300961

বিপ্লবী ওমর মুখতার : প্রকাশ্য ফাঁসিতে যিনি শহিদ হয়েছিলেন

‘বিপ্লবী ওমর মুখতার, প্রিয় ওমর মুখতার, আপনার সাজা প্রকাশ্যে ফাঁসিতে মৃত্যু। এ মৃত্যু সাধারণ মৃত্যু নয়, শহিদি মৃত্যু।’ মৃত্যুদণ্ডের কথা জানতে পেরে কেমন ছিল তার প্রতিক্রিয়া- ‘আমরা আল্লাহর কাছ থেকে এসেছে, নির্ধারিত সময়ের পর আবার আল্লাহর কাছেই ফিরে যাবে।’ এটিই ছিল বিপ্লবী ওমর মুখতারের প্রতিক্রিয়া ও উত্তর।

মুসলিম উম্মাহর আক্বিদা বিশ্বাসও এটি। তবে কেউ সাধারণ মৃত্যু পাবে আবার কারো মৃত্যু শহিদের মর্যাদা লাভ করবে। এমনই শহিদি মৃত্যুই পেয়েছে বিপ্লবী ওমর মুখতার। কিন্তু কে এই ওমর মুখতার? কী তার পরিচয়? কেনই বা তাকে ফাঁসি দেয়া হলো? তিনি বিপ্লবীই বা হলেন কীভাবে? এ রকম অনেক প্রশ্নই ঘুরে ফিরে মানুষের মনে…

হ্যাঁ, ওমর মুখতার ছিলেন বিশ্ববিখ্যাত ইসলামিক ব্যক্তিত্ব। শুধু এখানেই শেষ নয়, তিনি দীর্ঘ ২০ বছর ধরে ইতালির আগ্রাসী দখলের বিরুদ্ধে বীরত্বের সঙ্গে লিবিয়া রক্ষায় প্রতিরোধ সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন ঈমানদার দেশপ্রেমিক। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী বিপ্লবী বীরপুরুষ।

শুধু ইসলামিক স্কলার হিসেবেই নয় বরং বিশ্বব্যাপী মানুষ ওমর মুখতারকে ‘মরুভূমির সিংহ’ নামেই বেশি চেনে। তিনি অল্প বয়সে কুরআন মুখস্ত করেছিলেন। আর যৌবনে ইসলামের অধ্যয়নে কাটিয়েছেন। তিনি দীর্ঘ দিন ধরে কুরআনের শিক্ষক হিসেবে নিজেকে খেদমতে নিয়োজিত রেখেছেন। আর তা ১৯১১ সাল পর্যন্ত। যখন ইতালিয় সেনারা লিবিয়া আক্রমণ করে বসে। তখন তিনি ৫৩ বছরের বৃদ্ধ।

মধ্য বয়স পেরিয়ে শেষ বয়সে উপনীত হওয়া ওমর মুখতার ইতালির অস্ত্রে সজ্জিত তরুণ ও বিশাল বাহিনীর মোকাবেলায় লিবিয়ার ছোট দল নিয়ে সমর কৌশলে ঝাপিয়ে পড়েন। ছোট দলে গঠিত ওমর মুখতারকে প্রতিহত করা ইতালির জন্য অসাধ্য হয়ে ওঠেছিল।

ওমর মুখতার লিবিয়া আক্রমণে আসার গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলো কেটে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দেন। যাতে ইতিলারি তরুণ ও চৌকস সেনাবাহিনী বিব্রত ও হতবাক হয়ে যায়। অথচ ইতালির রয়াল আর্মিরা ছিল ওমর মুখতার থেকে বয়সে অর্ধেকেরও কম টগবগে যুবক।

ওমর মুখতারের চরিত্র ও অখণ্ডতায় মুগ্ধ হয়ে পড়েছিলেন তার সৈন্যবাহিনীও। যুদ্ধের বিবৎস ও নৃশংসতা পূর্ণ কাজের সময়ও তিনি ইসলামের সুন্দর নীতিগুলোতে অটল ও অবিচল ছিলেন। আঁকড়ে ধরেছিলেন ইসলামের সুমহান আদর্শ।

তুলনামূলক ছোট দল নিয়ে বিপ্লবী ওমর মখুতার ইতালির বিপক্ষে লিবিয়া রক্ষায় প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। ২০ বছরের প্রতিরোধের পর ৭৩ বছর বয়সে দখলদার ইতালিয়ান হানাদারদের আক্রমণে যুদ্ধে আহত হয়ে বন্দী হন।

ওমর মুখতার বন্দী করে ইতালিয়ানরা তাকে অনেক প্রস্তাব দিয়েছেন, যুদ্ধেরত লোকদের ডেকে আনার অনেক লোভনীয় প্রস্তাবও তাকে দেয়া হয়েছিল। তিনি সব সুবিধা মুক্তি ও লোভনীয় প্রস্তাবই প্রত্যাখ্যান করেন। বরং তিনি বিখ্যাত এক মন্তব্য করেন। যাতে তার উক্তি সব যোদ্ধার মনোবলকে আরো বাড়িয়ে দেয়। আর তাহলো-
‘আমরা কখনোই আত্মসমর্পন করবো না। হয় আমরা জয় লাভ করবো নতুবা মৃত্যুকে আলিঙ্গন করবো।’

১৯৩১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর বিপ্লবী ওমর মুখতারকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে শহিদ করা হয়।
মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আগে বিপ্লবী ওমর মুখতার কুরআনুল কারিমের যে আয়াতগুলো তেলাওয়াত করেছিলেন। একজন মুমিনের জীবনের চাওয়া-পাওয়াও তাই। তিনি সুরা ফজর-এর শেষ ৪ আয়াত তেলাওয়াত করেন। আর তাহলো-
২৭ : হে উদ্বেগমুক্ত আত্মা!
২৮ : তুমি তোমার প্রভুর দিকে ফিরে এসো সন্তুষ্ট ও সন্তোষজন হৃদয়ে।
২৯ : সুতরাং তুমি আমার (অনুগত) বান্দাদের অন্তর্ভূক্ত হও।
৩০ : এবং আমার জান্নাতে প্রবেশ কর।’ (সুরা ফজর : আয়াত ২৭-৩০)

আল্লাহ তাআলা কুরআনের সৈনিক ও দেশপ্রেমিক বিপ্লবী ওমর মুখতারের প্রতি সদয় হোন। তাকে জান্নাতে সুউচ্চ মাকাম দান করুন। মুসলিম উম্মাহকে দেশপ্রেম ও ইসলামের জন্য অনুপ্রাণিত হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ad

পাঠকের মতামত