289696

ক্লাস না নিয়েও বেতন তোলেন তিনি, রয়েছে একাধিক ছাত্রীর শ্লীলতাহানীর অভিযোগ

জেলা প্রতিনিধিঃ বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলায় আমড়াতলা দারুল উলুম হোসাইনিয়া দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক মোহাম্মদ ফিরোজ। দীর্ঘদিন ধরে মাদ্রাসায় ক্লাস না নিয়েও শুধু হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে বেতন তোলার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।শুধু তাই নয়, এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে একাধিক ছাত্রীদের শ্লীলতাহানীরও অভিযোগ পাওয়া পাওয়া গেছে।এ ছাড়া ওই শিক্ষক একাধিকবার মাদকসহ পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন বলে জানিয়েছেন পাথরঘাটা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মুনিরুল ইসলাম।

ওই মাদ্রাসার শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়- দুর্নীতি, অনিয়ম, মাদক ও যৌন হয়রানির মতো অপরাধে জড়িত থাকলেও ক্ষমতাশীল আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকায় প্রতিবারই আইনের ফাঁক-ফোঁকরে বের হয়ে আসছেন তিনি। মাদ্রাসায় ছাত্রীদের যৌন হয়রানিসহ বিভিন্ন অনিয়মের প্রতিবাদ করলে ছাত্র-ছাত্রীদের সামনেই মাদ্রাসা সুপারসহ শিক্ষকদের শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করেন তিনি। এ ছাড়া তার বড় ভাই ওই মাদ্রাসারই শিক্ষক মোস্তফা জামান জহিরও একইভাবে মাদ্রাসায় কোনো ধরনের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে অংশ না নিয়েই বেতন তুলছেন বলে জানা গেছে। তার এই ভাই উপজেলার কালমেঘা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এবং অভিযুক্ত শিক্ষক ফিরোজ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য। তারা দুজনই আমড়াতলা গ্রামের বাসিন্দা।

আমড়াতলা দারুল উলুম হোসাইনিয়া দাখিল মাদ্রাসার অফিস সূত্রে জানা গেছে, ফিরোজ ওই মাদ্রাসার ইবতেদায়ী বিভাগের শিক্ষক। তিনি ১৯৯৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ৮ তারিখ ওই মাদ্রাসায় যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি প্রতি মাসে ১০ হাজার ৬৮০ টাকা বেতন তোলেন। সেই হিসেবে তিনি এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০ লাখ টাকা বেতন গ্রহণ করেছেন। এই মাদ্রাসার শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীরা অভিযোগ করেন, ফিরোজ প্রতিদিন সকালে শরীরে তোয়ালে জড়িয়ে মাদ্রাসায় এসে ক্লাস শুরু হওয়ার আগেই হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে চলে যান। আবার অনেক ছাত্র-ছাত্রী জানায়- তাদের মাদ্রাসায় ফিরোজ নামের কোনো শিক্ষক আছে তা তারা জানেই না।

এই মাদ্রাসায় সাত থেকে আট বছর আগে ভর্তি হওয়া নবম শেণির জহিরুল ইসলাম, শারমিন, মারিয়া, অষ্টম শ্রেণির হাসান, ষষ্ঠ শ্রেণির আয়শা আক্তার ও কারিমার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফিরোজ যে তাদের শিক্ষক তা তারা জানেই না।তারা মাঝে মাঝে তাকে মাদ্রাসায়ে এসে অন্য শিক্ষকদের সঙ্গে ঝগড়া করে চলে যেতে দেখে। তাকে শিক্ষার্থীরা কখনো আমাদের ক্লাস নিতে দেখেনি। এদিকে নাম প্রকাশ না করা শর্তে ফিরোজের শ্লীলতাহানীর শিকার একাধিক ছাত্রী জানায়, বিভিন্ন সময় ফিরোজ তাদের অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে আসছে। তার ওই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তিনি ওই ছাত্রীদের অনেকেরই জোর করে শ্লীলতাহানী করেছেন। পরে এই ঘটনা কাউকে না বলতে তাদের নানা রকমের হুমকি-ধামকি দেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই মাদ্রাসার এক শিক্ষক বলেন, ‘মাদ্রাসার সকলেই জানে ফিরোজ একটি খারাপ প্রকৃতির লোক। আমরা চাই মাদ্রাসার ছাত্রীদের লাঞ্ছিত করার ঘটনায় তার বিচার হোক। ফিরোজের বিরুদ্ধে মাদক, ধর্ষণসহ একাধিক অভিযোগ আছে। আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকায় তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। ফিরোজ মাদ্রাসায় ক্লাস না নিয়ে প্রায় ২৬ বছর ধরে জোর করে বেতন তুলে নিয়ে যায়। আর তার এই কাজে সহযোগিতা না করলে মাদ্রাসার সুপারসহ সকল শিক্ষকদের শারীরিক ভাবেও লাঞ্ছিত করে থাকে সে।’

এ বিষয়ে আমড়াতলা দাখিল মাদ্রাসার সুপারিন্টেনডেন্ট মাওলানা ফারুক হোসেন বলেন, ‘ফিরোজ সরকারি দলের লোক হওয়ায় মাদ্রাসায় বেশি প্রভাব খাটায়। তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে চায় না। ফিরোজের বিরুদ্ধে আমাদের মাদ্রাসার ছাত্রীদের শ্লীলতাহানীর কথা শুনেছি। এই ঘটনায় ওই ছাত্রীর অভিভাবকও মৌখিক অভিযোগ করেছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘ফিরোজ বছরে একদিনও মাদ্রাসায় ক্লাস নেন না। প্রতিদিন সকালে এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে চলেন যান। আমি এই ঘটনার প্রতিবাদ করলে আমাকে লাঞ্ছিত করে ফিরোজ।’

এ বিষয়ে অভিযুক্ত ফিরোজ বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ মিথ্যা। আমি কোনো মেয়েকে শ্লীলতাহানী করিনি।’ স্কুলে অনুপস্থিত থেকেও স্বাক্ষর দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি একটা মামলার কারণে আড়াই মাস ধরে মাদ্রাসায় আসতে পারিনি, তাই হয়তো এ কথা বলেছে।’

পাথরঘাটা উপজেলার অ্যাকাডেমিক সুপারভাইজার মো. মনিরুল ইসলাম অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘এরকম অভিযোগ ইতিপূর্বে আমার কাছেও আছে। তারা দুই ভাইয়ের মধ্যে বড় ভাই মোস্তফা জামান জহির মাঝে মাঝে মাদ্রাসায় ক্লাস নেন। কিন্তু ফিরোজ আদৌ কখনও ক্লাস নেন না। আমরা দুই-একদিনের মধ্যেই ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’ সূত্র: দৈনিক আমাদের সময়

ad

পাঠকের মতামত