288591

অপারেশনে শিশু মৃত্যু, ডাক্তারদের অভিনয় ৪ ঘণ্টা

নিউজ ডেস্ক।। বগুড়া শহরের সুত্রাপুরে মালেকা নার্সিং হোমে চিকিৎসকের অবহেলায় ৬ বছরের এক শিশুর মৃত্যু অভিযোগ পাওয়া গেছে। অপারেশনের বিল আদায় ও চার ঘণ্টা অভিনয়ের পর সোমবার রাত সাড়ে ৮ টার দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শিশুটিকে সিরাজগঞ্জের একটি হাসপাতালে স্থানান্তর করার পরামর্শ দেন। ডাক্তাদের কথা মত স্বজনরা অন্য হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার চিকিৎসকরা শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন। অতঃপর শিশুটির লাশ নিয়ে তারা মালেকা নার্সিং হোমে ফিরে আসেন। শেষমেশ অবস্থা বেগতিক দেখে চিকিৎসক, নার্স ও ক্লিনিকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আলো নিভিয়ে পালিয়ে যান।

এ সময় স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, এই ক্লিনিকে এর আগেও টনসিল এবং মুসলমানির অপারেশনের সময় আরও দু’টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ স্থানীয় প্রশাসন ও প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে। যার ফলে তাদের শাস্তি ভোগ করতে হয়নি।  সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার নলকা কায়েম গ্রামের কৃষক হারুনার রশিদের ৬ বছর বয়সী মেয়ের টনসিলে সমস্যা। তাই গত শনিবার চিকিৎসার জন্য মালিকা নার্সিং হোমে আনা হয়। সেখানে তাকে দেখেন নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞ ও সার্জন ডা. সাইদুজ্জামান।

নিহত শিশুটির মামা আলমগীর তালুকদার জানান, ওই চিকিৎসক সোমবার বিকাল ৩টায় অপারেশনের সময় ঠিক করেন। আর এজন্য ফি ধরেন সাড়ে ১১ হাজার টাকা। সেই দিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শিশুটিকে ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। আর অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয় বিকাল ৩টায়। বিকাল ৪টায় অপারেশন সফল হয়েছে বলে চিকিৎসক জানান। এরপর নার্সরা শিশুটিকে বেডে দিলে হৃদস্পন্দন বা শ্বাস-প্রশ্বাসের সাড়া না পেলে উপস্থিত স্বজনদের সন্দেহ হয়। তারা সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসক ও নার্সদেরকে বিষয়টি জানালে তারা বলেন, ‘রোগী ভালো আছে, শিগগিরই জ্ঞান ফিরবে।’

শিশুটির স্বজনরা আরো জানান, রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত শিশুটির জ্ঞান না ফেরায় তারা অস্থির হয়ে ওঠেন। এ সময় চিকিৎসকর জানান, রোগীর অবস্থা ভাল নয়, তাকে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিতে হবে। চিকিৎসকের কথা মতো স্বজনরা শিশুটিকে সিরাজগঞ্জে নেয়ার আগে প্রথমে বগুড়া শহরের মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে এবং পরে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শজিমেক) নিয়ে যায়। শজিমেকের চিকিৎসক ইঙ্গিতে বোঝান শিশুটি মারা গেছে।

ভুল অপারেশনে শিশু মৃত্যুর কথা জানাজানি হলে বিক্ষুব্ধ জনতা ক্লিনিকে ভাংচুর চালায়। এ সময় ক্লিনিকে থাকা চিকিৎসক, নার্স, ম্যানেজার আলো বন্ধ করে পালিয়ে যায়। অনেকে অবার ভেতরেই লুকিয়ে থাকে। শিশুর মামা আরো জানান, অপারেশনের সময় তার ভাগ্নির মৃত্যু হলেও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ চার ঘণ্টা তাদের সঙ্গে অভিনয় করেন। শিশুটি বেঁচে আছে, শিগগিরই জ্ঞান ফিরবে বলে ক্লিনিকের বিলও নেয়া হয়। এরপর সবাই পালিয়ে যান। এছাড়াও রোগীর চিকিৎসার বিভিন্ন কাগজপত্র ও রেফার্ড লেটার গায়েব করা হয়েছে।

খবর পেয়ে রাত সাড়ে ১২টার দিকে সদর থানার ওসি এসএম বদিউজ্জামান এবং ওসি (তদন্ত) কামরুজ্জামান মিয়া ক্লিনিকে ঢোকেন। এ সময় তারা পুরো ক্লিনিক খুঁজে শুধু ইন্টার্ন চিকিৎসক রাফি হাসানকে পান। রাত ১টার দিকে পুলিশ শিশুর লাশ উদ্ধার করে।

ডা. রাফি পুলিশকে জানান, এ ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সিরাজুল ইসলাম ও ম্যানেজার বেলাল হোসেন। তিনি রাতে কাজে এসে জানতে পারেন, ডা. সাইদুজ্জামান এক শিশুর টনসিল অপারেশন করেছেন। শিশুর অবস্থা ভালো না হওয়ায় তাকে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে। এর বাইরে তিনি কিছু জানাতে পারেননি। এনেসথেয়েটিস্ট কে ছিলেন তাও তিনি জানেন না। তবে, ডা. সাইদুজ্জামানসহ অন্যদের নাম্বারে যোগাযোগ করলে ফোন বন্ধ পাওযায় তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে থানার ওসি এসএম বদিউজ্জামান সংবাদিকদের জানান, শিশুটির পরিবার মামলা দিলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ad

পাঠকের মতামত