300168

যে কষ্ট নিয়েই চলে গেলেন সেই নারী ব্যাংকার

গেল সোমবার (২৬ ‍আগস্ট) প্রাইম ব্যাংকে কর্মরত অবস্থায় না ফেরার দেশে চলে যান গহর জাহান। হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর সহকর্মীরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। তবে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। প্রাইম ব্যাংকের উত্তরার জসীমউদদীন রোড শাখা কার্যালয়ের সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়া গহর জাহানের অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওটি দেখার পর অনেকেই সমবেদনা জানিয়েছেন। হঠাৎ এমন করে মৃত্যু গহরের পরিবারেও এনে দিয়েছে শোক।

ওই ভিডিওটিতে দেখা যায়, বেলা ১২টা ৩৩ মিনিটের সময় ওই নারী কর্মকর্তার ডেস্কে আসেন একজন নারী গ্রাহক। ওই নারী গ্রাহকের কাছ থেকে একটি কাগজ নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখছিলেন গহর জাহান। এসময় একাধিকবার গালে, নাকে-মুখে, চোখে হাত দিতে দেখা যায় তাকে। পাশে রাখা গ্লাস থেকে তিনবার পানি পান করেন তিনি। আরেকবার পানি পানের সময় তার মাথা সামনে ঝুঁকে আসে। এসময় টেবিলে মাথা রেখে নুইয়ে পড়েন তিনি।

সঙ্গে সঙ্গে ওই নারী গ্রাহকসহ আশপাশের সহকর্মীরা এগিয়ে আসেন। তাকে সোজা করে চেয়ারে বসানোর চেষ্টা করেন একজন। কিন্তু চেয়ার থেকে নিচে পড়ে যান গহর জাহান। অন্যান্য সহকর্মীরা ছুটে এসে তাকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন। পরে সেখানে রেখেই কিছুক্ষণ তার সেবা শুশ্রূষা করেন সহকর্মীরা। প্রায় ১০ মিনিট পর তাকে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা করেন তারা।

ব্যাংকটির সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার ছিলেন গহর জাহান। তার বয়স হয়েছিল ৪৪ বছর। অনার্সে থাকতে হয়েছে তার ওপেন হার্ট সার্জারি। ফলে দেখতে সুশ্রী থাকা সত্ত্বেও বিয়ের পিঁড়িতে বসতে পারেননি তিনি। ৫ ভাই তিন বোনের মধ্যে বোনদের সবার ছোট ছিল গহর। থাকতেন ভাইদের সঙ্গেই। তাদের গ্রামের বাড়ি রাজশাহী শহরের মহিষবাথান এলাকায়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভিদ বিজ্ঞানে লেখাপড়া করে ২০০১ সালে চাকরিতে যোগ দেন তিনি।

বিয়ের প্রস্তাব আসলেও ওপেন হার্ট সার্জারির কথা শুনে কেউই আর বিয়েতে রাজি হত না এসব কথা জানালেন গহরের ভাই তথ্য মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইন্সটিটিউটের পরিচালক মো. মারুফ নাওয়াজ।

মারুফ নাওয়াজ বলেন, প্রত্যেক মেয়ের স্বপ্ন থাকে নিজের একটি ছোট্ট সুন্দর সংসার হবে। স্বামী সন্তান নিয়ে সুখে থাকবে। কিন্তু আমাদের দেশে সেই ছেলেটা আজও জন্মালো না। যে আমার বোনের শারীরিক এই তুচ্ছ দুর্ঘটনাকে আপন করে নিবে। এটা শুধু আমার নয় আমার পুরো পরিবারের দুঃখ। তিনি আরো বলেন, দিনে রাতে যে কারো কোনো বিপদে ছুটে যেতেন। বলতেন, মাদার তেরেসা যেভাবে নিজের জীবন মানব সেবায় ব্যয় করেছে আমিও সেভাবে মানবতার সেবায় জীবনকে উৎসর্গ করতে চাই।

বোন হিসেবে সে ছিল অসাধারণ। অনেকটা মায়ের মত। আমার ছোট দুই ভাইকে পড়ালেখা থেকে শুরু করে বিদেশে পাঠানো সবকিছুই আমার এই বোন করেছে। মা আমাদের জন্ম দিলেও ছোট ভাই বোনদের প্রতি সে এত যত্নশীল এবং কেয়ারিং ছিল যেটা বোঝানো অসম্ভ।

ad

পাঠকের মতামত