301490

ভিন্ন রুটে চলছিল বাসটি, চালকের ছিল না লাইসেন্স

পারমিট ছিল ঢাকা-ভৈরব রুটে। কিন্তু সে রুটে চলাচল না করে, পারমিট ছাড়াই মিরপুর-১৪ থেকে বনানী-কাকলী রুটে চলছিল ক্যান্টনমেন্ট মিনি সার্ভিসের বাসটি। গত ৫ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টা ৫০ মিনিটের দিকে পেছনে থাকা একই কোম্পানির আরেকটি বাসের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে গিয়েই রাজধানীর মহাখালীর আমতলী এলাকায় ফুটপাতে দাঁড়িয়ে থাকা ফারহানাজ নামে এক নারীকে চাপা দেয়। একই সময় আহত হন আরেক পথচারীও। পরে হাসপাতালে নেয়ার পর মারা যান আহত ফারহানাজ।

ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ঘাতক ক্যান্টনমেন্ট মিনি সার্ভিসের ওই বাসচালক শামীম ছৈয়ালকে (২০) শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) মহাখালী বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা উত্তর বিভাগের ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিম।

গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য জানিয়েছে চালক শামীম। শুধু তাই নয়, মিনিবাস চালাতে দরকার মাঝারি ধরনের ড্রাইভিং লাইসেন্স। কিন্তু চালক শামীমের নেই সেই মানের ড্রাইভিং লাইসেন্স। হালকা যানবাহন চালানোর লাইসেন্স নিয়েই মাঝারি ধরনের বাসটি চালিয়ে আসছিল শামীম।

ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা উত্তর বিভাগের ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিমের এডিসি মো. জোনায়েদ আলম সরকার বলেন, ঘটনার দিনই বনানী থানায় একটি মামলা হয়। মামলাটির তদন্তভার বনানী থানা থেকে গোয়েন্দা পুলিশে হস্তান্তর করা হয়। মামলাটি তদন্তকালে অভিযান চালিয়ে শুক্রবার ঘাতক বাসটির চালক শামীমকে মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে গ্রেফতার করা হয়।

এডিসি মো. জোনায়েদ আলম সরকার বলেন, এর আগে জাবালে নূর ও সুপ্রভাত বাস দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনার মামলার তদন্ত করেছিলেন পরিদর্শক কাজী শরিফুল ইসলাম। এবারও ক্যান্টনমেন্ট মিনি সার্ভিসের বাসচাপায় ওই নারী নিহতের ঘটনার মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব নিয়ে চালককে গ্রেফতার করেন পরিদর্শক শরিফুল।

তিনি বলেন, দায়েরকৃত মামলায় চালক শামীমকে গ্রেফতার দেখিয়ে আজ আদালতে সোপর্দ করে সাতদিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে।

এডিসি জোনায়েদ বলেন, ঢাকা-ভৈরব রুটের অনুমোদন নিয়ে বাসটির মালিক ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট মিনি সার্ভিসের ব্যানারে মিরপুর-১৪ থেকে বনানী-কাকলী রুটে পরিচালনা করে আসছিলেন। অন্যদিকে চালক শামীমের ড্রাইভিং লাইসেন্স হালকা ধরনের গাড়ি চালানোর জন্য অনুমোদিত ছিল। কিন্তু তিনি আইনের লঙ্ঘন করে মাঝারি ধরনের বাস চালিয়ে আসছিলেন।

বনানী-কাকলী রুটে পরিচালনা কমিটির সঙ্গে যোগসাজশ করে তাদের প্রতিদিন ৫০০ টাকা করে জমা দিয়ে অনুমোদনবিহীন রুটে বাসটি চলছিল। জিজ্ঞাসাবাদে শামীম গোয়েন্দা পুলিশকে জানান, বাসটির সারাদিনে প্রায় চার হাজার টাকা আয় হলে তিনি পেতেন ৭০০ টাকা আর হেলপার পেতেন ৪০০ টাকা।

তবে চার হাজার টাকার বেশি আয় হলে প্রতি হাজারে তাদের ১০০ টাকা করে বেশি দেয়া হতো। বেশি যাত্রী নিলে বেশি টাকা পাওয়া যাবে এমন মানসিকতা নিয়েই দ্রুতগতিতে ও বেপরোয়াভাবে বাসটি চালিয়ে আসছিল শামীম।

ঘটনার দিনের বিবরণে চালক শামীম জানান, মহাখালীতে তাদের কোম্পানির অন্য একটি বাস পেছন থেকে তাড়া করছিল। সেই বাসটি যাতে তাদের বাসটি কোনোভাবে পেরিয়ে যেতে না পারে সে জন্য আমতলীতে ইউটার্ন নিয়ে দ্রুতগতিতে ক্যান্টনমেন্টে ঢোকার চেষ্টা করেন চালক শামীম। কিন্তু মহাখালী ফ্লাইওভারের শেষ মাথায় আসতেই গাজীপুরগামী ভিআইপি ২৭ নামক আরেকটি বাস এসে সামনে দাঁড়ালে ক্যান্টনমেন্ট মিনি সার্ভিসের বাসটি আটকে যায়।

পেছন থেকে তাড়া করা নিজ কোম্পানির অপর গাড়িটি যাতে আগে যেতে না পারে এবং সামনের যাত্রী যাতে আগে নিতে পারে সে জন্য ডানে না গিয়ে বাম সাইট দিয়ে ওভারটেক করতে গিয়ে ফুটপাতের ওপর বাসটি উঠিয়ে দেন শামীম। সে সময় ফুটপাতের ওপর দাঁড়িয়ে ছিলেন বেসরকারি অফিসের ওই নারী কর্মকর্তা ফারহানাজ। বাসটি ফারহানাজকে চাপা দিয়ে গুরুতর জখম করে। একই সময় কাওছার গোমস্তা নামে আরও এক পথচারী একই বাসের ধাক্কায় আহত হন।

পরিস্থিতি বুঝে ঘটনাস্থলে ঘাতক বাসের চালক ও হেলপার বাসটি ফেলে পালিয়ে যার। মুমূর্ষু অবস্থায় ফারহানাজকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

উল্লেখ্য, নিহত ফারহানাজ মহাখালীর রাইসকো ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ লিমিটেড প্রাগন হাউজে চাকরি করতেন। ঘটনার দিন গত ৫ সেপ্টেম্বর সকাল আনুমানিক ৮টা ৫০ মিনিটের দিকে ফারহানাজকে অফিসে যাওয়ার জন্য তার স্বামী মহাখালী আমতলী ফ্লাইওভারের পশ্চিম পাশে নামিয়ে দেন। ফারহানাজ রাস্তা পারাপারের জন্য ফুটপাতে দাঁড়িয়ে অপেক্ষায় ছিলেন।

ad

পাঠকের মতামত