্তর হতভম্ব হয়ে যায় ভারতীয় শিবির। সল্টলেকের যুবভারতী স্টেডিয়ামে এতক্ষণ ধরে চলা হৈচৈ বন্ধ! গোল হজমের শোকের ধাক্কা যুবভারতীর গ্যালারিতে। হতাশায় মাথা ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে ভারত কোচ ইগর স্টিম্যাক পরের ৪৫ মিনিট কী করবেন- সেই দুঃশ্চিন্তা নিয়ে ড্রেসিংরুমে ফিরেন। আর বাংলাদেশ কোচ জেমি ডে ম্যাচে এগিয়ে থাকার সুখ পেলেও আনন্দ জমা রাখেন ম্যাচ শেষের জন্য।

দ্বিতীয়ার্ধে গোল শোধের জন্য পুরো ভারতীয় দল মাঝলাইন বরাবর উঠে আসে। তাতে লাভের যে খুব কিছু হল, তাও নয়! উল্টো ভারতের ফাঁকা হয়ে যাওয়া ডিফেন্সে বাংলাদেশ আরো ফুটো তৈরির সুযোগ পেয়ে যায়। ইব্রাহিম ও নাবিব নেওয়াজ জীবন লিড ২-০ করার সহজ সেই সুযোগ নষ্ট করেন।

নাবিব ভারতীয় গোলকিপারকে ওয়ান টু ওয়ান পেয়ে গোল করতে পারেননি। গুরপ্রীত সিং সান্ধু সামনে বেড়ে বলে হাঁটু লাগিয়ে কোনমতো গোল বাঁচান। খানিকবাদে মোহাম্মদ ইব্রাহিমের বাঁ পায়ের শট ভারতের ক্রসপিচে লেগে ফিরে আসে।

তবে গোল করতে না পারলেও ইব্রাহিম খানিকবাদে যা করলেন সেজন্য পুরো দল তার কাছে কৃতজ্ঞ। কর্নার থেকে থাপার উড়ে আসা শটে আনাস হেড করেন। বল নিশ্চিতভাবে বাংলাদেশের জালে যাচ্ছিল। গোললাইনের ওপর দাড়িয়ে ইব্রাহিম লাফিয়ে উঠে সেই বলে মাথা ছুঁইয়ে গোল বাঁচান!

পুরো ম্যাচে বাংলাদেশের রক্ষণভাগ যে দুর্দান্ত পারফরমেন্স দেখিয়েছে-তাতে বিশ্বকাপের এই ম্যাচ থেকে পয়েন্ট নিয়ে ফেরার জন্য তাদের বাড়তি একটা ধন্যবাদ অবশ্যই পাওনা!

ad

পাঠকের মতামত