297175

রাসেল হত্যা : চাকু সরবরাহ করেছিল পিংকি

রাজধানীর কদমতলী এলাকায় ২০১৫ সালের ১১ অক্টোবর সংঘঠিত ক্লুলেস রাসেল হত্যা মামলার তিন আসামিকে গ্রেফতারের পর রহস্য উদঘাটনের দাবি করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। রাসেল হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি সজল ওরফে পিচ্চি সজল (২২) ও হুন্ডা বাবুকে (২৫) আগেই গ্রেফতার করা হয়।

তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে অস্ত্র সরবরাহকারী পিংকি আক্তার ও স্বামী জহিরুল হক সানুকে (২৮) শনিবার গ্রেফতার করেছে পিবিআইএর ঢাকা মেট্রো (উত্তর) টিম। চট্টগ্রামের ইপিজেড থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

পিবিআই সূত্রে জানা গেছে, রাসেল (২২) খুলনায় তার গ্রামের বাড়িতে কৃষি কাজ করতেন। মায়ের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা নিয়ে ২০১৫ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসে চাকরির সন্ধানে। এর দু’দিন পর রাত ১১টার দিকে রাসেলের মা রাশিলা বেগম (৪০) মোবাইল ফোনে জানতে পারেন রাসেল খুন হয়েছেন এবং তার মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে।

ঢাকায় আসার পর রাসেলের মা স্থানীয় সূত্রে জানতে পারেন, কদমতলী থানাধীন বড়ইতলা মোড়ে অজ্ঞাতদের ছুরিকাঘাতে মারা যায় রাসেল। ওই ঘটনায় রাশিলা বেগম অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে কদমতলী থানার মামলা করেন। মামলা নং-১৯। কদমতলী থানা পুলিশ সুরতহাল শেষে মরদেহ মর্গে পাঠায়।

কদমতলী থানা পুলিশ তদন্ত শেষে ঘটনাটি পেনাল কোডের ৩০২/৩৪ ধারার অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হলেও কে বা কারা জড়িত তা উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি উল্লেখ করে ২০১৭ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করে। তবে খুনের ঘটনার রহস্য উদঘাটিত না হওয়ায় চূড়ান্ত রিপোর্টের বিরুদ্ধে ভিকটিমের মা আদালতে নারাজির আবেদন করেন। এরপর আদালতের আদেশে পিবিআই, ঢাকা মেট্রোর (উত্তর) এসআই আল-আমিন শেখ মামলাটির তদন্ত শুরু করেন।

পিবিআই ঢাকা মেট্রোর (উত্তর) বিশেষ পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ জানান, মামলার তদন্তভার গ্রহণ করে ক্লুলেস রাসেল হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে ব্যাপক তদন্ত করে এসআই আল আমিন।

গত ৯ ফেব্রুয়ারি বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ থানার আমতলী এলাকা থেকে সজল ওরফে পিচ্চি সজলকে আটক করে ও তার দেয়া তথ্যে ওই দিন রাতে রাসেল হত্যায় জড়িত আরেক আসামি হোসেন বাবু ওরফে হুন্ডা বাবুকে শ্যামপুর থানাধীন হাজিগেট ব্যাংক কলোনি থেকে গ্রেফতার করে।

ওই ঘটনায় গ্রেফতার তিনজন ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে তারা বলেন, হত্যাকাণ্ডে মাদক ব্যবসায়ী পিংকি ও তার স্বামী জহিরুল হক জড়িত। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত তিনটি চাকু পিংকি সরবরাহ করেছিল।

গতরাতে চট্টগ্রামের ইপিজেড থানা এলাকা থেকে পিংকি আক্তার ও স্বামী জহিরুল হককে গ্রেফতারের পর ঘটনার মূল রহস্য বেরিয়ে আসে।

জিজ্ঞাসাবাদে পিবিআই জানতে পারে, রাসেলের বাড়ি খুলনা জেলার রূপসা থানা এলাকায়। গ্রেফতার সজলও একই গ্রামে বিয়ে করেন। সেই সুবাদে উভয়ের মধ্যে সু-সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সজল বিভিন্ন মামলার পলাতক আসামি হওয়ায় প্রায়ই রাসেলের বাসায় রাত্রী যাপন করতেন। রাসেলকে সজল টায়ারের ফ্যাক্টরিতে চাকরি দেয়ার কথা বলে ঢাকায় নিয়ে আসেন। তবে চাকরি দিতে না পারায় তাদের মধ্যে মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়।

পিচ্চি সজলের পরিচিত পিংকি ও পারভেজ কদমতলী ও শ্যামপুর থানা এলাকার মাদক ও অস্ত্র ব্যবসায়ী। পিংকি ও পারভেজের মধ্যে এলাকার মাদক ব্যবসার প্রভাব বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল।

বিরোধের জেরে পিংকি পারভেজকে খুন করার জন্য বাবু ওরফে হুন্ডা বাবু ও পিচ্ছি সজলদের ভাড়া করে। তারা পারভেজকে খুন করার উদ্দেশে সুকৌশলে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ২০১৫ সালের ১০ অক্টোবর রাতে পিচ্ছি সজল, হুন্ডা বাবু, জুয়েল, আল-আমিন একত্রিত হয় কদমতলী থানাধীন বড়ইতলা মোড়ে।

মনোমালিন্যের শোধ নিতে সেখানে পিচ্ছি সজল কৌশলে রাসেলকেও নিয়ে আসে। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ইয়াবা সেবন শেষে পারভেজ ও রাসেলকে এলোপাথারি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় পিচ্ছি সজল, হুন্ডা বাবু, জুয়েল, আল-আমিন। গুরুতর অবস্থায় পারভেজ ও রাসেলকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে রাসেল মারা যান।

জিজ্ঞাসাবাদে পিংকি আক্তার ও জহিরুল হক জানান, তারা শ্যামপুর এলাকার বাসিন্দা। তারা ঘন ঘন তাদের ঠিকানা পরিবর্তন করেন। পিংকি আগে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, তারপর কদমতলী ও বর্তমানে শ্যামপুর এলাকায় বসবাস করছেন। কদমতলী, শ্যামপুর ও দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা এলাকায় তাদের প্রধান পেশা মাদক ও অস্ত্রের ব্যবসা। পিংকি স্থানীয়ভাবে মাদক সম্রাজ্ঞী হিসেবে পরিচিত। পিংকি ও পারভেজের মধ্যে এলাকার মাদক ব্যবসার প্রভাব বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। বিরোধের জেরে পিংকি পারভেজকে খুন করার জন্য হুন্ডা বাবু ও পিচ্ছি সজলদের ভাড়া করে এবং তিনটি চাকু সরবরাহ করে।

পিংকি আক্তার ও তার স্বামী জহিরুল হকের বিরুদ্ধে খুন, হত্যা চেষ্টা ও মাদকসহ একাধিক মামলা রয়েছে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত অন্য সহযোগীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

ad

পাঠকের মতামত