287433

বনানী ট্রাজেডি: অনেক স্বপ্ন আর ভালোবাসার সংসার ছিলো তাদের

নিউজ ডেস্ক।। ‘আমাদের ভবনে আগুন লেগেছে। আমি বের হতে পারছি না। এখান থেকে বের হতে পারবো কিনা তাও জানি না। তোমরা আমাকে এখান থেকে বের করো। আমাকে সাহায্য করো।’ রাজধানীর বনানীতে এফ আর টাওয়ারের আগ্নিকান্ডে আটকা পড়ার পর নাহিদুল ইসলাম তুষার তার পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলার এক পর্যায়ে এভাবেই জীবন বাঁচাতে সাহায্য চান। কিন্তু তার বাঁচার এমন আর্তনাত কেউ সাড়া দিতে পারেনি। মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে আগুন চিরতরে নিভিয়ে দেয় তুষারের প্রাণ।

জীবনে বড় হয়ে ভালো কিছু করার স্বপ্ন ছিলো তুষারের। কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন হ্যারিটেজ ট্রাভেলস এজেন্সিতে। চাকরির পাশাপাশি খেলাধুলাও ছিলো তার জীবনের বড় একটি অংশ। টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই ইউনিয়নের ভানুয়াবহ গ্রামে তার বাড়ি। বাবা এছাক আলী, মা নূরুন্নাহার, বড় ভাই তুহিন ও ছোট ভাই শিশির। চার বছর আগে মাহমুদা আক্তার নদীর সঙ্গে দাম্পত্য জীবন শুরু হয় তুষারের। দাম্পত্য জীবন শুরু হলেও তাদের কোন সন্তান ছিলো না। বিয়ের পর থেকে মাহমুদা আক্তার নদী ও তুষারের জীবন ভালোই কেটে যাচ্ছিলো। অনেক স্বপ্ন আর ভালোবাসার সংসার ছিলো তাদের। নদীর অনেক স্বপ্ন ছিলো তুষারকে ঘিরে। কিন্তু এফ আর টাওয়ারের দশ তলায় অগ্নিকান্ডের ঘটনায় পাল্টে যায় নদীর জীবন।
তুষারের সাথে দেখা নদীর সব স্বপ্ন আর ভালোবাসা ওই আগুনে এক মুহূর্তেই ছাই হয়ে যায়। ভয়াবহ আগুনের লেলিহান শিখায় অন্যদের সাথে তুষারের জীবন প্রদীপও মূহূর্তের মধ্যে কেড়ে নেয়। মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার আগে স্ত্রী নদীর কাছে ফোন করে শেষ কথা বলে যান তুষার।

স্ত্রীর কাছে বলা শেষ কথাগুলো, ‘আমার জন্য সবাইকে দোয়া করতে বলো। আমাকে মাফ করে দিতে বলো।’ এরপরই বন্ধ হয়ে যায় কথা। নদী মোবাইলে বার বার হ্যালো বললেও অপর প্রান্ত থেকে কোনো শব্দ আসেনি। শব্দ আসবে কি করে? শব্দের মেশিন যে স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে।  স্বামীকে এভাবে হারিয়ে নদীর কান্না থামছে না। কথা বলার সময় স্ত্রীর কাছে তুষারের আর কোন কিছু চাওয়ার ছিলো না। কিন্তু নদী তার স্বামীর অকাল মৃত্যু কোনভাবেই যেন মেনে নিতে পারছে না। তার বিশ্বাস তুষার তাকে ফোন করবে। কিন্তু তার মোবাইলে আত্মীয়-স্বজন বন্ধু বান্ধব অনেকের ফোন আসে। তবুও তুষারের ফোন আসে না।

এফ আর টাওয়ারের আগুন নদীর পুরো জীবন পাল্টে দিয়েছে। এখন তার আগামীর দিন কি হবে তা শুধুই তুষার ও নদীর পরিবারের সদস্যরাই ঠিক করতে পারে। তুষারের বাড়িতেই অবস্থান করছেন নদী। শ্বশুর বাড়ির লোকদের কথা, অকালে স্বামী হারানোর শোক নদী কতদিনে কাটিয়ে উঠতে পারবে তা কেউই বলতে পারে না। এখন শুধু নদীর ভবিষ্যতের জন্য অপেক্ষায় থাকতে।

ad

পাঠকের মতামত