294677

বাবা-মা জন্মদিনের কথা ভুলে যাওয়ায় মেয়ের আত্মহত্যা

জন্মদিনের কথা মনে না থাকায় সিরাজগঞ্জে বাবা-মায়ের সঙ্গে অভিমান করে প্রিয়াঙ্কা সাহা (২৫) নামে এক শিক্ষিকা আত্মহত্যা করেছেন।মঙ্গলবার সকালে পৌর এলাকার গোশলার নিজ বাড়ি থেকে তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করে পুলিশ। ওইদিন রাতেই ঘুড়কা মহাশ্মশান ঘাটে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়।মৃত্যুর আগে তিনি বলে গেছেন, ‘তোমরা আমার বাবা-মা, আর তোমরাই আমার জন্মদিনের কথা ভুলে গেলে?।’ এই কথাটি ছিল বাবা-মায়ের সঙ্গে প্রিয়াঙ্কার শেষ কথা।

প্রিয়াঙ্কা সাহা সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার গোশলা রোডের বলরাম সাহার মেয়ে। তিনি সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার পিপুলবাড়িয়া টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষিকা ছিলেন।এ বিষয়ে প্রিয়াঙ্কা সাহার বাবা বলরাম সাহা বলেন, ২২ এপ্রিল ছিল প্রিয়াঙ্কার জন্মদিন। ওইদিন বিকেলে সে কর্মস্থল থেকে বাসায় ফিরে দুপুরের খাবার খেয়ে তার বান্ধবীদের সঙ্গে মোবাইলে জন্মদিন নিয়ে কথা বলছিল। এ সময় মেয়ের কাছ থেকে নিশ্চিত হই আজ প্রিয়াঙ্কার জন্মদিন।এ সময় প্রিয়াঙ্কা আমাদের উদ্দেশ্য করে বলে, ‘তোমরা আমার বাবা-মা, আর তোমরাই আমার জন্মদিনের কথা ভুলে গেলে?।’ তবে এমন মন্তব্য করার পরও সে সবার সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে কথাবার্তা বলেছিল।

প্রিয়াঙ্কার মা বন্দনা সাহা বলেন, রাত সাড়ে ৮টার দিকে প্রিয়াঙ্কা নিজের শোয়ার ঘরের পাশে অন্য একটি ঘরে ঘুমাতে যায়। এর কিছুক্ষণ পর প্রিয়াঙ্কাকে রাতের খাবার খেতে ডাকাডাকি করি আমি। এ সময় প্রিয়াঙ্কার কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে ছোট মেয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের ছাত্রী অন্তরা সাহাকে বিষয়টি জানাই।পরে অন্তরা প্রিয়াঙ্কাকে মোবাইল করলেও রিসিভ করেনি। সকাল সোয়া ৮টার দিকে নাশতা করার জন্য তাকে ডাকাডাকি করি আমরা। কিন্তু প্রিয়াঙ্কার কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। পরে প্রতিবেশীদের ডেকে এনে রুমের দরজা ভেঙে তার ঘরে ঢোকা হয়। এ সময় ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচানো প্রিয়াঙ্কার ঝুলন্ত মরদেহ দেখতে পাই আমরা।

খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে সিরাজগঞ্জ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়ে দেয়। ময়নাতদন্ত শেষে সন্ধ্যায় তার মরদেহ আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হলে রাতেই শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়।প্রিয়াঙ্কার বোন বড় ও সিরাজগঞ্জ কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষিকা বর্ণালী সাহা বলেন, প্রিয়াঙ্কা লেখাপড়ায় ছিল বেশ ভালো। নাট্যজগৎসহ সাংস্কৃতিক জগতে ছিল তার বিচরণ। তবে কোথাও গেলে বাবা, মা অথবা বোনদের কাউকে সঙ্গে নিয়ে যেতো।

একা কোথাও যেত না। তিন বোনের মধ্যে প্রিয়াঙ্কা ছিল মেজ। এ বছরই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নাট্যকলা বিষয়ে ফার্স্ট ক্লাস পেয়ে মাস্টার্স পাস করে প্রিয়াঙ্কা। পরীক্ষা শেষে গত বছরের ডিসেম্বরে সিরাজগঞ্জে চলে আসে। প্রায় আড়াই মাস আগে শিক্ষিকা হিসেবে চাকরি হয় সদর উপজেলার পিপুলবাড়িয়া টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে।বর্ণালী সাহা আরও বলেন, আমরা তিন বোন নিজেদের মধ্যে ছিলাম বেশ খোলামেলা। নিজেদের ভালোমন্দ নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হতো। আমাদের বাবা-মা দুজনেই অসুস্থ। প্রিয়াঙ্কার একটাই ভাবনা ছিল, কি করে অসুস্থ বাবা-মাকে ভালো রাখা যায়।

সম্প্রতি প্রিয়াঙ্কার মতামত নিয়েই পরিবার থেকে ওর বিয়ের জন্য পাত্র খোঁজা হচ্ছিল। ও শুধু বলতো ভালো ঘরে বিয়ে দিও, অসুস্থ বাবা-মায়ের পাশে যেন দাঁড়াতে পারি।এ সময় তিনি এ ঘটনার সঙ্গে প্রেম-সংক্রান্ত কোনো বিষয় জড়িত নয় বলে দাবি করেন। তবে স্বভাবগতভাবে প্রিয়াঙ্কা ছিল অভিমানী, জেদি ও রাগী। কী কারণে পরিবারের সবাইকে শোক সাগরে ভাসিয়ে এভাবে চলে গেলো তা আমাদের বোধগম্য নয়।

সিরাজগঞ্জ সদর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মেহেদী হাসান বলেন, জন্মদিন পালনকে কেন্দ্র করে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মনোমালিন্যের কারণে প্রিয়াঙ্কার আত্মহত্যার ঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে তার মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে এটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা তা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

ad

পাঠকের মতামত