293763

সেন্ট মার্টিন যেতে চাইলে লাগবে নিবন্ধন

সেন্ট মার্টিন যেতে চাইলে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। পর্যটকের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করার জন্যই এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। আগামী ডিসেম্বর থেকেই এই নিয়ম কার্যকর করা হবে। পর্যটকের আসা-যাওয়া নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সেন্ট মার্টিনকে বাঁচানোর জন্যই এই উদ্যোগ নিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর ও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক)।

কউক চেয়ারম্যান লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমেদ মঙ্গলবার গণমাধ্যমকে বলেন, সেন্ট মার্টিন বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। সেন্ট মার্টিনকে প্রাকৃতিক কাজে লাগানো গেলে দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে। কিন্তু এখন সেন্ট মার্টিনের অবস্থা বেহাল। প্রবাল-শৈবাল, জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের পাশাপাশি পরিবেশগত ঝুঁকিতে পড়েছে দ্বীপটি। এখন মাস্টার প্ল্যান তৈরির মাধ্যমে প্রবালদ্বীপটি রক্ষার চেষ্টা চলছে। ফোরকান আহমেদ বলেন, ইতিমধ্যে একটি নীতিমালা তৈরি হয়েছে। আগামী পর্যটন মৌসুম (ডিসেম্বর-এপ্রিল) থেকে এ নীতিমালা চালু হবে। তখন কতজন পর্যটক সেন্ট মার্টিনে যেতে পারবেন, কতজন থাকতে পারবেন, কতটা জাহাজ চলাচল করতে পারবে, তার সবকিছু নির্দিষ্ট করা থাকবে।

দেশের একমাত্র প্রবাল এই দ্বীপে ৭ দশমিক ৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের সেন্ট মার্টিনের লোকসংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। ১৯৯৯ সালে সেন্ট মার্টিন দ্বীপকে পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করে সরকার। দ্বীপটিতে ১৫৪ প্রজাতির শৈবাল, ১৫৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৬৮ প্রজাতির প্রবাল, ১৯১ প্রজাতির শামুক-ঝিনুক, ১০ প্রজাতির কাঁকড়া, ৬ প্রজাতির প্রজাপতি, ২৩৪ প্রজাতির মাছ, ৪ প্রজাতির উভচর ও ২৯ প্রজাতির সরীসৃপ রয়েছে। দ্বীপে ৭৭ প্রজাতির স্থানীয় পাখি, ৩৩ প্রজাতির পরিযায়ী পাখিসহ মোট ১১০ প্রজাতির পাখি ও ২৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী ছিল। এখন অনেক বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

বর্তমানে পর্যটন মৌসুম শুরু হলে টেকনাফ থেকে ছয়-সাতটি প্রমোদতরি এবং ৩০টির বেশি কাঠের ট্রলারে সেন্ট মার্টিন যাওয়া-আসা করেন দৈনিক ১৫ হাজার পর্যটক। আগামী মৌসুম থেকে সেই সুযোগ আর থাকছে না। তখন সেন্ট মার্টিন যেতে হলে অনলাইনে নিবন্ধন লাগবে।

এর সত্যতা নিশ্চিত করে পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের সহকারী পরিচালক কামরুল হাসান বলেন, পর্যটকের অতিরিক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না হলে পরিবেশগত ঝুঁকি থেকে সেন্ট মার্টিনকে রক্ষা করা কোনোমতেই সম্ভব নয়। চলতি মৌসুমে দৈনিক সর্বোচ্চ ১৫ হাজার পর্যটক সেন্ট মার্টিন গিয়েছেন। আগামী মৌসুম থেকে যেতে পারবেন ১ হাজার ২৫০ জন করে। এর মধ্য থেকে কতজন দ্বীপে রাত যাপন করতে পারবেন, তা-ও নীতিমালায় নির্দিষ্ট করে দেওয়া হবে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ৫৯০ হেক্টর আয়তনের ৭ দশমিক ৮ বর্গ কিলোমিটারের এই প্রবালদ্বীপে অতিরিক্ত মানুষের চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে দ্বীপের ভূগর্ভস্থ পানির স্তরও নিচে নেমে গেছে। এ কারণে শতাধিক নলকূপে লবণ পানি ঢুকে গেছে। বিশেষ করে ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত দ্বীপের সাত হাজার মানুষ পানীয় জলের সংকটে পড়ে। নলকূপ ও পুকুরের লবণযুক্ত পানি খেয়ে অনেকে ডায়রিয়াসহ জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক কামরুল হাসান বলেন, গত ১ মার্চ থেকে সেন্ট মার্টিন পর্যটকদের রাতযাপনের ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। কিন্তু বিশেষ কারণে তা কার্যকর হয়নি। তবে আগামী মৌসুম থেকে রাতযাপনের ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞাসহ সেন্ট মার্টিনকে রক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

ad

পাঠকের মতামত