295686

ছিন্নভিন্ন জঙ্গিদের মৃতদেহ

রাজধানীর বসিলায় জঙ্গি আস্তানায় এখনো চলছে র‍্যাবের কমান্ডো অভিযান। টিনশেড বাড়িটিতে বিস্ফোরণে জঙ্গিদের ছিন্নভিন্ন দেহ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে বলে জানিয়েছেন র‍্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ। আস্তানা পরিদর্শন শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে র‌্যাব মহাপরিচালক বলেন, মৃতদেহের বিভিন্ন অংশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকায় ঠিক কতজন জঙ্গি বাড়িটিতে ছিলেন সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। তবে জঙ্গি আস্তানায় কমপক্ষে দুজন নিহত হয়েছে। তিনটি পা দেখা গেছে। এখনও আস্তানা আগুনে জ্বলছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে কেউ জঙ্গিবাদে জড়ালে ছাড় দেয়া হবে না।র‍্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাড়িটির ভেতরে অবিস্ফোরিত বোমা ও আইইডি (ইমপ্রোভাইসড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) দেখা গেছে। সেগুলো নিষ্ক্রিয় করার চেষ্টা চলছে। বিস্ফোরণে টিনসেড ভবনের টিনের চাল ও পাশের বেড়া উড়ে গেছে। বাড়িটির পেছনে খাল। সেখানেও টিনের টুকরো এবং মৃতদেহের শরীরের অঙ্গ উড়ে গিয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে।বাড়িটির ভেতরে এখনো র‍্যাবের কোনো সদস্য প্রবেশ করেনি। ড্রোন ব্যবহার করে বাড়িটির ভেতরটা পর্যবেক্ষণ করছে র‍্যাবের ইনটেলিজেন্স শাখা।

ভবনের ভেতরের অবস্থা জানতে চাইলে তিনি বেনজির আহমেদ বলেন, আমি দেখেছি ভেতরে মরদেহগুলো ছিন্ন-ভিন্ন অবস্থায় রয়েছে। তবে কয়জন মারা গেছে তা এখনও নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। এখনও পুরোপুরি বাড়িটাকে ক্লিন করা যায়নি। আমরা সেখানে তিনটা বিচ্ছিন্ন পা দেখেছি। এতে করে ধারণা করা যাচ্ছে সম্ভবত দুইজন মারা গেছে। বাড়িটি পরিষ্কার করতে কিছু সময় লাগবে। পরিষ্কারের পর বলতে পারব যে কতজন মারা গেছে।

বেনজীর আহমেদ আরও বলেন, হলি আর্টিসানে হামলার পর থেকে আমরা প্রায় প্রতিনিয়তই জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। এরই অংশ হিসেবে গত রাতে আমরা গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এখানে আসি। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে র‌্যাবের রুটিনে অভিযান অব্যাহত থাকবে।জঙ্গিবাদের দিকে ধাবিত যুবকদের বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের যাদের এই জঙ্গিবাদের দিকে দীক্ষিত করা হচ্ছে অনুরোধ করছি ফিরে আসতে। তাদের ভুল বোঝানো হচ্ছে। জঙ্গিবাদ ইসলাম ও মুসলমানের পক্ষে না, এটি ইসলাম ও মুসলমানের বিরুদ্ধে। আমাদের ধর্ম এগুলো সমর্থন করে না। এ ধরনের প্রত্যেকটি ঘটনায় ইসলামকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

অভিযানের সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে র‌্যাব ডিজি বলেন, অপারেশন পূর্ণাঙ্গভাবে শেষ হয়নি। এখন বম্ব সুইপিং ইউনিট কাজ করছে। এরপর কে নাইন ইউনিট (ডগ স্কোয়াড) আসবে। ওরা সুইপিং করার পর অভিযান আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হবে।এর আগে র‌্যাব-২ এর কোম্পানি কমান্ডার (এসপি) মহিউদ্দিন ফারুকী বলেন, বাড়ির মালিক আব্দুল ওহাবের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তিনি এখন ঢাকার বাইরে। তিনি জানিয়েছেন, দেড়মাস আগে বাড়িটি ভাড়া নেয় দুইজন ভ্যান চালক। এ মাসে তাদের ছেড়ে দেয়ার কথা ছিল। তারা ভ্যান চালানোর আড়ালে জঙ্গি কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলেন কি-না তা খতিয়ে দেখা হবে।

সোমবার সকাল ৯টার দিকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বছিলায় জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে ঘিরে রাখা বাড়িটিতে যান র‌্যাবের বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট। র‌্যাব সদস্যরা এ সময় আস্তানা লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েন। র‌্যাবের স্পেশাল ফোর্স ঘটনাস্থল ঘিরে রেখেছে।মহিউদ্দিন ফারুকী জানান, আরও দুই-তিন ঘণ্টা পর বিস্তারিত বলা যাবে।আস্তানাটির তথ্য জানতে ব্যবহার করা হয় ড্রোন। ড্রোন দিয়ে জঙ্গি আস্তানার ভেতরের ও বাইরের অবস্থা জানার চেষ্টা করে র‌্যাব ইন্টেলিজেন্স শাখা। আনা হয়ে অত্যাধুনিক মেশিন, যা দিয়ে দূর থেকে আস্তানার ভেতরের শব্দ ও কথাবার্তা শোনা যায়।

এর আগে রোববার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে মোহাম্মদপুর বছিলার মেট্রো হাউজিংয়ে অভিযান শুরু করে র‌্যাব। র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়েই বিস্ফোরণ ঘটে আস্তানায়। এরপর ভোর ৫টার দিকে বড় বিস্ফোরণ ঘটে।বাড়িটি ঘেরাও করার পরই কেয়ারটেকারসহ তিনজনকে আটক করেছে র‌্যাব। তারা হলেন- কেয়ারটেকার সোহাগ, সোহাগের বউ মৌসুমী ও স্থানীয় মসজিদের ইমাম ইউসুফ।র‌্যাব-২ এর এসপি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, টিনশেড বাড়িটির কেয়ারটেকারকে জিজ্ঞাসাবাদে জানার চেষ্টা করা হচ্ছে ওই টিনশেড ভবনে কারা কারা থাকেন। কীভাবে ভাড়া দিয়েছেন। সোহাগ ওই এলাকায় ডিশের ব্যবসা করেন।

তিনি বলেন, টিনশেড বাড়িটির পাশে একটি মসজিদ রয়েছে। সম্প্রতি মসজিদটি সম্প্রসারণ করে মাদরাসা করার কথাও চলছিল। মসজিদের ইমাম ইউসুফকেও তাই জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।প্রত্যক্ষদর্শী ও ওই টিনশেড বাড়ির বাসিন্দা জোনায়েদ বলেন, ওই টিনশেড বাড়িতে চারটি রুম। তিনি এক রুমে থাকেন। পেশায় রড-সিমেন্টের মিস্ত্রি, বাড়ি-ঘরের কাজ করেন।তিনি বলেন, দুজন যুবক এক দেড় মাস হলো ভাড়ায় উঠেছেন। আজ ভোরে বিস্ফোরণের আগে আমাদের বের করে আনে র‌্যাব। ভোর ৫টায় যে বিস্ফোরণটি হয় তা ছিল খুব বড়।

ad

পাঠকের মতামত