300590

বাসা খুঁজে না পাওয়া ব্যাচেলরদের জন্য সুখবর

রাজধানীর মিরপুর শেওড়াপাড়ার গলির দেয়ালে দেয়ালে টু-লেট, বাসা ভাড়া হবে এমন অসংখ্য লিফলেট সাঁটানো। সেগুলো দেখে দেখে সেখানে থাকা বাসার মালিকের নম্বরে ফোন করছেন দুই বন্ধু সাজিদ এবং চয়ন। তারা রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। এতদিন ধরে গণরুমের মতো একটি মেসে থাকতেন তারা। বগুড়া থেকে এসে রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে তারা ভর্তি হয়েছেন গত বছর। পড়ালেখা, খাওয়ার সমস্যাসহ এমন বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে তারা একটি বাসা নিতে চান। সে লক্ষ্যেই এ মাসের শুরু থেকে বাসা খুঁজছেন।

শেওড়াপাড়া থেকে পশ্চিম দিকে বউবাজারের রাস্তার দুই পাশে বাসা দেখতে দেখতে সামনে এগুচ্ছেন তারা। রাস্তার বাম পাশে একটি ছয়তলা বাড়ি। গেটের সামনে একটি পোস্টারে লেখা ‘টু লেট’, পঞ্চম তলায় দুই কক্ষের বাসা ভাড়া হবে। নিচে একটি ফোন নম্বর দেয়া। সেই নম্বরে ফোন করলেন সাজিদ হোসেন। ফোন ধরলেন বাসার মালিক, কয় রুমের বাসা, ভাড়া কত, কী কী সুবিধা আছে সবই বর্ণনা করলেন বাসার মালিক।

সাজিদ বলেন, আঙ্কেল বাসাটা একটু দেখতে চাই। মালিক বলেন- পঞ্চম তলায় চলে আসেন, আমি তিন তলায় থাকি উপরে যাচ্ছি। এবার বাসার মালিক পঞ্চম তলার ফ্ল্যাটটি ঘুরে দেখালেন। জানিয়ে দিলেন, ১২ হাজার টাকা ভাড়া, গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ বিল আলাদা। সঙ্গে এক মাসের ভাড়া অগ্রিম দিতে হবে।সবই ঠিকঠাক প্রায়। বিপত্তি বাধল যখন বাসার মালিক জানতে চাইলেন পরিবারের কয়জন সদস্য থাকবে? সাজিদ উত্তর দিলেন, আমরা চার বন্ধু থাকব। আমরা ব্যাচেলর।

এ কথা শুনে যেন তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন বাসার মালিক। স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন আমরা ব্যাচেলরদের ভাড়া দেই না। এটা ফ্যামিলি বাসা। আমার বাসা যদি তিন-চার মাস ফাঁকাও থাকে, তবুও ব্যাচেলরদের ভাড়া দেব না।

রাজধানীতে বসবাস করেন এমন কোনো ব্যাচেলর বাসা ভাড়া নিয়ে এমন ঘটনার সম্মুখীন হয়নি খুঁজে পাওয়া যাবে না। মফস্বল থেকে ঢাকায় পড়াশোনা অথবা চাকরির জন্য আসা ব্যাচেলরদের থাকার জায়গা বা বাসা ভাড়া নিয়ে এটা দীর্ঘদিনের সমস্যা। নানা কারণে তাদের কাছে বাসা ভাড়া যেন সোনার হরিণ খোঁজার মতো।

লাখ লাখ ব্যাচেলরকে থাকার জন্য বাসা খুঁজে পেতে প্রতিনিয়ত এমন সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। যদি কোনো কারণে ব্যাচেলররা একটি বাসা পেয়ে যান তবুও বাসার মালিকদের নানা কড়াকড়ি, অধিক ভাড়া, নিয়ম-কানুনের মধ্যে থাকতে হয়। এরপরও নানা সমস্যা তাদের পিছু ছাড়ে না। বাজার করা, বুয়া খোঁজা, কাপড় ধোয়া নানা সমস্যা।

ব্যাচেলরদের এমন নানা সমস্যার কথা মাথায় রেখে বাংলাদেশে প্রথম আন্তর্জাতিক মানের হোস্টেল ‘সুপার হোস্টেল বিডি’ তৈরি হয়েছে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়। ছাত্রছাত্রী ও চাকরিজীবী ব্যাচেলরদের জন্য সুপার হোস্টেলে এয়ার কন্ডিশন (এসি) রুম, তিনবেলা খাবার, জিম, ওয়াশিং মেশিন ও ড্রাইয়ার, হাইস্পিড ইন্টারনেট, এলইডি টিভি, কমনরুম ও রিডিংরুম এবং ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তায় রাখার সেবা দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।

ইট, পাথর, কংক্রিট আর ধুলার নগরী ঢাকা। এ নগরে নিজের ঘরের ছোট্ট জানালা দিয়ে শুধু এক চিলতে আকাশ ছাড়া আর কিছু দেখার সুযোগ নেই। তবুও অনেক রুমে এই সুযোগও নেই। কোটি মানুষের এ নগরে যারা পড়াশোনা করতে আসেন কিংবা পড়াশোনা শেষ করে চাকরিজীবনেও ব্যাচেলর হিসেবে ঢাকায় থাকতে চান, তাদের জীবনটা অন্যদের থেকে একটু বেশিই দুর্বিষহ।

বৃহত্তর ঢাকার বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় দুই কোটি ছুঁই ছুঁই। সেখানে ব্যাচেলর চাকরিজীবী এবং শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১০ লাখেরও বেশি। এই নগরে মাথা গোঁজার মতো ছোট্ট একটি ঠাঁই পাওয়া যেমন দুষ্কর, তেমনি প্রতিদিনের বাজার করা, একজন বিশ্বস্ত বুয়া পাওয়া কিংবা কাপড় কাচা থেকে শুরু করে ব্যাচেলরদের জীবনে আরও কত না সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। তাদের যেন ব্যাচেলর জীবনের বিড়ম্বনার অন্ত নেই। এমন সব বিড়ম্বনার কথা মাথায় রেখে ব্যাচেলরদের সমস্যা সমাধানে নিউওয়েস ইন্টারন্যাশনালের বিজনেস ডেভেলপমেন্ট বাংলাদেশের প্রথম আন্তর্জাতিক মানের হোস্টেল ‘সুপার হোস্টেল বিডি’ সেবাটি চালু করেছে।

সুপার হোস্টেল বিডির পক্ষ থেকে জানানো হয়, এখানে আছে সাশ্রয়ী মূল্যে উচ্চমানের আধুনিক জীবন যেমন শীততাপ নিয়ন্ত্রিত রুম, স্বাস্থ্যকর খাবার, হাইস্পিড ইন্টারনেট, এলইডি টিভি, রিডিংরুম, ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তা, জিম, থ্রি-স্টার লবিসহ ২৫টিরও অধিক সুবিধা নিয়ে সুপার হোস্টেল বিডি জীবনযাত্রার সার্বিক উন্নয়নে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি ছেলেদের জন্য উত্তরা, বারিধারা, মধ্যবাড্ডা, মিরপুর ও শাহবাগে পাঁচটি ব্রাঞ্চ এবং মেয়েদের জন্য মিরপুরে একটি ব্রাঞ্চ চালু করেছে। স্ট্যান্ডার্ড ক্লাস মাত্র ৬,৯৯৯ টাকা এবং বিজনেস ক্লাস মাত্র ৭,৯৯৯ টাকায় ব্যাচেলরদের জন্য এ যেন সাধ্যের মাঝে ঝামেলাবিহীন আভিজাত্য জীবন।

নিউওয়েস ইন্টারন্যাশনালের বিজনেস ডেভেলপমেন্ট প্রধান মো. সোহাগ খান জাগো নিউজকে বলেন, ব্যাচেলরদের দুর্বিষহ জীবন থেকে রক্ষা করতে নিওয়েজ ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি লিমিটেড নিয়ে এসেছে বাংলাদেশের প্রথম আন্তর্জাতিক মানের হোস্টেল ‘সুপার হোস্টেল বিডি’। এখানে না আছে বাজার করার দুশ্চিন্তা, না আছে কাপড় ধোয়ার চিন্তা। এমনকি বাসা পরিবর্তনের ঝামেলাও আপনাকে পোহাতে হবে না। এই যেমন ধরুন আপনি কোনো কারণে উত্তরা থেকে মিরপুরে স্থানান্তর করতে চান, সেক্ষেত্রে শুধু একটি ফর্ম পূরণের মাধ্যমেই খুব সহজে সুপার হোস্টেলের উত্তরা ব্রাঞ্চ থেকে মিরপুর ব্রাঞ্চে এ চলে যেতে পারেন।

সুপার হোস্টেল বিডি বাড্ডা শাখায় একজন আবাসিক সদস্য হিসেবে থাকেন হাসিবুর রহমান। তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। হাসিবুর রহমান বলেন, আগে মেসে থাকতাম তখন বাজার করতে হতো, কাপড়-চোপড় ধুইতে হতো, খাবারের মান ভালো ছিল না। এরপর বন্ধুরা মিলে বাসা খুঁজতে শুরু করলাম। কমপক্ষে ৫০টা বাসা দেখেছি, কিন্তু আমাদের মতো ব্যাচেলরদের কেউ বাসা ভাড়া দেবে না। এমন সময় এক বন্ধুর পরামর্শে সুপার হোস্টেল দেখতে আসি, পছন্দ হওয়ায় উঠে পড়ি এখানে। এখানে খুব ভালো পরিবেশ। ২৫টিরও অধিক সুবিধা আছে এখানে। মনে হয়ে আধুনিক কোনো হোটেলে বসবাস করছি আমরা। আমাদের মতো ব্যাচেলরদের জন্য এ সুপার হোস্টেল ব্যাপক সুবিধা করে দিয়েছে।

ব্যাচেলরদের এমন সমস্যার বিষয়ে বাংলাদেশ সাধারণ নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক মহিউদ্দীন আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, রাজধানীতে ব্যাচেলরদের আবাসন সমস্যা একটি বড় সমস্যা। লাখ লাখ ব্যাচেলর রাজধানীতে বসবাস করে, তাদের কোনো বাসার মালিক সচরাচর ভাড়া দিতে চান না। যদি কোনো মালিক বাসা ভাড়া দেন তাহলে অধিক ভাড়াসহ নানা কড়াকড়ির মধ্যে তাদের রাখে। এছাড়া যেসব মেস রয়েছে সেগুলোতে তাদের গাদাগাদি করে থাকতে হয়। সবকিছু মিলিয়ে রাজধানীতে ব্যাচেলরদের খুবই খারাপভাবে থাকতে হয়। এ অবস্থায় সুপার হোস্টেলের এমন সেবা-কার্যক্রম আসলেই প্রশংসার দাবিদার। এছাড়া ব্যাচেলরদের চাহিদা এবং এই বিশালসংখ্যক ব্যাচেলরের কথা মাথায় রেখে সুপার হোস্টেলের মতো আরও অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠা উচিত।

ad

পাঠকের মতামত