290721

বাংলাদেশের দুটি জিনিসে গর্ব করতেই হয় : তসলিমা

নানা উৎসাহ আর উদ্দীপনায় গতকাল রবিবার বাংলা নতুন সালকে বরণ করে নিয়েছে দেশবাসী। বিভিন্ন সময়ে মৌলবাদীদের দেয়া হুমকি-ধামকি এবং নেতিবাচক প্রচারণাও বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি উৎসব উদযাপনে। গতকাল এপার বাংলার পর নতুন বছরকে আজ বরণ করে নিচ্ছে ওপার বাংলা। বাঙালির চিরন্তন এই উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ মঙ্গল শোভাযাত্রা। বাংলাদেশের এই মঙ্গল শোভাযাত্রা ইতোমধ্যেই ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। তবে কিছু সংখ্যক ব্যক্তি রয়েছে যারা বাঙালির প্রাণের এই উৎসব নিয়ে সাধারণ মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছে। বাংলাদেশের বৈশাখ উদযাপন নিয়ে কোটি কোটি বাঙালির মতো গর্ব করেন বিখ্যাত নারীবাদী লেখিকা তসলিমা নাসরিন।

নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে তসলিমা লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের দুটো জিনিস নিয়ে গর্ব করতেই হয়। এক, একুশে ফেব্রুয়ারী উদযাপন। দুই, পয়লা বৈশাখ উৎযাপন। পয়লা বৈশাখের সকাল থেকেই যে নাচ, গান, মেলা আর মঙ্গল শোভাযাত্রা হয়, তার কোনো তুলনা হয় না। আরবের গোলামেরা বা ধর্ম ব্যবসায়ীরা এসবের খুব বিরুদ্ধে। একুশে ফেব্রুয়ারীতে শহিদ মিনারে ফুল দেওয়া যাবে না, ওটা নাকি হিন্দুয়ানি কালচার। কোনো অনুষ্ঠানে প্রদীপ জ্বালানো চলবে না, ওটাও নাকি হিন্দুয়ানি।পয়লা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রা করা চলবে না, ওটাও হিন্দুয়ানি কালচার।’

‘হিন্দুয়ানি কালচারকে ভীষণ ভয় ওদের। ওরা আরবের বহু ঈশ্বরবাদী পেগানদের কালচারটাকে পছন্দ করে, ওদের পয়গম্বর যেমন পছন্দ করেছিল, পছন্দ করে সব আচার অনুষ্ঠান আত্মসাৎ করেছিল। কেন বাপু, চলতে ফিরতে, উঠতে বসতে, খাওয়ায় দাওয়ায়, পোশাকে আশাকে, কথায় বার্তায় যা কিছুই তোমার, সবই তো হিন্দুয়ানি কালচার, কারণ তোমার বাপের বাপের বাপের বাপরা , বা তোমার মায়ের মায়ের মায়ের মারা তো হিন্দু ছিল, বাংলাদেশি বাংলায় বলতে গেলে ওরা তো মালোয়ান ছিল। তোমাদের পয়গম্বরও পেগান কালচার ছাড়তে পারেনি, কারণ সে তো তার চল্লিশ বছর বয়স অবধি পেগানই ছিল।’

‘ধর্ম পালন করো, ভালো কথা। সংস্কৃতিটা তোমার নিজস্ব। আরবদের সংস্কৃতি আরবীয়। তোমার সংস্কৃতি ভারতীয়। হিন্দুর দেশে, বহিরাগত মুসলমানদের ধর্ম প্রচারের কারণে তোমার পূর্ব পুরুষ মুসলমান হয়েছে, কিন্তু কালচারটাতো তোমার মাটির, হাজার বছরের পুরোনো। ভাষাটাও তোমার হিন্দু পূর্বপুরুষের। মুরব্বিদের পা ছুঁয়ে যে কদমবুসি করো, সেটা তোমার হিন্দু পূর্বপুরুষের প্রণাম থেকে আসা। একবার তোমার পয়গম্বরের দেশে গিয়ে কাউকে কদমবুসি করে দেখো তো। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও সামনে মাথা নুইয়েছো বলে মুন্ডুটা কেটে নেবে। মনে রাখতে হবে, নিজের সংস্কৃতিকে ঘৃণা করা মানে নিজেকে ঘৃণা করা। নিজের ইতিহাসকে, নিজের জন্মকে অস্বীকার করা মানে নিজেকে অস্বীকার করা।’

‘মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হয়েছে আমাদের চোখের সামনে, আশির দশকে। কাঠের শোলার কাগজের হাতি ঘোড়া বাঘ বক পাখি পেঁচা বানিয়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো চমৎকার একটি দৃশ্য বটে। নাচ গান, হাতি ঘোড়া,ঢাক ঢোল, পিঠে পুলি, ইলিশ টিলিশ ছাড়া আমাদের কালচারে আর আছে কী! সতীদাহ? ও তো নারী নির্যাতন। কীর্তন, মিলাদ? ও তো ধর্ম। ধর্মকে আমি কালচার বলি না। ধর্মকে আমি ‘অলৌকিকে বিশ্বাস’ বলি। কালচারের সংগে লৌকিকতার সম্পর্কই সত্যিকারের সম্পর্ক।’

বাংলাদেশের দুটো জিনিস নিয়ে গর্ব করতেই হয়। এক, একুশে ফেব্রুয়ারী উৎযাপন। দুই, পয়লা বৈশাখ উৎযাপন। পয়লা বৈশাখের সকাল থেকেই…

Posted by Taslima Nasreen on Sunday, 14 April 2019

ad

পাঠকের মতামত