298249

মোহাম্মদ মুরসি মুসলিম বিশ্বের নেতা হওয়ার গল্প

মিসরের পঞ্চম প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি। এর আগে সর্বশেষ প্রেসিডেন্ট ছিলেন সাবেক স্বৈরশাসক হোসনি মোবারক। তিনি প্রচণ্ড গণআন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন। এবারের নির্বাচন ছিল গত ৬০ বছরের সামরিক শাসনের মধ্যে প্রকৃতপক্ষে প্রথমবারের মতো বহুদলীয় নির্বাচন।

৬০ বছরের ইতিহাসে প্রেসিডেন্ট হিসেবে মিসর শাসন করেছেন মোহাম্মাদ নাগিব, জামাল আবদুন নাসের, আনোয়ার সাদাত ও হোসনি মোবারক। তারা সবাই সামরিক বাহিনী থেকে অভ্যুত্থান প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেছিলেন।

মিসরের সাবেক এই প্রেসিডেন্ট মারা গেছেন। সোমবার আদালতে শুনানি চলাকালে হঠাৎ অচেতন হয়ে তিনি মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর। খবর বিবিসি। খবরে বলা হয়, মোহাম্মদ মুরসি আদালতে বিচারকের কাছে কথা বলার অনুমতি চাইলে তাকে অনুমতি দেয়া হয়।

প্রায় ২০ মিনিট বক্তব্য রাখার পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ সময় তাকে উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

কে এই মুরসি?-মুহাম্মাদ মুরসি ২০ অগাস্ট, ১৯৫১ তারিখে উত্তর মিশরের শারক্বিয়া প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কায়রো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৫ সালে প্রকৌশল বিষয়ে স্নাতক ও ১৯৭৮ সালে একই বিষয়ে সম্মান ডিগ্রী লাভ করেন।

এ বছরই তিনি উচ্চ শিক্ষার্থে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যান। ১৯৮২ সালে ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ ক্যালিফোর্নিয়াতে মুহাম্মাদ মুরসির প্রকৌশল বিষয়ে গবেষণা শেষ হয় এবং তিনি ডক্টরেট ডিগ্রী লাভ করেন।

এ বছরই তিনি ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি, নর্থরিজে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। অধ্যাপনা ছাড়াও ইমাম হিসেবে খ্যাতি আছে তার।

১৯৮৫ সালে মুরসি শারকিয়া প্রদেশের জাগাজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেয়ার উদ্দেশ্যে ক্যালিফোর্নিয়ার অধ্যাপনার চাকরি ছেড়ে মিশরে চলে আসেন। মুহাম্মাদ মুরসির পাঁচ সন্তানের মধ্যে দুই জন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করেন এবং জন্মসূত্রে তারা মার্কিন নাগরিক।

রাজনৈতিক জীবন-২০০০ সালে মুহাম্মাদ মুরসি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সাংগঠনিকভাবে তিনি মুসলিম ব্রাদারহুডের সদস্য হলেও, নির্বাচনে তাকে ব্রাদারহুডের অন্যান্য নেতাদের মত আইনত স্বতন্ত্র ভাবে লড়তে হয় কারণ হোসনি মুবারাকের শাসনামলে মুসলিম ব্রাদারহুড মিশরের প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে নিষিদ্ধ ছিল।

মুরসি ব্রাদারহুডের গুরুত্বপূর্ণ গাইড্যান্স অফিসের প্রধান হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন, যার পরিণতিতে ২০১১ সালে ব্রাদারহুডের প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক দল ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টি গঠনের পর তিনিই দলটির চেয়ারম্যান পদ লাভের জন্য সবচেয়ে সম্ভাব্য ছিলেন।

মিশরের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ২০১২ মূলত দলীয় উপনেতা ও রাজনৈতিক প্রধান খাইরাত এল-শাতেরই ছিলেন মুসলিম ব্রাদারহুডের মূল রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী। কিন্তু একটি আদালত প্রচারণা শুরুর আগে শাতের সহ একাধিক প্রার্থীকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করলে ব্রাদারহুড বা এফজেপি প্রার্থী হিসেবে মুহাম্মাদ মুরসির নাম উঠে আসে, যিনি মূলত সংগঠনটির দ্বিতীয় মনোনয়ন ছিলেন। পরে এফজেপি মুরসিকে তাদের প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করে।

ব্রাদারহুডের এক দলত্যাগী জনপ্রিয় নেতার অংশগ্রহণ সত্ত্বেও মুহাম্মাদ মুরসি ২৩ মে, ২০১২ এর নির্বাচনে ২৫.৫ শতাংশ ভোট পান, যা ছিল সর্বোচ্চ। প্রথম পর্বের পর মুহাম্মাদ মুরসি এবং আহমেদ শফিক দ্বিতীয় পর্বের চূড়ান্ত ভোটাভুটির জন্য মনোনীত হন।

দ্বিতীয় পর্বের নির্বাচনের আগে মুহাম্মাদ মুরসি মিশরের সর্বস্তরের মানুষের প্রতি আহমেদ শফিকের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার আহবান জানান। মুরসির রাজনৈতিক দল আহমেদ শফিককে, যিনি সাবেক বিমান বাহিনী প্রধান যিনি হোসনি মুবারাকের অধীনের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, ক্ষমতাচ্যুত মুবারাকের রক্ষাকর্তা হিসেবে আখ্যায়িত করে প্রচার করে, শফিক নির্বাচিত হলে মিশরের ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসন নতুন জীবন পাবে।

৩০ মে, ২০১২ তারিখে মুহাম্মাদ মুরসি মিশরীয় টেলিভিশন উপস্থাপক তাওফিক ওকাশার বিরুদ্ধে একটি মানহানি মামলা করে বলেন, ওকাশা ইচ্ছাকৃত ভাবে ভুল তথ্য উপস্থাপন করে মুরসি ও তার রাজনৈতিক দলের সম্মানহানি করেছে।

মিশরীয় গণমাধ্যমের সূত্রমতে, ওকাশা ২৭ মে তারিখে প্রায় তিন ঘন্টা ব্যাপী একটি টেলিভিশন বক্তব্যে মিশরে ‘ইসলামপন্থীদের হাতে খ্রিষ্টানদের হত্যাকান্ডের’ প্রমাণাদি তুলে ধরে প্রশ্ন করেন, হত্যাকারীরা কীভাবে দেশ চালাবে। উল্লেখ্য, বিতর্কিত প্রমাণাদিগুলোতে ইসলামপন্থী হিসেবে মূলত মুসলিম ব্রাদারহুডকে ইঙ্গিত করা হয়েছিল।

২৪ জুন, ২০১২ তারিখে মুরসিকে দ্বিতীয় পর্বের নির্বাচনে জয়ী, অর্থাৎ রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়। এর পরপরই মুরসি মুসলিম ব্রাদারহুড ও ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টি থেকে আনুষ্ঠানিক অব্যাহতি গ্রহণ করেন।

ad

পাঠকের মতামত