289149

মৃত্যুর আগে কয়েকবার হার্ট অ্যাটাক করেন নুসরাত

ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার ছাত্রী ও আলিম পরীক্ষার্থী রাফি টানা ১০৮ ঘণ্টা আইসিইউতে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে অবশেষে থামে যায় তার লড়াই। নুসরাত মৃত্যুর আগে কয়েকবার হার্ট অ্যাটাক করেন বলে জানিয়েছে চিকিৎসায় গঠিত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের মেডিকেল বোর্ড।

বুধবার (১০ মার্চ) রাত সাড়ে ৯টায় আইসিইউতেই মারা যান ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি। বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের চিকিৎসক অধ্যাপক রায়হানা আউয়াল জানান, মৃত্যুর আগে তিনি লাইফসাপোর্টে ছিলেন।

নুসরাতের চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান ও শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম বলেন, নুসরাতকে বাঁচাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি আমরা। বুধবার সকাল থেকে তার অবস্থা অবনতি হতে থাকে। একাধিকবার তার হার্ট অ্যাটাক হয়, তার পরও সে সার্ভাইভ (বেঁচে ছিল) করেছিল। কিন্তু রাত সাড়ে ৯টার দিকে সব শেষ হয়ে যায়।

ঢামেক হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. তানভীর আহমেদ বলেন, ‘নুসরাতের শরীরের ৮৫ শতাংশ মেজর বার্ন। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ গভীর পোড়া। তার শ্বাসতন্ত্র পোড়া ছিল। কেরোসিন নিজেই টক্সিক। এটি ফুসফুস ও ব্রেনের কার্যক্ষমতাকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয়। এসব কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে বলা যায়।’

নুসরাতের মৃত্যুর সংবাদ দিয়ে রাতে ঢামেক হাসপাতাল বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি- নুসরাতকে আমরা বাঁচাতে পারলাম না।সামন্ত লাল সেন জানান, রক্ত ও ফুসফুসের মারাত্মক সংক্রমণ থেকে কার্ডিও রেসপিরেটরি ফেইলিয়র (হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ) হয়। এতেই তার মৃত্যু হয়।

তিনি বলেন, ৮০-৮৫ শতাংশ বার্ন হওয়া রোগীর বডিতে অনেক রকম সমস্যা হয়। এই রোগীকে বাঁচানো খুব মুশকিল। বুধবার তার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছে। এ ধরনের পেশেন্টের হঠাৎ মৃত্যু হয়। আমরা সিঙ্গাপুরে কথা বলেছিলাম, তারাও বলেছিল চান্স অব সারভাইবেল কম।

উল্লেখ্য, ৬ এপ্রিল সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় যান নুসরাত জাহান রাফি। মাদ্রাসাছাত্রী তার বান্ধবী নিশাতকে ছাদের ওপর কেউ মারধর করছে এমন সংবাদে তিনি ছাদে যান। সেখানে বোরকাপরা ৪-৫ জন তাকে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে করা শ্লীলতাহানির মামলা তুলে নিতে চাপ দেয়।

অস্বীকৃতি জানালে তারা রাফির গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় সোমবার রাতে অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা ও পৌর কাউন্সিলর মুকছুদ আলমসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন অগ্নিদগ্ধ রাফির বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান।

এর আগে ২৭ মার্চ ওই ছাত্রীকে নিজ কক্ষে নিয়ে শ্লীলতাহানি করেন অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা। এ ঘটনায় ছাত্রীর মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। ওই দিনই অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলাকে আটক করে পুলিশ। সে ঘটনার পর থেকে তিনি কারাগারে আছেন।

ad

পাঠকের মতামত