288151

পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করে বেঁচে থাকতে পারবেন তো : পুলিশের হুমকি

ঝিনাইদহ সংবাদদাতা: মিথ্যা জব্দ তালিকা, মিথ্যা এজাহার, অসত্য জবানবন্দি, অসত্য পুলিশ প্রতিবেদন দিয়ে অমিত শিকদার বিশু নামের এক যুবক কে ফাঁসিয়ে দিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু বিজ্ঞ আদালতের বিচারে যা মিথ্যা প্রমাণিত হয়, তিনি নির্দোশ প্রমাণিত হয়ে বেকসুর খালাস পেয়েছেন। এমন ঘটনা ঘটেছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের নিশ্চিন্তপুর গ্রামে। এদিকে এই রায়ের পর কালিগঞ্জের নিশ্চন্তপুর গ্রামের যুবক বিশু পুলিশের সাজানো মামলার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিচার চেয়ে ঝিনাইদহ চীফ চুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন( মিস মামলা) করেন।

বিজ্ঞ আদালত এই বিষয়টি আমলে নিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তাকে বিষয়টি তদন্ত দেন। তিনি সেই অভিযোগ তদন্তে প্রমানিত হবার পর অভিযুক্ত এসআই, এএসআই সহ ৫ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। তবে এই ঘটনার পর বর্তমানে কালীগঞ্জের নিশ্চিন্তপুর গ্রামের মৃত স্কুল শিক্ষক নন্দকুমার শিক্ষকের স্ত্রী ইতি শিকদার, পুত্র অমিত শিকদার ও তার স্বজনরা আতঙ্কের মধ্যে আছেন বলে জানিয়েছেন। এদিকে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর ঘোরাঘুরিতে চরম নিরাপত্তহীনতায় ভুগছে এবং বাড়ি ছেড়ে সন্তান ,নাতী পুত্র আত্মগোপন করেছে বলে জানিয়েছেন। তবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিলু মিয়া বিশ্বাস এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে বলছেন যে শুধু বিশু কেন যে কোন নাগরিকের নিরাপত্তার বিষয়টি তারা খতিয়ে দেখবেন।

এদিকে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থানায় দায়েরকৃত মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৬ সালের ১০ মার্চ রাতে কালীগঞ্জের অমিত শিকদার বিশু একটি বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে বাড়ির পথে কাশিপুর রেলগেটে এলে একদল পুলিশ থামিয়ে তাদের শরীর তল্লাসি করে কিছু না পেলেও দুইজন সিপাহী ও থানার এএসআই গফ্ফার নসিমন ও মটর সাইকলে বিশু কে থানায় নিয়ে যান। পরদিন অমিত শিকদার বিশুর কাছে ২০ পিচ ইয়াবা পাওয়া গেছে দেখিয়ে ৫/১৬ নম্বর একটি মামলা দিয়ে আদালতে পাঠান। তবে বিশু যুবক ৪১ দিন হাজত খেটে জামিন পান। সেই মামলায় দীর্ঘ বিচারের পর গত ২০১৮ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর মামলার রায়ে উল্লেখ করা হয় যে-‘মামলাটি মিথ্যা প্রমানিত হওয়ায় আসামী অমিত সিকদার ওরফে বিশুকে খালাস দেওয়া হলো। ’

এ ঘটনার পর অমিত সিকদার এই মামলায় অনেক হয়রানীর স্বীকার হয়েছন অভিযোগ করে রায় ঘোষনার দিনই তিনি ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দিয়ে যারা তাকে হয়রানী করলো তাদের বিচার চেয়ে আদালতে আবেদন করেন। সে আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালতে মিস ২৬/১৮ নম্বর একটি মামলা রুজু হয়। এই মামলায় আদালত এক আদেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ঝিনাইদহ সদর সার্কেলকে তদন্তের নির্দেশ দিলে সদর সার্কেল কনক কুমার দাস তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দাখিল করেন। দীর্ঘ প্রতিবেদনে উল্লেখ আরো উল্লেখ করেছেন, ‘রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ কেউ অমিত সিকদারকে রাজনীতি থেকে দুরে রাখতে পুলিশকে ব্যবহার করে এই মামলা করিয়েছিলেন’।

এদিকে পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন পেয়ে আদালত গত ২৭ ফেব্রুয়ারি এক আদেশ দেন। আদেশের বিবরণীতে বলা হয়েছে, ‘মামলাটি সৃজিত ও উদ্দশ্যপ্রনোদিত। এই মামলার জব্দতালিকা প্রস্তুতকারী এসআই লিটন কুমার বিশ্বাস মিথ্যা জব্দতালিকা ও মিথ্যা এজাহার প্রস্তুত করে এবং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই বিশ্বজিত পাল স্বাক্ষীদের ১৬১ ধারার অসত্য জবানবন্ধী রেকর্ড করে ও অসত্য পুলিশ প্রতিবেদন তৈরী করে আদালতে দাখিল করেন।’

আদালত আরো বলেন ‘উভয়েই আদালতে হলফান্তে মিথ্যা স্বাক্ষ্য প্রদান করে পেনাল কোডের ১৯৩/২১৮/৪৬৫/৪৭১ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। তাছাড়া উক্ত কার্যকালাপে ক্ষমতার অপব্যবহার ও মারাত্মক অসদাচরণ করেছেন।’ আদালত আরো উল্লেখ করেছেন ‘মিথ্যা জিডি এন্টি ও মিথ্যা মামলায় কোনো ব্যক্তিকে ফাঁসানোর ক্ষেত্রে থানার ডিউটি অফিসার বা অফিসার ইনচার্জ বা উভয়ের সংশ্লিষ্টতা থাকবেই’। আদালত এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তৎকালীন এএসআই আব্দুল গাফফার, এসআই লিটন কুমার বিশ্বাস, এসআই বিশ্বজিতপাল ও কনস্টবল মিরাজ সহ ৫ পুলিশ সদস্য ও সেই সময়ে থানায় দায়িত্বে থাকা ডিউটি অফিসার বা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে ঝিনাইদহ পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেন। তখন ঝিনাইদহের বর্তমান ডিএসবি কর্মকর্তা কালীগঞ্জ থানায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন বলে জানা গেছে ।

এদিকে মামলাটি অধিকতর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার স্বার্থে আগামী ২৯-০৪-১৯ ধার্য তারিখের মধ্যে তাদের বর্তমান অবস্থান ও স্থায়ী ঠিকানা আদালতকে সরবরাহ করতে বলা হয়েছে। তবে ভয়ে আতঙ্কে অমিত শিকদারের পরিবারের বেশীরভাগ সদস্য এখন বাড়ি ছাড়া আছেন বলে জানা গেছে । মিথ্যা মামলার শিকার অমিত শিকদার বলছেন, তিনি আইনের কাছ থেকে, মহামান্য আদালতের কাছ থেকে ন্যায় বিচার পেয়েছেন। তিনি বলেন একজন আওয়ামীলীগ কর্মী হয়েও বাঁচতে পারছেন না,স্থানীয় ভাবে দলের মধ্যে একটি প্রতিপক্ষ তাকে নানা ভাবে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে, তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চান। অমিত শিকদার বিশু আরো বলছেন দুই পুলিশ কর্মকর্তা তাকে বাড়িতে গিয়ে হুমকি দিয়ে বলেছেন “পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে বেচে থাকতে পারবেন তো?”

এদিকে চাঞ্চল্যকর এমন ঘটনায় ঝিনাইদহের পুলিশ কর্মকর্তা প্রশাসন ও অপরাধ বিভাগের অতিরিক্ত পুলিস সুপার মিলু মিয়া বিশ্বাস দি বাংলাদেশ টুডে’কে বলছেন, ‘‘বিশু মিস কেস করে এই মর্মে যে তার বিরুদ্ধে অন্যায় মামলা হয়েছিল । ফলে এটা আবার বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে তদন্তের নির্দেশ আসে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তা দিয়ে। আদালত আদশে দেয় সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার । সেক্ষেত্রে বিভাগীয় মামলা হয়েছে এবং ঐ পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বাক্ষ-প্রমান চলমান আছে । এছাড়া পুলিশ বলছে মিস কেস করার বাদি অমিত শিকদারের নিরাপত্তা খতিয়ে দেখা হবে ’’।

এই মামলার তৎকালীন কর্মকর্তারা এএসআই গাফফর চুয়াডাঙ্গা সদর, এসআই লিটন কুমার বিশ্বাস ফরিদপুর র‌্যাব, ইমরাল ডিএসবি ঝিনাইদহ, এসআই বিশ্বজিত পাল র‌্যাব রংপুর , কনস্টবল মিরাজ হোসেন র‌্যাব চট্টগ্রাম আছেন । সূত্রঃ বাংলাদেশ টুডে

ad

পাঠকের মতামত