288983

এবার কার দখলে যাচ্ছে দিল্লির মসনদ?

ডেস্ক রিপোর্ট ।। বিশ্বের বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশের সবচেয়ে বড় গণতন্ত্রের উৎসব ভারতের জাতীয় নির্বাচন শুরু হচ্ছে আজ। প্রতিটি রাজ্যে চলছে ভোটের মাতম। গোটা ভারত সেজেছে যেন নির্বাচনী রঙে। ভারতজুড়ে তো বটেই নির্বাচনের হাওয়া লেগেছে প্রতিবেশী দেশগুলোতেও। দিল্লির মসনদ এবার কার দখলে যাচ্ছে- সে দিকে নজর সবারই। উপমহাদেশ ছাড়াও ভারতের লোকসভা নির্বাচন নিয়ে বিশে^র অন্য দেশগুলোরও আগ্রহের কমতি নেই। এর আগে নির্বাচন হয়েছিল ২০১৪ সালে। সেই নির্বাচনে ভারতবাসী কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের শাসন থেকে মুক্তি পেতে বিজেপিকে ভোটের জোয়ারে ভাসিয়ে দিয়েছিল।

দেশজুড়ে ছিল মোদি ঢেউয়ের দুর্দা- দাপট। দলটি একাই পেয়েছিল ২৮২টি আসন। অন্যদিকে মাত্র ৪৪ টি আসন পেয়ে সবচেয়ে প্রবীণ দল কংগ্রেস হয়েছিল ধরাশায়ী। এর পর মাঝখানে ৫ বছর কেটে গেছে। এ পাঁচ বছর দেশকে শাসন করেছে বিজেপি। এখন আবার লোকসভা নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়ছে। কিন্তু এ সময়টা ঠিক পাঁচ বছর আগের মতো আর নেই, অনেক কিছুই পাল্টেছে। এ ৫ বছর শাসকদল বিজেপির দোষ-গুণ যেমন জনতার সামনে পরিষ্কার হয়েছে ঠিক তেমনি এ সময়ের মধ্যে কংগ্রেসও তিল তিল করে নিজেদের অবস্থান শক্ত করেছে। পুরোদমে নেমেছে লড়াইয়ের ময়দানে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে, ‘থার্ড ফ্রন্ট’।

থার্ডফ্রন্ট অর্থাৎ বিজেপি-কংগ্রেসের বাইরে তৃতীয় শক্তি হিসেবে পরিচিত। নির্বাচনে এ তৃতীয় শক্তির খুঁটির জোর একেবারে কম না; বরং বড় দুই দল বিজেপি ও কংগ্রেসকে এ শক্তিকে সমীহ করতেই হচ্ছে। সবচেয়ে বড় হিসাবটি কষতে হচ্ছে, উত্তর প্রদেশকে নিয়ে সেখানে বহুজন সমাজ দল ও সমাজবাদী দল একজোট হয়ে নির্বাচন করছে। সেখানে মায়াবতী ও অখিলেশ যাদব বিজেপি ও কংগ্রেসের বাইরে রাজনৈতিক বলয় গঠনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। রাজ্যটিতে রয়েছে লোকসভার ৮০টি আসন। সবচেয়ে বেশি আসন বিশিষ্ট এ প্রদেশটি তাই বিজেপির পরিষ্কার রাস্তায় বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এর পরই রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। সেখানে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাত-দিন মোদিকে তুলাধুনা করছেন। কোনো নির্বাচনের আগে শাসকদলের ত্রুটিগুলো জনতার চোখের গোচরে থাকে, বেশি মনেও থাকে। আর বিরোধী দলগুলো সেগুলোকেই প্রচার-হাতিয়ার হিসেবে কাজে লাগায়। বিজেপিকে সেই সমস্যা মোকাবিলা করতে হচ্ছে। যে বিষয়টি দলটিকে বিপাকে ফেলতে পারে তা হলো বেকার সমস্যা। গত নির্বাচনে বিজেপি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ঘরে ঘরে চাকরির ব্যবস্থা করবে।

তারা তা করতে পারেনি; বরং সম্প্রতি এক সমীক্ষা জানিয়েছে, গত ৭০ বছরের মধ্যে বর্তমানে ভারতে বেকার সমস্যার হার সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়া কংগ্রেসের বিরুদ্ধে যে দুর্নীতির ধোঁয়া তুলে ২০১৪ সালে ক্ষমতায় এসেছিল, সেখানেও বিজেপির উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই। তবে দলটি যেটা করেছে তা হলো ভারতের অর্থনীতিকে মজবুত করে তুলেছে। বিদেশি বিনিয়োগ আগের চেয়ে বেড়েছে। ভারত এখন বিশ^ অর্থনীতিতে তাল দিচ্ছে। আর ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র মধ্য দিয়ে মোদি ক্ষমতায় এসে সেই ইঙ্গিতই দিয়েছিলেন।

এটিই বিজেপির অন্যতম ভিত। এর পর রয়েছে কট্টর জাতীয়তাবাদী অবস্থান। এবার বিজেপির ইশতেহারেও এটি এক নাম্বারে রাখা হয়েছে। এর পরই রয়েছে হিন্দুত্ববাদ। এটিও বিজেপির ক্ষুরধার অস্ত্র। এবার চোখ ফেরানো যাক কংগ্রেসের দিকে। গত নির্বাচনে কংগ্রেসের ভরাডুবির পর প্রবীণ নেতৃবৃন্দ যারপর নাই হতাশ হয়েছিলেন। কিন্তু অল্প কিছুদিন যেতেই রাহুল গান্ধী ঘুরে দাঁড়িয়েছেন।

শুধু রাহুল একা নয় এবার মাঠে নেমেছেন বোন প্রিয়াংকা গান্ধী। প্রিয়াংকাকে দলের সাধারণ সম্পাদক করে উত্তর প্রদেশের একাংশের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সেখানে দিন-রাত পরিশ্রম করে চলেছেন তিনি। সেখানে কংগ্রেসের অবস্থান আগের চেয়ে ভালো। আর রাহুল গান্ধী আমেথি ছাড়া কেরালার ওয়ানাড থেকে প্রার্থী হয়েছেন।

লক্ষ্য একটাই দক্ষিণ ভারতে কংগ্রেসের শক্তি বৃদ্ধি করা। যে কোনো নির্বাচনে শাসকদলের যা ত্রুটি বিরোধী দলের সেটিই ঘুঁটি। কংগ্রেস সেই ঘুঁটি চালতে একদমই ভুল করেনি। মোদির আমলে বেকার সমস্যা ও দরিদ্রতা কাটেনি। আর কংগ্রেস এবার ঘোষণা দিয়েছে ক্ষমতায় গেলে তারা দরিদ্রদের জন্য ন্যূনতম ভাতা হিসেবে বছরে ৭২ হাজার রুপি দেবে। এটি বেশ কাজে দিবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

লক্ষণীয় দিক সেটি হলো- একদিকে মোদি অন্যদিকে বাকি সবাই। বিজেপির বাইরে মোদি বিরোধী দলগুলোর আওয়াজ একটাই ‘মোদি ঠেকাও’। উত্তর প্রদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গ মায়াবতী, অখিলেশ যাদব, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সবারই ওই একই সেøাগান- মোদি ঠেকাও। এ থেকে আঁচ করা যায়- মোদি পুনরায় দিল্লির মসনদে বসতে যাচ্ছেন বাকিরা শুধু ঠেকাতে চাইছেন! আর বেশি কিছু জরিপও সেদিকেই ইঙ্গিত করেছে।

ad

পাঠকের মতামত