289953

পহেলা বৈশাখে রাজধানীতে কোথায় কি আয়োজন হচ্ছে, জেনে নিন

পহেলা বৈশাখে বাঙালির বর্ষবরণে থাকে নানা আয়োজন। দিনটিতে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোও বিশেষ আয়োজনের ব্যবস্থা করে। এসবের মধ্যে উল্লেখ করার মতো বিশেষ কিছু আয়োজন তো থাকেই। সেরকমই কিছু আয়োজনের খবর :

ছায়ানটের প্রভাতী আয়োজন ‘বিশ্বায়নের বাস্তবতায় শিকড়ের সন্ধান’ প্রতিপাদ্যে এবার ছায়ানটের প্রভাতী আয়োজন হচ্ছে। বরাবরের মতো রমনা উদ্যানের অশ্বথমূলে হবে এবারের আয়োজন। এবার পহেলা বৈশাখের ভোরে প্রভাতী আয়োজনের সূচনা হবে শনিবার সকাল সোয়া ৬টায়। চলবে সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত। মর্তুজা কবির মুরাদের বাঁশিতে রাগ আহীরভাঁয়রো পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হবে আয়োজন। দেড় শতাধিক শিল্পী দুই ঘণ্টা ব্যাপ্তিকালের প্রভাতী এ আয়োজনে গাইবেন।

নারী-মেয়ে শিল্পীদের পরনে থাকবে নানা রঙের পাড়যুক্ত অফ হোয়াইট রঙের শাড়ি ও ছেলেরা পরবেন জলপাই রঙের পাঞ্জাবি। এদের বেশিরভাগই ছায়ানটের শিক্ষার্থী। তাদের সঙ্গে একক গান নিয়ে মঞ্চে হাজির থাকবেন খায়রুল আনাম শাকিল, লাইসা আহমেদ লিসা, সেমন্তী মঞ্জুরী, আবুল কালাম আজাদ, সেঁজুতি বড়ুয়া প্রমুখ। জানা গেছে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের গান ছাড়াও চারণ কবি মুকুন্দ দাস, সুকান্ত ভট্টাচার্যের গানও থাকছে। রবীন্দ্রনাথের গানগুলোর মধ্যে রয়েছে- ‘বাঁধন ছেঁড়ার সাধন হবে’, ‘ওই পোহাইল তিমির রাতি, ‘প্রাণ ভরিয়ে তৃষা হরিয়ে’; নজরুলের ‘এলো এলো রে বৈশাখী ঝড়’, ‘শুভ্র সমুজ্জ্বল, হে চিরনির্মল’, ‘প্রভাত বীণা তব বাজে হে,’ ‘মেঘবিহীন খর-বৈশাখে’ গানগুলো গাওয়া হবে।

আরও শোনা যাবে পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের ‘ও আমার দরদি আগে জানলে/তোর ভাঙা নৌকায় উঠতাম না’, পঞ্চকবির অন্যতম দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘আজি নূতন রতনে ভূষণে যতনে’, মুকুন্দ দাসের ‘বান এসেছে মরা গাঙে খুলতে হবে নাও’, সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘হিমালয় থেকে সুন্দরবন’। মঙ্গল শোভাযাত্রা লালন সাঁইজির গানের অমিয় বাণী ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’ প্রতিপাদ্যে হচ্ছে এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রা। যাতে আবহমান বাংলার লোকজ মোটিভের মধ্য দিয়ে সোনার মানুষ হওয়ার আহ্বান জানানো হবে।

শনিবার সকাল ৯টার পর পরই বের হবে মঙ্গল শোভাযাত্রা। বিভিন্ন লোকজ শিল্প কাঠামো নিয়ে এ শোভাযাত্রা চারুকলার সামনে থেকে বের হয়ে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল (সাবেক রূপসী বাংলা) চত্বর ঘুরে চারুকলার সামনে এসে শেষ হবে। এ শোভাযাত্রার উদ্বোধন করবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আখতারুজ্জামান। এবারের শোভাযাত্রায় মোট বড় শিল্প কাঠামো থাকছে সাতটি। এগুলো হল বক ও মাছ, মা ও পাখি, সূর্য, হাতি, জেলে, মহিষ ও সাইকেলে চড়া ট্যাপা পুতুল। পাশাপাশি ফুল, রাজা রানীসহ আরও নানা ধরনের মোটিভ তো থাকছেই।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট-সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে ধানমণ্ডি রবীন্দ্রসরোবর মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে পহেলা বৈশাখের বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালা। বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত বর্ষবরণ অনুষ্ঠান চলবে। এতে দলীয় সংগীত পরিবেশন করবে বহ্নিশিখা ও স্বভূমি লেখক শিল্পী কেন্দ্র। একক সংগীত পরিবেশন করবেন মহাদেব ঘোষ, শারমিন সাথী ময়না, আরিফ রহমান, আবিদা রহমান সেতু, সানজিদা মঞ্জুরুল হ্যাপি, শ্রাবণী গুহ রায়, দিল আফরোজ রেবা, আকরামুল ইসলাম, কানন বালা সরকার, শান্তা সরকার, সমীর বাউল, রঞ্জিত বাউল, মমতা দাসী, বাউল দেলোয়ার, সনিয়া বাউল, শফিউল আলম রাজা প্রমুখ। দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করবে মুক্তধারা আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্র। একক আবৃত্তি পরিবেশন করবেন গোলাম সারোয়ার, রেজীনা ওয়ালী লীনা, ঝর্ণা সরকার ও আশরাফুল হাসান বাবু। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করবে নাচের দল নৃত্যম ও নৃত্যজন।

শিল্পকলা একাডেমি-নববর্ষ ১৪২৫ বঙ্গাব্দ উদযাপন উপলক্ষে আজ মিরপুর সাংস্কৃতিক ফোরাম এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে সকাল ৭টায় মিরপুর-২, ন্যাশনাল উচ্চ বিদ্যালয় ও উত্তরা কালচারাল সোসাইটি এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে সকাল ৯টায় উত্তরার বটতলার রবীন্দ্র সরণি মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

এছাড়াও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে দুপুর ৩টায় বাহাদুর শাহ্ পার্ক এবং বিকাল সাড়ে ৪টায় একাডেমির উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে লোকজ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা এবং বিকাল ৫টায় একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে আলোচনা পর্বে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান।

চ্যানেল আই-সুরের ধারা-প্রভাতের প্রথম প্রহরে রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার নেতৃত্বে সারাদেশ থেকে নির্বাচিত হাজারও শিল্পীর কণ্ঠে পরিবেশিত হবে বর্ষবরণের গান। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ অনুষ্ঠানে সংগীত ও আলোচনায় অংশ নেবেন বাংলাদেশ ও কলকাতা থেকে আগত বিশিষ্টজনেরা। অনুষ্ঠানস্থলে থাকবে বাঙালির হাজার বছরের বিভিন্ন ঐতিহ্যের উপাদান দিয়ে সাজানো বৈশাখী মেলার হরেক রকম স্টল। উৎসব চলবে দুপুর ২টা পর্যন্ত।

শিশুপার্কের নারকেলবীথি চত্বরে ঋষিজের আয়োজন-ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠীর আয়োজনে শিশুপার্কের পাশে নারকেলবীথি চত্বরে অনুষ্ঠিত হবে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান ‘জাগো নব আনন্দে’। এই আয়োজন শুরু হবে সকাল সাড়ে ৭টায়। উদ্বোধন করবেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। এতে সম্মাননা জানানো হবে লোকসংগীতশিল্পী আকরামুল ইসলাম, চারুশিল্পী কামাল পাশা চৌধুরী ও বাচিকশিল্পী রূপা চক্রবর্তীকে।

বাংলা একাডেমি-বক্তৃতানুষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বাংলা একাডেমি। সকাল সাড়ে ৭টায় একাডেমির রবীন্দ্র-চত্বরে অনুষ্ঠিত হবে বর্ষবরণের এই আয়োজন। এতে নববর্ষ বক্তৃতা প্রদান করবেন প্রাবন্ধিক-গবেষক আবুল মোমেন।স্বাগত বক্তব্য দেবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। সভাপতিত্ব করবেন ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিক। বক্তৃতা পর্ব শেষে অনুষ্ঠিত হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালা। এছাড়া সকাল ১০টায় একাডেমি প্রাঙ্গণে শুরু হচ্ছে দশদিনের বইয়ের আড়ং। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এ আড়ং খোলা থাকবে। ১০ বৈশাখ শেষ হবে বইয়ের আড়ং।

বাংলা একাডেমি ও বিসিকের মেলা-বাংলা একাডেমি এবং বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের (বিসিক) যৌথ আয়োজনে আজ শুরু হচ্ছে দশদিনের বৈশাখী মেলা। বিকাল ৪টায় একাডেমি প্রাঙ্গণে এ মেলার উদ্বোধন করবেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। এতে বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ। সভাপতিত্ব করবেন বিসিক চেয়ারম্যান মুশতাক হাসান মুহ. ইফতিখার। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলার কার্যক্রম চলবে। প্রতি সন্ধ্যায় মেলামঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ১০ বৈশাখ শেষ হবে দশদিনের এ বৈশাখী মেলা।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর-সকাল ৯টায় আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে নববর্ষ বরণের অনুষ্ঠান। এতে নৃত্য পরিবেশন করবে নৃত্যজন ও সংগীতাঙ্গন মনিপুর। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করবে কল্পরেখা, ইউসেপ স্কুল, আগারগাঁও আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ও বধ্যভূমির সন্তানদল এবং বাউল গান পরিবেশন করবে রঞ্জিত দাস বাউল ও মমতা দাসী।

ad

পাঠকের মতামত