297300

আদম ব্যাপারির খপ্পরে পড়ে টাকার সঙ্গে স্বামীও হারালেন নাজমা

নিউজ ডেস্ক।। বিয়ের পর যৌবনের অধিকাংশ সময় প্রবাসে কাটিয়েছেন পাবনার নাজমা বেগম। দাম্পত্য জীবনে এক কন্যার জননী তিনি। মেয়েকে বিয়েও দিয়েছেন কিছুদিন আগে। সংসারে সচ্ছলতা আনতে তাই প্রবাসে পাড়ি দেওয়ার চিন্তা করেন আবারও। তবে এবার আর একা নন, সঙ্গে স্বামী মাজেদ আলীকেও নিতে চেয়েছিলেন। এ চিন্তা থেকে পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে যোগাযোগ করেন আদম ব্যাপারি মহিউদ্দিন বুলুর সঙ্গে। শেষ পর্যন্ত তার খপ্পরে পড়ে নাজমা হারান তার স্বামী মাজেদকে, সঙ্গে ২ লাখ টাকা।

মাজেদ হত্যার ঘটনাটি এতদিন ক্লুলেস ছিল। কিন্তু র‌্যাবের অভিযানে হত্যার কারণ উদঘাটনসহ হত্যায় জড়িত আদম ব্যাপারি মহিউদ্দিন বুলুসহ গ্রেফতার হয় ৩ খুনি। গ্রেফতার অন্য দু’জন হলো বুলুর দূরসম্পর্কের ভাগ্নে সুলতান মাহমুদ বাবু ও মাজেদ হত্যায় ব্যবহূত ইঞ্জিনচালিত নৌকার মাঝি সোহেল। সোহেল সোমবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

গত ৮ এপ্রিল রাতে ফতুল্লার শিবু মার্কেট এলাকা থেকে বুলুকে, ১০ মে দাউদকান্দি বাজার থেকে নৌকার মাঝি সোহেলকে এবং মঙ্গলবার ভোররাতে গজারিয়ার নিজ বাড়ি থেকে সুলতান মাহমুদ বাবুকে গ্রেফতার করা হয়।

মঙ্গলবার দুপুরে র‌্যাব-১১-এর প্রধান কার্যালয় সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল কাজী শমসের উদ্দিন বলেন, ‘ঘটনার মূল নায়ক আদম ব্যাপারি মহিউদ্দিন বুলু। তার সঙ্গে নিহত মাজেদ আলীর স্ত্রী নাজমা বেগমের পূর্বপরিচয় ছিল। সৌদি আরবে প্রবাসী ছিলেন তিনি। সে কারণেই আদম ব্যাপারি বুলুর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বিদেশে যাওয়ার জন্য ২ লাখ টাকা তুলে দেন বুলুর হাতে। কিন্তু বুলু তাদের বিদেশে না পাঠিয়ে টালবাহানা শুরু করে।

বুলু ২ লাখ টাকা আত্মসাতের জন্য তার দূরসম্পর্কের ভাগ্নে সুলতান মাহমুদ বাবুকে ১ লাখ টাকায় ভাড়া করে মাজেদ আলীকে হত্যার জন্য। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গত ১০ মার্চ দুপুরে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে মাজেদ আলীকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যায় বুলু। রাতে বুলু একা ফিরে এলেও মাজেদ আলী না ফেরায় স্বামীর খোঁজ চান নাজমা। তখন সে নাজমাকে জানায়, তাদের মধ্যে ঝগড়া হলে এক পর্যায়ে মাজেদ বুলুর হাতের আঙ্গুলে কামড় দেয়। এরপর সে কোথায় গেছে তা বুলু জানে না। রাত বাড়তে থাকলেও মাজেদ বাড়ি না ফেরায় নাজমা বুলুর কাছে স্বামীর খোঁজ জানতে চাইলে বুলু কৌশলে পালিয়ে যায়। এরপর নাজমা ১৩ মার্চ ফতুল্লা মডেল থানায় স্বামী নিখোঁজের বিষয়ে একটি জিডি করেন। পরে বিষয়টি র‌্যাবকে অবহিত করলে র‌্যাব তদন্ত শুরু করে।

র‌্যাবের তদন্তে প্রথমেই গত ৮ এপ্রিল ফতুল্লা শিবু মার্কেট থেকে আদম ব্যাপারি বুলুকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু বুলু র‌্যাবকে বার বার বিভ্রান্ত করায় তার কাছ থেকে মাজেদ নিখোঁজের বিষয়ে কোনো তথ্য জানতে পারেনি তারা। পরে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে এবং বুলুর মোবাইল ফোন ট্র্যাক করে দাউদকান্দি এলাকায় সোহেল নামে এক নৌকার মাঝির সন্ধান পায়। গত ১১ মে সোহেলকে গ্রেফতারের পর বেরিয়ে আসে মাজেদ আলী হত্যার নৃশংস কাহিনী।

সোহেল র‌্যাবকে জানায়, গত ১০ মার্চ তাকে ১ হাজার টাকায় ঘোরার জন্য ভাড়া করে তাদের এলাকার জামাই হিসেবে পরিচিত সুলতান মাহমুদ বাবু। সেদিন সকালে বাবু নৌকা নিয়ে ঘুরতে বের হলেও দুপুরের পর তার নৌকায় উঠে বাবুর পরিচিত বুলু ও মাজেদ আলী। সারাদিন পর রাতে ফেরার সময় নৌকাটি মেঘনা নদীর গোয়াগাছিয়া এলাকায় পৌঁছলে বাবু নৌকার ছাউনির বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা মাজেদ আলীকে জোর করে ছাউনির ভেতরে নিয়ে যায়। পরে বুলু ও বাবু দু’জনে মিলে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে, তারপর লাশ ফেলে দেয় মেঘনা নদীতে। গজারিয়া এসে তাকে ১ হাজার টাকা দিয়ে বুলু ও বাবু নৌকা থেকে নেমে যায়।

এদিকে মঙ্গলবার ভোরে গজারিয়া নিজ বাড়ি থেকে বাবুকে গ্রেফতারের পর সে র‌্যাবকে জানায়, নাজমা বেগমের ২ লাখ টাকা আত্মসাতের জন্য বুলু তাকে ১ লাখ টাকায় মাজেদ আলীকে হত্যার জন্য ভাড়া করে। টাকার লোভে বুলুর প্রস্তাবে রাজি হয় সে। উৎস: সমকাল।

ad

পাঠকের মতামত