295037

ধর্ষণ বেড়ে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করলেন বিশেষজ্ঞরা

জেলা প্রতিনিধিঃ সম্প্রতি পটুয়াখালীতে ধর্ষণের ঘটনা বেড়েই চলেছে। গত ১০ দিনে ধর্ষণের শিকার হয়ে পটুয়াখালী ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল ও বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) সাতজন ভর্তি হয়েছেন। সামাজিক অবক্ষয়ের এমন চিত্রে অভিভাবকরা বলছেন, জেলার কোথাও কোনো সময়ই নারী ও শিশুরা নিরাপদ নয়। সুযোগ পেলেই নরপশুরা ঝাঁপিয়ে পড়ছে।

আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিম্নবিত্ত পরিবারে এসব ঘটনা বেশি ঘটছে। নৈতিক অবক্ষয় থেকেই মূলত এমনটা হচ্ছে। সেই সঙ্গে ধর্ষণের ঘটনায় রাজনৈকিত ব্যক্তিদের চোখ রাঙানি এবং বিচারহীনতার একটি সাংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। যার কারণে ধর্ষকরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে।পটুয়াখালী ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের তথ্য মতে, ২০১৮ সালে সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওসিসি সেন্টারে ১০০ জন নারী ও শিশু চিকিৎসা নিয়েছেন। যাদের মধ্যে ৮৫ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। কিন্তু ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চার মাসেই ৭৫ জন নারী ও শিশু নির্যাতনের শিকার হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। যার মধ্যে অধিকাংশই ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।

পটুয়াখালী ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেলের (ওসিসি) প্রোগ্রাম অফিসার মো. রফিকুল ইসলাম জানান, সম্প্রতি শিশুরা বেশি ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। আর ধর্ষকদের বেশিরভাগই পঞ্চাশোর্ধ্ব।তিনি জানান, সাধারণত ধর্ষণ বেশি হচ্ছে নিম্নবিত্ত পরিবারে। যেখানে সামাজিক নিরাপত্তা কম সেখানে এ ঘটনা বেশি ঘটছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছ থেকে কেউ যাতে পার না পায় সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা বেশিরভাগ সময় দেখি নির্যাতন যারা করে তারা আইনের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে আসে। আইনের প্রয়োগ ও বিচারের ক্ষেত্রেও রয়েছে দীর্ঘ সূত্রিতা। দীর্ঘ বছর ধরে বিচারকার্য চলার কারণে মানুষ ঘটনা ভুলে যায়। যার ফলে বিচার হলো কি হলো না সেটি দৃশ্যমান হয় না। আলোচিত ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে বিচার হলে দৃষ্টান্ত স্থাপন হবে।

আবার অনেক ক্ষেত্রে আমরা থানায় রেফার করলে পুলিশ মামলা তাৎক্ষণিক গ্রহণ করে না। তারা সেটি দির্ঘ সময় পার করে গ্রহণ করে। থানা থেকে এ সহায়তা না পেয়ে তারা হয়রানির শিকার হচ্ছে। আবার রেফারেন্স ছাড়া গেলে থানায় উৎকচ গ্রহণের মাধ্যমে মামলা গ্রহণ করে এবং বিষয়টি গোপন রাখতে বলে।অপরদিকে এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানাগুলোতে মামলা দায়ের করা হলেও বেশিরভাগ মামলাই সামাজিক প্রভাবশালী ব্যক্তিরা আপোষ করে ফেলছে। বেশির ভাগ ধর্ষণের ঘটনাই সমাজের প্রভাবশালীরা জড়িত থাকায় ভয়ভীতি, মামলা হামলা ও টাকার কাছে হার মানতে বাধ্য হচ্ছে ধর্ষিতাদের পরিবারগুলো।

এ বিষয়ে পটুয়াখালী জজ কোর্টের কৌঁসুলি অ্যাড. আবুল কালাম আজাদ বলেন, মামলার আসামিদের গ্রেফতারের পেছনে পুলিশের যথেষ্ট ভূমিকা থাকার কথা। কিন্তু রাজনৈতিক নেতাদের ধর্ষকদের ওপর অদৃশ্য ছায়া থাকার কারণে পুলিশ স্বাধীনভাবে তাদের কাজ করতে পারে না।তিনি আরও বলেন, মামলা জটও আছে। ধর্ষণ মামলার বিচারের জন্য কমপক্ষে চার-পাচঁ বছর সময় দিতে হয়। এর ফলে সাক্ষী ও বিচার প্রার্থীরা নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েন। এর ফলে আসামিরাও পার পায়।

ad

পাঠকের মতামত