289913

‘জন্মের আগেই নিজের বাবাকে হারানোয় সন্তানকে ঘিরেই ছিল তার সব চিন্তা’

নিউজ ডেস্ক।। জন্মের তিন মাস আগে বাবা মারা যান। ১০ দিন পর মা। চার বছর কেটেছে বড় বোনের কাছে। কিন্তু অন্যের সংসারে থেকে ভাইকে মানুষ করা অসম্ভব হওয়ায় শিশু বয়সেই তাকে দেয়া হয় এতিমখানায়। সেখানে থেকে লেখাপড়া শিখে এক ঝাঁক বর্ণিল স্বপ্ন নিয়ে পা রাখেন ঢাকায়। চাকরি নেন বনানীর এফ আর টাওয়ারের ১০ তলায় একটি ফার্মে। মাত্র তেত্রিশ বছরের টগবগে যুবক মিজানুর রহমান লিটন। মার্চের ২৮ তারিখের ভয়াবহ আগুন তার স্বপ্নগুলো গভীর নীলিমায় ডানা মেলার আগেই পুড়ে শেষ হয়ে গেছে। লিটনের বাড়ি খুলনা তেরখাদা উপজলোর কোদলা গ্রামে। নিয়তির কি নিষ্ঠুর পরিহাস। লিটন মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থায় বাবাকে হারান। পাঁচ বছরের ছেলে এবং দ্বিতীয় সন্তান পৃথিবীর আলো দেখার আগেই আগুন লিটনকে নিয়ে যায় না ফেরার দেশে।

লিটনের বড় ভাই শেখ নজরুল ইসলাম জানান, এফ আর টাওয়ারের ১০ তলায় একটি ফার্মে কর্মরত ছিল। আগুন নেভানোর পর তার লাশ বের করে রাখা হয় সিএমএইচ-এ। সেখানে লাশ শনাক্ত করে খুলনার কোদলা গ্রামে নিয়ে আসা হয়। লিটনের নামাজে জানাজা ও তেরখাদার নিজ বাড়িতে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়। এলাকাবাসী জানায়, সন্তান ও পরিবার নিয়ে লিটনের অনেক স্বপ্ন ছিল। জন্মের আগেই নিজের বাবাকে হারানোয় সন্তানকে ঘিরেই ছিল তার সব চিন্তা। দ্বিতীয় সন্তানের বাবা হবেন জেনে ভীষণ খুশিও হয়েছিলেন। কিন্তু সে খুশি আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

লিটনের স্ত্রীর নাম তানিয়া বেগম। ছেলের নাম মো. তানিম। স্বামীর এমন অকাল মৃত্যুতে তানিয়া অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। চোখেমুখে আগামীর অনিশ্চিত দিন। স্বামীকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ তানিয়া জানতে চান অনাগত সন্তানসহ দুই সন্তানকে নিয়ে কিভাবে জীবনযুদ্ধ পাড়ি দেবেন? তার প্রশ্ন যারা শুনছে তাদের কেউই জবাব দিতে পারছে না।  লিটনের স্বজনরা জানান, তিন ভাই ও তিন বোনের মধ্যে লিটন সবার ছোট। লিটনের জন্মের আগে বাবা আর ওর জন্মের কিছুদিন পর মা মারা যান। এরপর বড় বোন কিছুদিন আগলে রেখেছিলেন। সবার ছোট হয়ে সে আগেই বিদায় নিল। সবার জন্য এর চেয়ে বড় কষ্ট আর কী হতে পারে? উৎস: ইনকিলাব।

ad

পাঠকের মতামত