289067

হাবিবুল্লাহ হিরো তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হয়েও কোটিপতি

নিউজ ডেস্ক।। নাম তার হাবিবুল্লাহ হিরো। চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেটের তৃতীয় শ্রেণির এ কর্মচারী কাস্টমসেরও যেন হিরো! তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হলেও তিনি এখন কোটিপতি। চট্টগ্রাম নগরীতে বিলাসবহুল বাড়ি ও গাড়ি রয়েছে তার। অভিযোগ রয়েছে, তার মাধ্যমেই কাস্টমসের অসাধু কর্মকর্তারা ঘুষের লেনদেন করে থাকেন। হিরো চাইলেই যে কোনো ফাইল দ্রুত ছাড় করাতে পারেন। তবে টাকা ছাড়া নয়। সংশ্নিষ্টরা মনে করেন, তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে বেরিয়ে আসবে চট্টগ্রাম কাস্টমসের কালো বিড়ালগুলোর সব অজানা তথ্য।

চট্টগ্রাম কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের এসআই হিসেবে বর্তমানে সিইপিজেডে দায়িত্ব পালন করছেন হিরো। সেখানেও বেপজার অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে যোগসাজশে দুর্নীতির শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পেয়ে তাকে চট্টগ্রাম কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট কর্তৃপক্ষ গোপন নজরদারিতে রেখেছে বলে জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের কমিশনার আজিজুর রহমান সমকালকে বলেন, ‘হিরো চট্টগ্রাম কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের এসআই হিসেবে বর্তমানে সিইপিজেডে দায়িত্ব পালন করছেন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। তাই তাকে গোপন নজরদারিতে রাখা হয়েছে।’ অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৮৮ সালে চট্টগ্রাম কাস্টমসে সিপাহি হিসেবে চাকরি শুরু করেন হিরো। তার বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী উপজেলার উত্তর গোমদণ্ডি এলাকায়। তার বাবাও চট্টগ্রাম কাস্টমসে চাকরি করতেন। তিনি মারা যাওয়ার পর পোষ্য কোটায় ছেলে হিরোকে চাকরি দেয় চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। বছর কয়েক আগে সিপাহি থেকে এসআই হিসেবে পদোন্নতি পাওয়ার পর তার বিলাসিতা আরও বেড়ে যায়। সামান্য বেতনে চাকরি করলেও হিরো এখন কোটিপতি। চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদের পাশেই বিল্লাপাড়ায় তার রয়েছে বিলাসবহুল নিজস্ব তিনতলা বাড়ি। রয়েছে তার প্রাইভেটকারও। বড় ছেলে ফয়সালকে মালয়েশিয়ায় পড়াশোনার জন্য পাঠান এই এসআই। ঢাকাস্থ কানাডা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে তার ছোট ছেলে ফাহিম। একমাত্র মেয়ে মহুয়া পড়ছে চট্টগ্রামের ব্রিটিশ কাউন্সিলে।

এমন বিলাসী জীবনযাপনের টাকার উৎস কোথায়? জানতে চাওয়া হলে হিরো সমকালকে বলেন, ‘আমার লেভেলে অনেকেই তিন-চারটি বাড়ি করেছে। আমি একটাই বাড়ি করেছি। আর কোথাও কিছুই নেই আমার। ওই বাড়িটিও করেছি বোনজামাইয়ের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে। এ ছাড়া আমি আগে কমদামে নগরীর কাঠগড় এলাকায় কিছু জায়গা কিনে রেখেছিলাম, নগরীর বিল্লাপাড়ায় বাড়ি কেনার সময় কাঠগড়ের ওই জায়গাটি বেশি দামে বিক্রি করেছি। এভাবেই সন্তানদের জন্য চট্টগ্রাম নগরীতে তিনতলা একটি বাড়ি করতে পেরেছি।’ তিনি বলেন, ‘আমি যে গাড়িটি ব্যবহার করি, সেটি আমার ওমান প্রবাসী ছোট ভাইয়ের টাকায় কেনা। বড় ছেলেকে মালয়েশিয়া পড়াতে পাঠিয়েছিলাম সত্যি, তবে তাকে তিন মাস পরই দেশে ফেরত এনে ঢাকায় পড়াশোনা করিয়েছি। এর পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সে এমবিএ করে এখন এইচএসবিসি ব্যাংকে চাকরি করছে। ছোট ছেলেকে ঢাকায় কানাডা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫৬ হাজার টাকা ফি দিয়ে ভর্তি করেছি। প্রতি সেশনে ১০ হাজার টাকার ওপরে লাগে। ছোট ছেলে টিউশনি করে নিজের পড়াশোনার খরচ চালায়। মেয়ের পেছনে যে টাকা খরচ লাগে, সেই টাকা দেয় চট্টগ্রাম কাস্টমসের ভ্যাটে চাকরি করা আমার স্ত্রী।’ কাস্টমসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে ঘুষের লেনদেনের অভিযোগটি সত্য নয় দাবি করে হিরো বলেন, আমি সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করি।’ তিনি বলেন, ‘নগরীর বিল্লাপাড়ায় মন্তাজ সওদাগরের কাছ থেকে জায়গা কিনে সেখানে যখন বাড়ি নির্মাণ শুরু করেছিলাম, তখন থেকেই বাড়ির রাস্তা নিয়ে মন্তাজ সওদাগরের ছেলে বিল্লাল ও হেলালের সঙ্গে আমার বিরোধ শুরু হয়। তারাই এখনও আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে।’ উৎস: সমকাল।

ad

পাঠকের মতামত