293830

সাভারের রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ৬ বছর : ‘সাহায্য নয়, ছেলেকে চাই’

নিউজ ডেস্ক।। সাভারের রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ছয় বছর আজ। ধামরাইয়ের হতাহত ২৫ গার্মেন্ট কর্মীর পরিবার এখনো স্বজন হারানোর স্মৃতি ভুলতে পারেনি। পরিবারে চলছে শোকের মাতম। সরকারি ও বেসরকারিভাবে কিছু সাহায্য পেলেও পরিবারগুলো একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষকে হারিয়ে ও পঙ্গু হয়ে চরম মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাদের একটাই দাবি কর্মসংস্থানের। খবর: মানবজমিন।

ধামরাইয়ের মামুরা গ্রামের শুকুর আলী রানা প্লাজা ধসে পড়ার ১৭ দিন পর তার ছেলে ছুরমান আলীর লাশ খুঁজে পান। ছুরমান আলীর বৃদ্ধ বাবা শুকুর আলী, মা তারা ভানু কোন কাজ করতে পারে না। স্ত্রী সুফিয়া বেগমও বেকার। তার ঘরে রয়েছে নয় বছরের ফুটফুটে মেয়ে সুমি আক্তার। সুমির গার্মেন্টকর্মী বাবা ছুরমান আলী বেঁচে থাকলে আজ তাদের সংসারে আর কোন অভাব-অনটন থাকতনা। সুফিয়া বেগম এখন অভাবের সংসার টিকিয়ে রাখতে মানুষের বাড়ি বাড়ি কাজ করছেন। সুফিয়া বেগম আরো জানান, তার স্বামী মারা যাওয়ার পর সরকারিভাবে ও স্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সজাগের উদ্যোগে কিছু অর্থ সহায়তা ছাড়া আর কেউই তাদের খোঁজ নেয়নি। এখন তিনি কর্মসংস্থানের দাবি জানিয়েছেন।

ধামরাইয়ের বড়কুশিয়ারা গ্রামের নাছির উদ্দিন রানা প্লাজার ছাদের চাপা পড়ে তার একটি পা ভেঙে গেছে। তিনি দীর্ঘদিন চিকিৎসার পর এখন রিকশা চালিয়ে সংসার চালান। তার স্ত্রী তানিয়া আক্তার ও বৃদ্ধ শ্বশুর-শাশুড়ির ভরণপোষণ করতে হচ্ছে। অষ্টম তলা থেকে লাফিয়ে পড়ে প্রাণ রক্ষা পেয়েছেন ধামরাইয়ের মামুরা গ্রামের আব্দুল হালিমের ছেলে মনির হোসেন। দীর্ঘ দিন হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরলেও পঙ্গুত্ব নিয়ে তিনি এখন অসহায়। তার কৃষক বাবা আব্দুল হালিমের দিনমজুরিতেই এখন চলছে তাদের সংসার। ধামরাইয়ের মাখুলিয়া গ্রামের সামছুন্নাহার তার ছেলে মিজানুর রহমান রানা প্লাজার অষ্টম তলায় কাজ করতেন। ছেলের স্বপ্ন ছিল গার্মেন্টে চাকরি করে বাবা-মার জন্য পাকা বাড়ি বানাবেন। বাড়ির কাজেও হাত দিয়েছিলেন। কিন্তু সে স্বপ্ন আর পূরণ হয়নি। ভবন ধসের শিকার হয়ে মিজানুর রহমান নিহত হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার তার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, ছেলের ছবি বুকে নিয়ে মা সামসুন্নাহার কান্নায় শুধুই প্রলাপ করছেন, ছেলে বেঁচে থাকলে আজ পাকা বাড়ি নির্মাণের কাজ শেষ হইত। ছেলেকে বিয়ে করিয়ে বাড়িতে নতুন বউ আনতে পারতাম। ছেলের মৃত্যুর পর কোন সাহায্য পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে সামসুন্নাহার সাংবাদিকদের বলেন, আমি কোন সাহায্য চাই না, আমার ছেলেকে চাই। খুনি রানার বিচার চাই।

ধামরাইয়ের আনন্দনগর গ্রামে রানাপ্লাজার মালিক সোহেল রানার নানার বাড়ির পাশে আসিয়া খাতুন তার মেয়ে রিনা আক্তারকে হারিয়ে পাগলপ্রায়। তিনি আজও মেয়ের ছবি হাতে পথ চেয়ে অপেক্ষা করেন। তিনি এখনো তার মেয়ের লাশ বা সন্ধান পাননি। একমাত্র উপর্জনক্ষম মেয়ে রিনাকে হারিয়ে অসুস্থ আসিয়া খাতুন কাজ করতে না পারায় ঠিকমতো খাবার জোটে না।

একই গ্রামের দরিদ্র আমিন বেপারী তার দুই ছেলে রবিন ও রুবেল রানাপ্লাজার পঞ্চম ও সপ্তম তলায় চাকরি করে উপার্জিত অর্থ দিয়ে ওই রানা প্লাজার নিচে একটি দোকান কিনে ব্যবসা শুরু করে। সাভারে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ঘটনায় দোকান হারিয়ে এক ছেলে রবিনের মৃত্যু ও অপর ছেলে রুবেল ভারসাম্যহীন হওয়ায় তার বাবা আমিন বেপারী এখন দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। ছেলের কথা মনে করে এখনো তার দু’চোখ বেয়ে পড়ে পানি। এছাড়া ধামরাইয়ের রূপনগর গ্রামের আব্দুস সালাম, মুক্তা আক্তার, আড়ালিয়া গ্রামের আনোয়ার হোসেন, শিল্পী আক্তার, চরবর্দাইল গ্রামের তহুরা বেগম, লিমা আক্তার, ফড়িংগা গ্রামের আরিফুল ইসলাম, দধিঘাটা গ্রামের পবিত্রা মন্ডল, বাঙ্গালপাড়া গ্রামের শিল্পী আক্তার, কদমতলা গ্রামের রোমানা আক্তার, আনন্দনগর গ্রামের রবিন হোসেন, রিনা আক্তারসহ ১৪ জন ওই রানা প্লাজা ধসে মারা গেছেন। তাদের পরিবারেও দেখা দিয়েছে অভাব আর অনটন। পরিবারের সদস্যদের হারিয়ে তাদের মধ্যেও নেই কোন সুখ। এছাড়াও পঙ্গুত্ব বরণ করেছে আরো ১১ জন।

ad

পাঠকের মতামত