288269

আসামে গরুর মাংস বিক্রেতাকে নির্যাতন, হত্যার হুমকি (ভিডিও)

রাশিদ রিয়াজ : বিজেপি শাসিত আসামে ফের গোমাংস বিক্রেতাকে নিগ্রহের ঘটনা ঘটেছে। আসামের বিশ্বনাথ চারিয়ালি এলাকায় গোমাংস বিক্রির অভিযোগে ৬৮ বছর বয়সী শওকত আলিকে বেধড়ক মারধর করা হয়। এমনকি তাকে শূকরের মাংসও খাওয়ানো হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। টাইমস অব ইন্ডিয়া/ কোলকাতা ২৪/এই সময়/ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

গত সাতই এপ্রিল এই ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর গোটা ঘটনাটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, বাজারের মধ্যে জল কাদায় মাখামাখি এক মুসলিম প্রৌঢ় বসে রয়েছেন, তাকে ঘিরে রয়েছে অনেকে। তিনি বাজারের মধ্যে গোমাংস বিক্রি করছিলেন বলে অনুমান করা হচ্ছে এবং তার ওপর শুরু হয় নির্যাতন।

শওকত আলির নাগরিকত্ব নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়। জিজ্ঞাসা করা হয় এনআরসি সার্টিফিকেট তার রয়েছে কিনা, নাকি তিনি একজন বাংলাদেশী। স্থানীয় পুলিশ উদ্ধার করে শওকত আলিকে। পুলিশ সূত্রে খবর, গত ৩৫ বছর ধরে শওকত ওই বাজারের ব্যবসায়ী। সেখানেই তিনি গোমাংস বিক্রি করেন। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় যখন ওই ব্যবসায়ীকে শূকরের মাংস খেতে বাধ্য করা হয়।

আরেকটি ভিডিও দেখা গিয়েছে উত্তেজিত কিছু মানুষ শওকত আলিকে একটি প্যাকেট থেকে মাংস খেতে বাধ্য করছে। তাদের দাবি এটি শূকরের মাংস। মারধরের ঘটনায় মারত্মক আহত হয় ওই ব্যবসায়ী। শওকত আলির কাছে বিফ বিক্রি করার লাইসেন্স আছে কি না জিজ্ঞেস করে তারা জানতে চায়, তুমি কি বাংলাদেশি? তোমার নাম কি এনআরসি’তে রয়েছে?স্থানীয় হাসপাতালে পরে তাকে ভর্তি করা হয়। রাস্তার ধারে হাঁটু মুড়ে বসে তাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য ভিক্ষে চাইছেন ৬৮ বছরের শওকত আলি। তবে তাতে বিন্দুমাত্র ভ্রূক্ষেপ না-করে চলছে অকথ্য অত্যাচার। এমনই একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ভিডিয়োটির সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। শুধু শওকত আলিই নয়, ওই বাজারের ম্যানেজারকেও নির্যাতন করা হয়। এ ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয়ের বিরুদ্ধে স্থানীয় থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

জেলা পুলিশ জানিয়েছে, দুই এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। একটি করেছেন শওকত আলির ভাই। ভিডিয়োয় যাদের দেখা গিয়েছে, তাদের খোঁজে শুরু হয়েছে তল্লাশি। গরুর মাংস ভক্ষণ ও সংরক্ষণের দায়ে ২০১৫ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশে দাঙ্গাবাজরা পিটিয়ে হত্যা করে মোহাম্মদ আখলাক নামে এক মুসলিমকে। তার ছেলে মোহাম্মদ দানেশকে পিটিয়ে মারাত্মক জখম করে।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বিশ্বনাথের এসপি রাকেশ রওশন বলেছেন, এই ভিডিওটি জেনুইন মনে হচ্ছে। শওকত আলীর পরিবারের পক্ষ থেকে করা একটি এফআইআর গ্রহণ করেছি। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছি। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছি।

বিশ্বনাথের ডিসি পবিত্র রাম খাউন্ড বলেছেন, আমরা আগেভাগেই সতর্কতামূলক সব ব্যবস্থা নিয়েছি। শান্তি ও সহনশীলতা বজায় রাখতে স্থানীয় সংগঠনগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছি। ঘটনার তদন্ত চলছে। পরিবারের মতে, শওকত আলী খাদ্যপণ্য চাল ও মাংস বিক্রির একটি ছোট্ট দোকান চালান। সপ্তাহে রোববার ও বৃহস্পতিবার দুদিন তিনি সেখানে বেচাবিক্রি করেন। সপ্তাহের অন্যদিনে তিনি বিক্রি করেন বোরকা ও ধর্মীয় বিভিন্ন জিনিসপত্র।

শওকত আলীর ছোটভাই আবদুল রেহমান। তিনি স্থানীয় একটি সরকারি স্কুলের শিক্ষক। তিনি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, এখন থেকে ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে আমার পরিবার চাল ও মাংস বিক্রির ওই দোকান পরিচালনা করে আসছে। ওই এলাকায় এমন চারটি দোকান আছে। এসব দোকানের খদ্দের হলেন মুসলিমরা ও ছোটখাট ক্রেতারা। ঘটনার দিন আমাদের দোকানে ছিল মহিষের মাংস। রাতে দোকান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সামান্য আগে একদল দাঙ্গাবাজ সেখানে হানা দেয়। তারা শওকত আলীর ওপর হামলা করে। রড দিয়ে তাকে প্রহার করে। ছোট্ট দোকানটি ভাঙচুর করে। এমনকি শওকত আলী কাঁচা মাংস ভক্ষণ না করলে তাকে হত্যার হুমকি দেয় তারা।

আবদুল রেহমানের ভাষায়, আমার ভাই এখন হাসপাতালে। এই অঞ্চলে এর আগে আমরা এমন সাম্প্রদায়িকতা দেখি নি কখনো।

একই কথা বলেছেন, অল আসাম মাইনরিটি স্টুডেন্টস ইউনিয়নের সিনিয়র নেতা সাইফুদ্দিন আহমেদ। তিনিও বলেছেন, এমন ঘটনা এর আগে কখনো ঘটেনি। হামলাকারীরা শওকতকে প্রহার করেছে। তাকে হুমকি দিয়েছে। টেনেহিঁচড়ে বের করেছে। তাকে হত্যার হুমকি দিয়েছে। পুলিশের কাছে অভিযোগে আমরা বলেছি তাকে নির্যাতন করা হয়েছে। সূত্র : আমাদেরসময়.কম

https://www.youtube.com/watch?v=Nld55hvd_d8

ad

পাঠকের মতামত