301817

যেভাবে ফ্ল্যাট দখল করতেন ‘ক্যাসিনো খালেদ’

ঢাকা মহানগর দক্ষিণের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক ‘ক্যাসিনো’ খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে নতুন নতুন অভিযোগ আসতে শুরু করেছে। এবার তার বিরুদ্ধে এক বাড়ির মালিক ভয়াবহ অভিযোগ করেছেন।খিলগাঁওয়ের উত্তর শাজাহানপুরের ১৮২ নম্বরের সাড়ে ৬ কাঠার জমির মালিক বরকতুল্লাহর বাবা মো. বনি ইসরাইল ও মা নূরজাহান বেগম। এক-তৃতীয়াংশ অংশীদারির ভিত্তিতে ২০০৯ সালে নর্দান ডেভেলপার্স কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন তারা।

বরকতুল্লাহ অভিযোগ করেন, বরকতুল্লাহদের একটি ফ্ল্যাট ডা. একরামুল হক নামে এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে নির্মাণ প্রতিষ্ঠান। পরে তারা প্রতিবাদ জানালে নির্মাণ প্রতিষ্ঠান একরামুলকে ফ্ল্যাটের মূল্য পরিশোধ করে তা বরকতুল্লাহদের বুঝিয়ে দেন। ২০১০ সালের পর ডা. একরামুলও চলে যান। হঠাৎ করে ২০১৭ সালের শেষ দিকে তিনি ফিরে এসে ফ্ল্যাটের দাবি করতে থাকেন। এ সময় তিনি ফ্ল্যাট দখলে খালেদের পেশিশক্তি ব্যবহার করেন।

এরপর খালেদ আমাকে দুই দিন ডাকেন। প্রথম দিন কাগজপত্র নিইনি জানালে কাগজপত্র নিয়ে আবার যেতে বলেন। কাগজপত্র নিয়ে গেলে তা দেখে খালেদ বলেন, এসব দেখিয়ে লাভ নেই, আমি বলেছি ফ্ল্যাট ছেড়ে দিতে হবে। আমি কোনো কথা শুনতে চাই না। ফ্ল্যাট ছেড়ে দেন। না হলে আমার ছেলেরা মেরে বের করে দেবে। এর পর একদিন ১০-১৫ জন তরুণ আমাদের বাসায় আসে। দরজায় লাথি মেরে বলতে থাকে বাসা ছেড়ে চলে যাবি। না হলে কী হবে চিন্তাও করতে পারবি না।’

বরকতুল্লাহর অভিযোগ, খালেদ মাহমুদের সার্বক্ষণিক সহযোগী রুবেল, রনি ও উজ্জল তাদের ফ্ল্যাটের দরজায় লাথি মেরে ভেতরের লোকজনকে বের হয়ে যেতে বলেন। বের হয়ে না গেলে পরিস্থিতি খারাপ হবে বলে হুঁশিয়ার করেন। বরকতুল্লাহকে খালেদের অফিসে গিয়ে দেখা করতে বলেন। এমন অবস্থায় ওই ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়ারাও চলে যান। ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকেই সরাসরি ফ্ল্যাটের চাবি নিয়ে নেন খালেদের সহযোগীরা।

এরই মধ্যে খালেদ জানতে পারেন ওই বাড়ির আরেক ফ্ল্যাট ক্রেতা আব্দুল হান্নান সব টাকা পরিশোধ করে রসিদ গ্রহণ করলেও রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে পারেননি। রেজিস্ট্রেশন বাকি রয়েছে- এ খবর পেয়ে খালেদ মাহমুদ তার ওপরও চড়াও হন। তাকে বলেন, আপনি ফ্ল্যাট ছেড়ে চলে যাবেন। আপনার ফ্ল্যাটে উঠবেন বরকত সাহেব। এভাবে তাকে অব্যাহত হুমকি দিতে থাকেন। ওই ফ্ল্যাটের একাধিক বাসিন্দা জানান, পরে তার কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা চাঁদা নিয়ে রেহাই দেন খালেদ। আর ডা. একরামুল ফ্ল্যাট অবৈধভাবে দখল করতে খালেদকে দেন ১৭ লাখ টাকা।

বরকতুল্লাহ বলেন, খালেদের অফিসে গিয়ে দেখেন অস্ত্রধারী দেহরক্ষীরা ছাড়াও শতাধিক তরুণ। নিচে অনেকেই মোটরসাইকেল নিয়ে মহড়া দেয়। তার চলাফেরা সবকিছু দেখে তখন যে কেউ ভয় পেয়ে যেত। কেউ কথা বলার সাহস পেত না।অবশেষে ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া বরকতুল্লাহ মাহমুদের ফ্ল্যাট দখলে নেন। এর কিছুদিন পর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান বরকতুল্লাহর বড় ভাই ওবায়দুল্লাহ মাহমুদ। বরকতুল্লাহ মনে করেন ফ্ল্যাট দখল করার এই তীব্র মানসিক চাপ তার বড় ভাই সামলে নিতে না পেরে মারা যান।

বরকতুল্লাহ বলেন, ‘আমার ভাই শুধু বলতেন, আমাদের ফ্ল্যাটটা এভাবে জোর করে দখল করে নিল। এটা মেনে নেওয়া যায় না। সুস্থ মানুষ। ঘটনার মাত্র কয়েক দিন পরই হঠাৎ করে মারা গেলেন।’শুধু তা-ই নয়, ওই বাড়ির পাশের একটি বাড়ির নিচ তলার দুটি দোকান দখল করে অফিস খুলে বসেছেন খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ও তার সহযোগীরা। যদিও খালেদের গ্রেপ্তারের পর ওই অফিস থেকে আসবাবপত্র বের করে নিয়ে যেতে শুরু করেছে তার সহযোগীরা।

অভিযোগ রয়েছে, এসব কিছু নিয়ে ভুক্তভোগীরা এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিসহ থানা পুলিশের কাছে ধরনা দিয়েও কোনো ফল পাননি। থানা পুলিশ জানিয়েছে, তারা ছিল এক প্রকার অসহায়। সবই ছিল খালেদ মাহমুদের পকেটে। বরকতুল্লাহকে হুমকি দিয়ে খালেদ মাহমুদ বলেন, কোথাও কিছু করে লাভ নেই। কাউকে কিছু বললে আমার কাছে খবর চলে আসবে, যার পরিমাণ হবে খুব খারাপ।

ad

পাঠকের মতামত