292095

স্ত্রীর কাছে মোহরের টাকা মাফ চেয়ে নিলে মাফ হবে কি?

ইসলাম ডেস্ক।। প্রশ্ন : আসসালামু আলাইকুম। আমরা কখনো সামাজিক মর্যাদা রক্ষায়, আবার কখনো মেয়ে পক্ষের চাপে অথবা কখনো প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে বিয়েতে অনেক টাকা দেনমোহর ধার্য করে থাকি। যা অধিকাংশ সময়েই নগদ পরিশোধ করা সাধ্যের বাইরে হয়। তখন স্ত্রীর কাছে সময় চেয়ে (উক্ত টাকা DPS করে ১০- ১৫ বছরে বা আরো বেশি) পরিশোধ করে। বা পরিশোধ করতে পারে না। মাফ চেয়ে নেয়া হয়। সেও মাফ করে দিতে বাধ্য হয়। এক্ষেত্রে ইসলামী শরীয়াহ’র মাসআলা কি?

উত্তর : ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। বিবাহে মোহর সাধ্যের মধ্যে ধার্য করতে হয়। এটা আল্লাহ তাআলা কর্তৃক স্বামীর উপর স্ত্রীর জন্য নির্ধারিত অধিকার। যা স্বামীর জন্য আদায় করা আবশ্যক। আদায় না করার নিয়তে অধিক মোহর ধার্য করা যেমনিভাবে গুনাহের কাজ তেমনি মোহর আদায় না করা পর্যন্ত স্ত্রীর সাথে শারীরিক সম্পর্কও জায়েয হয় না। হযরত উমর (রা.) বলেন-

لاَ تُغَالُوا بِصُدُقِ النِّسَاءِ فَإِنَّهَا لَوْ كَانَتْ مَكْرُمَةً فِى الدُّنْيَا أَوْ تَقْوَى عِنْدَ اللَّهِ لَكَانَ أَوْلاَكُمْ بِهَا النَّبِىُّ -صلى الله عليه وسلم- مَا أَصْدَقَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- امْرَأَةً مِنْ نِسَائِهِ وَلاَ أُصْدِقَتِ امْرَأَةٌ مِنْ بَنَاتِهِ أَكْثَرَ مِنْ ثِنْتَىْ عَشْرَةَ أُوقِيَّةً

অর্থ : তোমরা মহিলাদের মোহর নিয়ে বাড়াবাড়ি করো না। যদি এটা দুনিয়াতে সম্মানের কারণ হতো অথবা আল্লাহ তাআলার নিকট খোদাভীতির কিছু হতো তবে তোমাদের মধ্য থেকে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর বেশী উপযুক্ত ছিলেন। অথচ রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর স্ত্রীদের মধ্য থেকে কাউকে, অনুরূপভাবে মেয়েদের মধ্য থেকে কারো ১২ উকিয়ার বেশী মোহর ধার্য করেননি।–সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং : ২১০৮

তাই মোহর এমনভাবে ধার্য করা উচিত যা আদায় করা যায়। উত্তম হল স্ত্রীর সাথে শারীরিক সম্পর্কের পূর্বেই মোহর পরিশোধ করে দেওয়া। নয়তো স্ত্রী চাইলে মোহর আদায় করা পর্যন্ত স্বামীকে সহবাস থেকে বিরত রাখতে পারবে। দেনমোহর স্বামীর দায়িত্বে থাকা একটা ঋণ। যা অন্যান্য ঋণের মত আদায় করা অত্যাবশ্যকীয়। তবে স্ত্রী যদি স্বতঃস্ফূর্তভাবে সন্তুষ্টিচিত্তে মোহরের টাকা হাতে পাওয়ার পর মোহরের কিছু অংশ বা পুরো মোহর স্বামীকে দান করে দেয় বা উপহার স্বরূপ দিয়ে দেয় তাহলে তা মাফ হয়ে যাবে।

কিন্তু চাপে পড়ে মাফ করলে বা লজ্জায় মাফ করলে মাফ হবে না। পুরোপুরি সন্তুষ্টিচিত্তে মাফ করলেই কেবল মাফ হয়। অনেককেই শোনা যায় বাসর রাতে স্ত্রীকে বিভিন্নভাবে ভুলিয়ে ভালিয়ে মাফ চাইতে থাকে। স্ত্রীও লজ্জায় মাফ করতে বাধ্য হয়। এভাবে মাফ করলেও মাফ হবে না।

স্বামী কর্তৃক মোহর মাফের জন্য এভাবে চাপাচাপি করা বা দুর্ব্যবহার করা অথবা অন্য কোন কৌশল অবলম্বন করা জায়েয নয়। স্বামীর উচিত একেবারে না পারলেও ধীরে ধীরে তা পরিশোধ করতে থাকা। টাকা হাতে পাওয়ার পর যদি স্ত্রী মোহরের কোন অংশ সন্তুষ্টিচিত্তে স্বামীকে হাদিয়া দেয় তবে তা গ্রহন করা জায়েয। তবে টাকা স্ত্রীর হাতে না দিয়ে অন্তরের সন্তুষ্টি বুঝা মুশকিল। অনেককেই দেখা যায় মোহরের টাকা মাফ করে দেওয়ার পরেও কোন বাক-বিতণ্ডার সময় পুনরায় মোহর চায়। এ থেকেই বুঝা যায় সে পূর্বে সন্তুষ্টিচিত্তে মোহর মাফ করেনি। তাই হাকীমুল উম্মাত আশরাফ আলী থানভী (রহ.) মাফ করার ক্ষেত্রে মোহর হাতে দেওয়ার কথা বলেছেন।

আর ব্যাংকে DPS করা সম্পূর্ণ নাজায়েয ও হারাম। একান্ত প্রয়োজনে কারেন্ট একাউন্ট খোলা জায়েয। তাই আপনি যখন যা হস্তগত হয় তা একাউন্টে না রেখে স্ত্রীকে দিয়ে দিবেন।-সূরা নিসা, আয়াত নং : ৪; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং : ২০৬৯৫; তাতারখানিয়া : ৩/৪২, ৪৩। উত্তর প্রদান করেছেন – মুফতি আবুল হুসাইন, প্রধান মুফতি ও মুহাদ্দিস, আল-জামেয়াতুল ইসলামিয়া আশরাফুল উলূম মাদরাসা, নড়াইল। উৎস: পরিবর্তন।

ad

পাঠকের মতামত