301371

বিনামূল্যে চিকিৎসা দিতে বস্তিতে ছুটে যান এই চিকিৎসক

বর্তমান সময়ের উচ্চ ডিগ্রিধারী একজন চিকিৎসকের নাম শুনলে রোগীরা আঁতকে ওঠেন। হাজার টাকা ‘ফি’ দিয়েও দুদণ্ড মন খুলে অসুখের কথা বলতে পারেন না। চেম্বারে ঢুকতে না ঢুকতেই খচ খচ করে প্রেসক্রিপশনে একগাদা ওষুধের নাম ও একাধিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার কথা লিখে দেন অধিকাংশ চিকিৎসক। রিপোর্ট দেখাতে গেলেও গুনতে হয় ভিজিটের অর্ধেক টাকা। কিন্ত এ সমাজেই রয়েছে ব্যতিক্রমধর্মী মানবদরদি উচ্চ ডিগ্রিধারী বেশ কিছু চিকিৎসক। তারা লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে এবং অনেকটা প্রচারবিমুখ হয়েই নীরবে মানবসেবা করে যান।

তাদেরই একজন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ইএনটি (নাক, কান ও গলা) বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল আলম। এফসিপিএস ডিগ্রিধারী এই অধ্যাপক গরিব-দুঃখী মানুষকে চিকিৎসাসেবা দিতে নিজেই ছুটে যান বস্তিতে। চেয়ার-টেবিলে বসে নয়, রাস্তায় দাঁড়িয়ে কিংবা আন্ডারড্রেনের জন্য রাস্তার পাশে পড়ে থাকা বড় বড় ম্যানহোলের পাইপের মধ্যে বসে পরম স্নেহে পথশিশুসহ রোগী দেখেন। বিনামূল্যে প্রেসক্রিপশন ও অনেক সময় ওষুধও দেন।

শুধু তাই নয়, অপেক্ষাকৃত কম টাকায় পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগও করে দেন। রাজধানীর ধানমন্ডির হ্যাপি প্লাজায় স্বল্পমূল্যে অপেক্ষাকৃত দরিদ্র ও অসহায়সহ সকলের জন্য খুলেছেন ‘সুলভ চিকিৎসা’ নামে একটি চেম্বার। যেখানে অধ্যাপকরা হাজার টাকা ভিজিটে রোগী দেখেন, সেখানে তিনি নামমাত্র ভিজিটে অর্থাৎ মাত্র ১০০ টাকায় রোগী দেখেন। পর্দার অন্তরালে থাকা প্রচারবিমুখ মানবদরদি এই অধ্যাপকের নাম ধীরেধীরে লোকমুখে ছড়িয়ে পড়েছে।

অধ্যাপক ডা. মনজুরুল আলম বলেন, ‘তিনি ১৯৯৭ সালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ও পরবর্তীতে এফসিপিএস পাস করার পর থেকেই নিজ জন্মভূমি নওগাঁ জেলার মানুষের জন্য বিভিন্ন সরকারি ছুটি ও বিশেষ দিনে বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদান শুরু করেন। তাদের জন্য বিভিন্ন সময় স্বাস্থ্য ক্যাম্প করে চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছেন।’

তিনি জানান, গত দুবছর ধরে তিনি রাজধানীর মুগদা, মান্ডা, মোহাম্মদপুর, বসিলা ও কামরাঙ্গীরচর এলাকায় বস্তিবাসী পথশিশুসহ বিভিন্ন বয়সী দরিদ্রদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দিচ্ছেন। শুরুর দিকে শুধুমাত্র নাক, কান ও গলার চিকিৎসা দিলেও বর্তমানে তার সঙ্গে বিএসএমএমইউর বিভিন্ন ফ্যাকাল্টির চিকিৎসকরা যোগ দিয়েছেন। প্রথমদিকে তিনি বস্তিতে চিকিৎসা দিতে একাই ছুটে যেতেন। এখন তার জুনিয়ররাও তার সঙ্গে যান। প্রতিমাসে কমপক্ষে একবার তিনি বস্তিতে ছুটে যান বলে তিনি জানান। নওগাঁ ছাড়াও অন্যান্য জেলায় বিভিন্ন বিশেষজ্ঞদের নিয়ে স্বাস্থ্য ক্যাম্প করার ইচ্ছা আছে তার।

বিনামূল্যে গরিব ও দুঃখী মানুষকে সেবা দেয়ার মাঝেই নির্মল আনন্দ খুঁজে পান ডা. মনজুরুল আলম। তিনি বললেন, বস্তির লোকজন যখন বিনামূল্যে চিকিৎসা পেয়ে সুস্থ হয়ে তার জন্য দুহাত তুলে দোয়া করে, তখন তিনি চিকিৎসক হওয়ার সার্থকতা খুঁজে পান।
সূত্রঃ জাগো নিউজ

ad

পাঠকের মতামত