296570

ফণীর আঘাতে ভারতে ১৫ জনের মৃত্যু

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ শুক্রবার ফণী তাণ্ডব চালিয়েছে ভারতে। ফণীর আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে ওড়িশা। সেখানে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ জনে। ১২ লাখ মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়ায় বহু মানুষকে রক্ষা করা গেছে। তবে যতই দিন গড়াচ্ছে ততই মৃতের সংখ্যা বাড়ছে।

ওড়িশার ধ্বংসলীলা সরেজমিনে দেখতে সোমবার সেখানে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গতকালই রাজস্থান থেকে তিনি ওড়িশার জন্য আগাম ১০০০ কোটি টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা দিয়েছেন। এক টুইট বার্তায় মোদি জানিয়েছেন, সোমবার তিনি ওড়িশায় গিয়ে পুরো পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখবেন।

প্রাথমিকভাবে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমান পরিস্কার ছিল না। কিন্তু ধীরে ধীরে সামনে আসছে ফণীর আঘাতে বিধ্বস্ত ওড়িশার পুরো চিত্র।কোথাও উপড়ে গেছে গাছ। কোথাও উড়ে গিয়েছে চাল। কোথাও আবার ঝড় উড়িয়ে নিয়ে গেছে বাড়ি-গাড়ি। এছাড়া একাধিক জায়গায় বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়ায় বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে নেই বিদ্যুৎ সংযোগও। স্তব্ধ হয়ে গেছে যোগাযোগ ব্যবস্থাও।

ফণীতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে রেল পরিষেবাও। ওড়িশা থেকে কোনও দূরপাল্লার ট্রেন চলছে না। এছাড়া বন্ধ রয়েছে দক্ষিণ ভারতগামী অধিকাংশ ট্রেন। বিধ্বস্ত অবস্থা ভুবনেশ্বর বিমানবন্দরেরও। জায়গায় জায়গায় ভেঙে গিয়েছে শেড। চুরমার হয়ে ভেঙে পড়েছে বিমানবন্দরের জানালার কাঁচ।

প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরোর ডিরেক্টর জেনারেল সীতাংশু কর টুইট করে জানিয়েছেন, যত দ্রুত সম্ভব ভুবনেশ্বর বিমানবন্দর আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে কাজ করে যাচ্ছে এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়ার একটি বিশেষ দল। শনিবার দুপুরের মধ্যে বিমান চলাচল চালু হয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

শুক্রবার ফণীর প্রথম ছোবল আছড়ে পড়েছিল ওড়িশা উপকূল, পুরী এবং আশপাশের এলাকায়। শুক্রবার সকালেই ওড়িশায় ঢুকে পড়ে ‘অত্যন্ত তীব্র’ গতির এই ঘূর্ণিঝড়। পুরী, ভুবনেশ্বর, কটক, কেন্দ্রপাড়ার শহর এবং গ্রাম তছনছ করে দিয়েছে ফণী।

১৯৯৯ সালের সুপার সাইক্লোনের পর এত ভয়ঙ্কর ঝড় দেখেনি ওড়িশার মানুষ। গত ২৫ মে বঙ্গোপসাগরে কেন্দ্রীভূত হয়ে শক্তি বাড়াচ্ছিল ফণী। এই অঞ্চলের ঘূর্ণিঝড় স্থলভূমিতে পৌঁছনোর জন্য সাধারণত সময় নেয় ৪ থেকে ৭ দিন। কিন্তু ফণী সময় নিয়েছে বেশি, প্রায় দশদিন। সম্ভাব্য পথও বদলেছে। তামিলনাড়ুর পথ বদলে ধেয়ে গেছে ওড়িশার দিকে।

লম্বা সময় নেওয়ায় এর শক্তিও বেড়েছে। শুক্রবার সকালে ঘণ্টায় ১৭৫ থেকে ১৮০ কিমি বেগে ওড়িশার উপকূলে আছড়ে পড়ে ফণী। ঝড়ের কেন্দ্র ছিল ২৬ কিমি দীর্ঘ। এর সঙ্গে ছিল তুমুল বৃষ্টিপাত। কিছু নিচু জায়গায় ঢুকে পড়েছে সমুদ্রের পানি।কোথাও গাছপালা, বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে গেছে আবার কোথাও কাঁচা বাড়িঘর ধ্বংস করে ছুটেছে ফণী। ভুবনেশ্বরে ২৫০ ফুট উচ্চতার একটি ক্রেন প্রবল বাতাসের চাপ সহ্য করতে না পেরে ঘরবাড়ির ওপর ভেঙে পড়ছে। কটকে গোড়া থেকে উপড়ে গেছে মোবাইল টাওয়ার।

বহু জায়গায় রেললাইন উপড়ে গেছে। রাস্তার ওপর ভেঙে পড়েছে টাওয়ার, বিদ্যুতের খুঁটি। পুরী, ভুবনেশ্বরের প্রবীণদের অনেকেই বলছেন, প্রকৃতির এমন ভয়ানক রূপ আগে কখনও দেখেননি তারা। শহরাঞ্চলেই এমন দৃশ্য দেখা গেছে। গ্রামাঞ্চলের অবস্থা আরও শোচনীয় বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

শুক্রবার সকালে ওড়িশায় তাণ্ডব চালিয়ে ফণী এগোতে থাকে পশ্চিমবঙ্গের দিকে। শুক্রবার মধ্যরাতে পশ্চিমবঙ্গে আঘাত হানে ফণী। ঘণ্টায় প্রায় ৯০ কিলোমিটার বেগে খড়গপুরে শক্তিশালী ঝড় হিসেবেই আছড়ে পড়ে ঘূর্ণিঝড়টি। সেখানে তাণ্ডব চালানোর পর হুগলির আরামবাগের দিকে অগ্রসর হয় সেটি। এরপরেই তা ধীরে ধীরে নদীয়া ও মুর্শিদাবাদ হয়ে আঘাত হানে প্রতিবেশী বাংলাদেশে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ফণীর তাণ্ডবে ১৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

ad

পাঠকের মতামত