291209

ধৈর্যের প্রতিভূ ছিলেন যে নবী

ইসলাম ডেস্ক।। ধৈর্যের প্রতিভূ এবং আল্লাহর ওপর আস্থায় অনন্য উপমা প্রদর্শনকারীদের আলোচনায় সামনে এলেই যার নাম সর্বপ্রথম উচ্চারিত হয় তিনি হলেন আল্লাহর নবী আইয়ুব (আ.)। ৭০ বছর বয়সে পরীক্ষায় পতিত হন। তাঁর জিহ্বা ও অন্তকরণ ছাড়া পুরো দেহে পচন ধরে। তিনি ধৈর্যের চরম পারাকাষ্ঠা দেখিয়ে এ অবস্থাতেই আল্লাহর শুকরিয়া করতে থাকেন। আল্লাহর জিকির ও প্রশংসায় জিহ্বাকে সজীব রাখেন। অবশেষে আল্লাহ তাঁকে এ থেকে উদ্ধার করেন। পরীক্ষা থেকে মুক্ত হবার অনেক পরে ৯৩ বছর বা তার কিছু বেশি বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। (তাফসিরে কুরতুবি)

পবিত্র কুরআনে ৪টি সূরার ৮টি আয়াতে তাঁর কথা আলোচিত হয়েছে। তা হলো : নিসা ১৬৩, আনআম ৮৪, আম্বিয়া ৮৩-৮৪ এবং ছোয়াদ ৪১-৪৪। আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আর স্মরণ কর আইয়ুবের কথা, যখন সে তার রবকে আহ্বান করে বলেছিল, আমি দুঃখ-কষ্টে পতিত হয়েছি। আর আপনি তো সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু। তখন আমি তার ডাকে সাড়া দিলাম। আর তার যত দুঃখ-কষ্ট ছিল তা দূর করে দিলাম এবং তার পরিবার-পরিজন তাকে দিয়ে দিলাম। আর তাদের সঙ্গে তাদের মত আরো দিলাম আমার পক্ষ থেকে রহমত এবং ইবাদাতকারীদের জন্য উপদেশস্বরূপ।’ (সূরা আম্বিয়া, আয়াত : ৮৩-৮৪)

আবু হুরায়রা (রা.) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আইয়ুব একদিন নগ্নাবস্থায় গোসল করছিলেন (অর্থাৎ বাথরুম ছাড়াই খোলা স্থানে)। এমতাবস্থায় তাঁর ওপর কয়েকটি সোনার টিড্ডি পাখি এসে পড়ে। আইয়ুব সেগুলিকে ধরে কাপড়ে ভরতে থাকেন। অবস্থাদৃষ্টে আল্লাহ তাঁকে ডেকে বলেন, হে আইয়ুব! আমি কি তোমাকে এসব থেকে অমুখাপেক্ষী করিনি? আইয়ুব বললেন, তোমার ইজ্জতের কসম! অবশ্যই তুমি আমাকে তা দিয়েছ। কিন্তু তোমার বরকত থেকে আমি অমুখাপেক্ষী নই।’ (বুখারি, সৃষ্টির সূচনা ও নবীগণের আলোচনা অনুচ্ছেদ)

আইয়ুব (আ.) সম্পর্কে কুরআন ও হাদিসে উপরোক্ত বক্তব্যগুলির বাইরে আর কোনো বক্তব্য বা ইঙ্গিত নেই। কুরআন থেকে মূল যে বিষয়টি প্রতিভাত হয়, তা হলো : আল্লাহ আইয়ুব (আ.)কে কঠিন পরীক্ষায় ফেলেছিলেন। সে পরীক্ষায় তিনি সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। যার পুরস্কার স্বরূপ আল্লাহ তাকে হারানো নেয়ামতসমূহের দ্বিগুণ ফেরত দেন। আল্লাহ এখানে ইবরাহিম, মুসা, দাউদ, সুলায়মান, আইয়ুব, ইউনুস (আ.) প্রমুখ নবীগণের কষ্ট ভোগের কাহিনী শুনিয়ে শেষনবীকে সান্ত্বনা দিয়েছেন। সেই সঙ্গে উম্মতে মুহাম্মদিকে যেকোনো বিপাদপদে দ্বীনের ওপর দৃঢ় থাকার উপদেশ দিয়েছেন।

আল্লাহ বলেন, ‘আমরা তার দোয়া কবুল করেছিলাম এবং তার দুঃখ-কষ্ট দূর করে দিয়েছিলাম।’ (সূরা আম্বিয়া, আয়াত : ৮৪)। কীভাবে দূর করা হয়েছিল, সে বিষয়ে আল্লাহ বলেন, তিনি তাঁকে ভূমিতে পদাঘাত করতে বলেন। অতপর সেখান থেকে স্বচ্ছ পানির ঝর্ণাধারা বেরিয়ে আসে। যাতে গোসল করায় তার দেহের ওপরের কষ্ট দূর হয় এবং ওই পানি পান করায় তার ভেতরের কষ্ট দূর হয়ে যায়। (ভাবার্থ, সূরা ছোয়াদ, আয়াত : ৪২)। এটি অলৌকিক মনে হলেও বিস্ময়কর নয়। ইতিপূর্বে শিশু ইসমাঈলের ক্ষেত্রে এটা ঘটেছে। পরবর্তীকালে হোদায়বিয়ার সফরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাতের বরকতে সেখানকার শুষ্ক পুকুরে পানির ফোয়ারা ছুটেছিল, যা তাঁর সঙ্গে থাকা ১৪০০ সাহাবির পানির কষ্ট নিবারণে যথেষ্ট হয়। বস্তুত এগুলি নবীগণের মুজেজা। নবী আইয়ুব (আ.) এর জন্য তাই এটা হতেই পারে আল্লাহর হুকুমে।

আমরা ছোটখাট নানা অজুহাতে আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করি। তুচ্ছ কারণে নামাজ-রোজার মতো ফরজ বিধান ত্যাগ করি। হাশরের মাঠে এসব অজুহাত আল্লাহ তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেবেন। তাবেঈ বিদ্বান মুজাহিদ হতে বর্ণিত হয়েছে, কিয়ামতের দিন ধনীদের সম্মুখে প্রমাণ স্বরূপ পেশ করা হবে সুলায়মান (আ.)-কে, ক্রীতদাসদের সামনে পেশ করা হবে ইউসুফ (আ.)-কে এবং বিপদগ্রস্তদের সামনে পেশ করা হবে আইয়ুব (আ.)-কে। (আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ : ১/২০৭)

ad

পাঠকের মতামত